কলকাতা: ভারতীয় দল এএফসি এশিয়ান কাপে (AFC Asian Cup) অংশগ্রহন করতে এখন কাতারে। ২৬ জনের দল নিয়ে সেখানে পৌঁছে গিয়েছেন ভারতীয় দলের হেড কোচ ইগর স্তিমাচ (Igor Stimac)। এই ২৬ জনই আইএসএলের বিভিন্ন ক্লাবে খেলেন। তাই ভারতের এশিয়ান কাপ অভিযান যত দিন চলবে, তত দিন বন্ধ থাকছে দেশের এক নম্বর ফুটবল লিগ আইএসএল। 


এই এক মাসের মধ্যে আইএসএলের ক্লাবগুলি তাদের দলের দুর্বল জায়গাগুলি ভরাট করার জন্য তৎপর হয়ে উঠেছে। জানুয়ারির দলবদলে প্রায় প্রত্যেক ক্লাবই কিছু ফুটবলারকে সই করিয়ে কয়েকজনকে ছেড়ে দেওয়ার পরিকল্পনা করছে। কলকাতার মোহনবাগান সুপার জায়ান্ট শিবির অবশ্য খেলোয়াড় বদলের আগে কোচ বদলের সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছে মাসের শুরুতেই। হুয়ান ফেরান্দোর জায়গায় কোচের পদে আসছেন তাদের প্রাক্তন কোচ ও বর্তমান টেকনিক্যাল ডিরেক্টর আন্তোনিও লোপেজ হাবাস (Antonio Lopez Habas)। 


পুরনো কোচ ও নতুন কোচের ভাবনা ও স্টাইলে যখন ফারাক রয়েছে, তখন মোহনবাগান শিবিরে কিছু নতুন মুখ দেখা গেলেও যেতে পারে। আবার যে খেলোয়াড়রা রয়েছেন, তাঁদের নিয়েই নতুন করে দলকে ঘুরে দাঁড়ানোর লড়াইয়ে নামাতে পারেন তিনি। 


এমনিতে মরশুম শুরুর আগে যে রকম শক্তিশালী দল গড়েছিল মোহনবাগান এসজি, তাতে মরশুমে মাঝখানে উল্লেখযোগ্য বদল আনার প্রয়োজন ছিল না। কাতার বিশ্বকাপে নামা সেন্টার ফরোয়ার্ড জেসন কামিংস ও আলবানিয়ার জাতীয় দলের হয়ে ইউরো ২০১৬-য় খেলা সেন্টার ফরোয়ার্ড আরমান্দো সাদিকু যোগ দেন তাদের শিবিরে। তার আগের মরশুমে দলে যোগ দেওয়া অস্ট্রেলিয়ার তারকা অ্যাটাকার দিমিত্রিয়স পেট্রাটস ও ফরাসি অ্যাটাকিং মিডফিল্ডার হুগো বুমৌস তো ছিলেনই সবুজ-মেরুন শিবিরে। 


রক্ষণের দায়িত্ব গত মরশুমে দলে যোগ দেওয়া ব্রেন্ডান হ্যামিল, আশিস রাই ও পুরনো সঙ্গী শুভাশিস বোসের ওপর ছিলই। তাঁদের সঙ্গে যোগ দেন ক্রিশ্চিয়ান রোনাল্ডোর বিরুদ্ধে খেলা স্প্যানিশ ডিফেন্ডার হেক্টর ইউস্তে। এ ছাড়াও এফসি গোয়া থেকে সবুজ-মেরুন শিবিরে যোগ দেন ভারতীয় দলের নিয়মিত ডিফেন্ডার আনোয়ার আলি। যিনি মরশুমের শুরু থেকেই ছিলেন ফর্মের তুঙ্গে। 


আনোয়ারের মতো ভারতীয় দলের আরও কয়েকজন নিয়মিত তারকাকেও এ বার সই করায় সবুজ-মেরুন ব্রিগেড। আক্রমণাত্মক মিডফিল্ডার অনিরুদ্ধ থাপার সঙ্গে পাঁচ বছরের চুক্তি করে তারা। তাঁর সঙ্গে যোগ দেন কেরালার আর এক নির্ভরযোগ্য তারকা সহাল আব্দুল সামাদও। আর গত মরশুমে সই করা আশিক কুরুনিয়ানও ছিলেন দলে। 


এ রকম একটা দুর্দান্ত দল তৈরি করার পরেও বছরের শেষে বিপদে পড়তে হয় সবুজ-মেরুন বাহিনীকে। মরশুমের শুরুতেই ভারতীয় দলের হয়ে খেলতে গিয়ে চোট পেয়ে কার্যত সারা মরশুমের জন্যই ছিটকে যান আশিক কুরুনিয়ান। এখান থেকেই বিপর্যয়ের শুরু। আশিকের পর চোট পেয়ে যান আনোয়ার আলিও। তাঁরও দ্রুত মাঠে ফেরা অনিশ্চিত। আনোয়ার আলির অনুপস্থিতিতে দলের রক্ষণ অনেকটা দুর্বল হয়ে পড়ে। ব্রেন্ডান হ্যামিল, হেক্টর ইউস্তে, শুভাশিস বোস, আশিস রাই-রা দলকে ভরসা জোগালেও ফুল মার্কস পাননি।


