কলকাতা: ঘরোয়া ক্রিকেটে গত কয়েক মরসুম ধরে ধারাবাহিকভাবে পারফর্ম করছেন। ২০১৯-২০ মরসুমে রঞ্জি ট্রফিতে (Ranji Trophy) ১০ ম্যাচে নিয়েছিলেন ৩২ উইকেট। বাংলাকে ফাইনালে তোলার নেপথ্যে ছিল তাঁর দুর্দান্ত কিছু স্পেল। পরের মরসুমে করোনার প্রকোপে স্থগিত ছিল রঞ্জি ট্রফি। গত মরসুমে টুর্নামেন্ট ফিরতেই ফের ছন্দে ডানহাতি পেসার। ৫ ম্যাচে নেন ২০ উইকেট।
তবু বাংলার পেসার মুকেশ কুমার (Mukesh Kumar) যেন নির্বাচকদের কাছে ব্রাত্যই ছিলেন। কাছাকাছি গিয়েও জাতীয় দলের দরজাটা যেন কিছুতেই খুলছিল না।
অবশেষে কিছুটা হলেও অক্সিজেন পেলেন মুকেশ। নিউজিল্যান্ডের এ দলের বিরুদ্ধে তিনটি চারদিনের ম্যাচ খেলবে ভারতীয় এ দল (India A vs New Zealand A)। সেই তিন ম্যাচের সিরিজের জন্য ১৬ জনের ভারতীয় দল ঘোষণা করা হল বুধবার। দলে সুযোগ পেয়েছেন বাংলার দুই ক্রিকেটার। অভিমন্যু ঈশ্বরণ (Abhimanyu Easwaran) ও মুকেশ কুমার (Mukesh Kumar)। অভিমন্যু ব্যাটার। মুকেশ ডানহাতি পেসার।
সুযোগ পেয়ে আবেগে ভেসে যেতে নারাজ মুকেশ। এবিপি লাইভকে বললেন, 'আনন্দ হচ্ছে। অবশেষে বন্ধ দরজাটা খুলল। তবে বেশি উত্তেজিত হচ্ছি না। প্রথম একাদশে সুযোগ পেতে হবে। উইকেট তুলে নিজেকে প্রমাণ করতে হবে। অনেকটা পথ বাকি এখনও। তাই এখনই আপ্লুত হওয়ার মতো কিছু হয়নি।'
বাংলা থেকে সম্প্রতি জিম্বাবোয়ে সফরের দলে সুযোগ পেয়েছিলেন স্পিনার-অলরাউন্ডার শাহবাজ আমেদ। ভারতীয় দলের ড্রেসিংরুমে থাকলেও অভিষেক হয়নি রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালোরের হয়ে আইপিএলে খেলা ক্রিকেটারের। বাংলা দলের সতীর্থ শাহবাজকে দেখে উৎসাহ পাচ্ছেন মুকেশ। ২৮ বছরের পেসার বলছেন, 'শাহবাজ পারলে আমরাই বা পারব না কেন! আমাদের বিশ্বাস করতে শিখিয়েছে শাহবাজ। পারফর্ম করলে সুযোগ আসবেই।'
বিহারের গোপালগঞ্জ গ্রামে জন্ম মুকেশ কুমারের। বাবা কাশীনাথ সিংহ কলকাতায় ট্যাক্সি চালাতেন। তালতলা এলাকায় এক কামরার ঘরে থাকতেন মুকেশ। অভাবের সঙ্গে নিত্য লড়াই। কোনদিনও প্রথাগত ক্রিকেট শিক্ষা পাননি। গলি ক্রিকেট থেকে খেপের মাঠ খেলে বেড়াতেন। ২০০৩ সালে মুকেশের বাবা তাঁকে কলকাতায় নিয়ে আসেন কাজের জন্য। মুকেশের জন্য চাকরি খুঁজছিলেন কাশীনাথ। কিন্তু মুকেশের মন পড়েছিল ২২ গজে।