আক্রমণের অন্যতম সেরা ভরসা মনবীর সিংuও মরশুমের মাঝখানে চোট পেয়ে ছিটকে যান। অস্ট্রেলীয় স্ট্রাইকার পেট্রাটসও চোটের তালিকায় নাম লিখিয়েছিলেন। তবে তিনি তাঁর হ্যামস্ট্রিং সমস্যা সারিয়ে মাঠে ফিরে আসেন। ফিরে আসেন মনবীরও। চোট পেয়ে বসে পড়েছেন মাঝমাঠের অন্যতম ভরসা গ্ল্যান মার্টিন্সও। তাঁর চোটও গুরুতর। কামিংস, সাদিকুরা দলকে নিয়মিত গোল করে সাহায্য করতে পারেননি। তাই মরশুমের শেষ তিন ম্যাচে জিততে পারেনি তারা। 


তার ওপর মুম্বই সিটি এফসি-র বিরুদ্ধে ম্যাচে লাল কার্ড দেখে আশিস রাই, হেক্টর ইউস্তে ও লিস্টন কোলাসোর সাসপেন্ড হয়ে যান। বছরের শেষে এফসি গোয়ার বিরুদ্ধে ম্যাচে তাঁরা খেলতে পারেননি। কেরালা ব্লাস্টার্সের বিরুদ্ধে প্রথম দু’জন ফিরলেও চার ম্যাচের জন্য সাসপেন্ড হওয়ায় কোলাসো ফিরতে পারেননি। এই চোট আঘাতের ফলেই মরশুমের শুরুতে ডুরান্ড কাপ চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পরেও সাফল্যের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে পারেনি মোহনবাগান। 


এএফসি কাপের গ্রুপ পর্বে প্রথম দুটি ম্যাচে জেতার পর টানা চারটি ম্যাচে জয় পায়নি তারা। ফলে গ্রুপ পর্ব থেকেই বিদায় নিতে হয় মোহনবাগান এসজি-কে। পরিসংখ্যান বলছে, এ বছর শেষ ১১টি ম্যাচের মধ্যে মাত্র তিনটি ম্যাচে জিততে পেরেছে তারা। দু’টি ম্যাচ ড্র হয়েছে এবং বাকি ছ’টি ম্যাচেই হেরেছে। গত ২৪ অক্টোবরের পর থেকে পরিসংখ্যান এ রকমই। এই হারগুলির মধ্যে আইএসএলের শেষ তিনটি ম্যাচে হার ছাড়াও ছিল এএফসি কাপে টানা তিনটি ম্যাচে হার। ওডিশা এফসি-র কাছে তারা ২-৫-এ হারে। বসুন্ধরা কিংসের কাছে হারে ১-২-এ। শেষ ম্যাচে দ্বিতীয় সারির দল নামিয়ে মাজিয়া এসআরসি-র কাছেও তাদের হারতে হয়। 


এই জায়গা থেকে দলকে টেনে তুলতে নতুন কোচ কী পন্থা অবলম্বন করবেন, সেটা তো ফের লিগ শুরু না হলে বোঝা যাবে না। কিন্তু আনোয়ার আলি ও গ্লেন মার্টিন্স যদি চোটের কারণে কার্যত সারা মরশুমে মাঠে নামতে না পারেন, তা হলে তাঁদের পরিবর্তে কাউকে দলে অবশ্যই নেওয়া প্রয়োজন। আনোয়ার আলি রক্ষণে কতটা নির্ভরযোগ্য ছিলেন, তা তাঁর অনুপস্থিতিতেই বোঝা গিয়েছে। গ্লেন মার্টিন্সের ভূমিকাও ছিল বেশ গুরুত্বপূর্ণ। তাই এই দু’জনের মানের বিকল্প খেলোয়াড় প্রয়োজন মোহনবাগান শিবিরে। 


আর এক জনের কথাও ভুললে চলবে না। তিনি হলেন আশিক কুরুনিয়ান, যাঁর এই মরশুমে মাঠে ফেরার সম্ভাবনা বেশ কম। উইং দিয়ে আক্রমণে ওঠার ব্যাপারে তিনি বিশেষজ্ঞ। তাঁর মতো উইঙ্গার বা উইং ব্যাক হিসেবে খেলার মতো ফুটবলার আনতে পারলে দলের আক্রমণের শক্তি যে বাড়বে, এই নিয়ে সন্দেহ নেই। একদিকে আশিস রাই সামাল দেন ঠিকই। কিন্তু আরও একটা দিক সমলানোর জন্য আশিকের মতো কাউকে প্রয়োজন দলে। 


বিদেশিদের পারফরম্যান্সে ধারাবাহিকতা না থাকলেও যখন তাঁরা ভাল খেলেন, তখন জাত চিনিয়ে দেন। আসন্ন কলিঙ্গ সুপার কাপেও দলের রাশ মূলত বিদেশিদের হাতেই থাকবে। কারণ, এই টুর্নামেন্টে ম্যাচে ছ’জন পর্যন্ত বিদেশি খেলোয়াড় রাখা যাবে বলে জানিয়েছেন আয়োজকেরা। 


শেষ পর্যন্ত নতুন কোচ হিসেবে কতটা ঝুঁকি নিতে চাইবেন হাবাস, নাকি এই মরশুমের জন্য দলকে শুধু বিপদসীমার বাইরে নিয়ে আসবেন না, চ্যাম্পিয়নশিপের দৌড়েও দলকে রাখতে চাইবেন, সেটাই দেখার বিষয়। 


(তথ্যসূত্র: ISL Media)


আরও পড়ুন: Ranji Trophy: রঞ্জি ট্রফিতে দুরন্ত সেঞ্চুরি করেও আফশোস অনুষ্টুপের, অভিষেকেই উজ্জ্বল সৌরভ



আপনার পছন্দের খবর আর আপডেট এখন পাবেন আপনার পছন্দের চ্যাটিং প্ল্যাটফর্ম হোয়াটস অ্যাপেও। যুক্ত হোন ABP Ananda হোয়াটস অ্যাপ চ্যানেলে