নিজেই খোঁজ নিয়ে দ্বিতীয় ডিভিশন ক্লাব বাণী নিকেতনের ট্রায়ালে যান মুকেশ। সেখানে পারফর্ম করেই প্রথম ডিভিশনে শিবপুর ক্লাবের হয়ে খেলার সুযোগ। বল হাতে প্রথম থেকেই পারফর্ম করতে শুরু করেন। এরপরই সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের মস্তিষ্কপ্রসূত ভিশন ২০২০ ক্যাম্পে সুযোগ পান। সেখানে বাংলার সেই সময়কার বোলিং কোচ রণদেব বসুর নজরে পড়ে যান। শুরু হয় নতুন করে স্বপ্ন দেখা।
ব্রেট লি-র অন্ধভক্ত মুকেশ বলছিলেন, 'সেই সময় অভাবের সঙ্গে লড়াই করতে হয়েছে। স্পাইক শ্যু ছিল না। এমনি দৌড়নোর জুতো পরেই বল করতাম। সেই সময় রণদেব বসু পাশে দাঁড়িয়েছিলেন।' এরপরই বাংলা দলে জায়গা করে নেন মুকেশ।
ভারত এ দলকে জাতীয় দলের সিঁড়ি মনে করা হয়। জাতীয় দলের আরও কাছে পৌঁছনো গেল? মুকেশ বলছেন, 'বড় সুযোগ তো বটেই। নিজেকে প্রমাণ করতে হবে। তবে এখনই বেশি কিছু ভাবছি না।' ২৮ অগাস্ট বেঙ্গালুরুতে জাতীয় দলের শিবিরে যোগ দেবেন বাংলার পেসার।
নিউজিল্যান্ড এ দলের বিরুদ্ধে তিনটি চারদিনের ম্যাচ খেলবে ভারত এ। ভারতীয় দলের অধিনায়ক ঘোষণা করা হয়েছে প্রিয়ঙ্ক পাঞ্চালকে। কিউয়িদের বিরুদ্ধে খেলিয়ে দেখে নেওয়া হবে রুতুরাজ গায়কোয়াড়, রজত পতিদার, তিলক বর্মা, উমরন মালিকদের। যাঁরা জাতীয় দলের দরজায় কড়া নাড়ছেন। পাশাপাশি কুলদীপ যাদবকে দলে নেওয়া হয়েছে। চোট কাটিয়ে ফেরা চায়নাম্যান স্পিনার ফের টেস্ট ক্রিকেটের জন্য তৈরি কি না, তা দেখে নিতে চাইছেন নির্বাচকেরা। পাশাপাশি রঞ্জি ট্রফিতে ভাল পারফরম্যান্সের পুরস্কার পেয়েছেন সরফরাজ খান। তাঁকেও সুযোগ দেওয়া হয়েছে।
ঋদ্ধিমান সাহার পরিবর্ত উইকেটকিপার হিসাবে যাঁকে তৈরি করার নীল নকশা তৈরি করেছিল ভারতীয় দল, সেই কে এস ভরতকে সুযোগ দেওয়া হয়েছে। দ্বিতীয় উইকেটকিপার হিসাবে রাখা হয়েছে উপেন্দ্র যাদবকে।
নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে প্রথম চারদিনের ম্যাচ ১-৪ সেপ্টেম্বর, বেঙ্গালুরুর চিন্নাস্বামী স্টেডিয়ামে। দ্বিতীয় চারদিনের ম্যাচ ৮-১১ সেপ্টেম্বর কর্নাটকের হুবলিতে। তৃতীয় তথা শেষ ম্যাচ ১৫-১৮ সেপ্টেম্বর বেঙ্গালুরুর চিন্নাস্বামী স্টেডিয়ামে।
চারদিনের ম্যাচের জন্য ঘোষিত ভারতীয় দল: প্রিয়ঙ্ক পাঞ্চাল (অধিনায়ক), অভিমন্যু ঈশ্বরণ, রুতুরাজ গায়কোয়াড়, রজত পতিদার, সরফরাজ খান, তিলক বর্মা, কে এস ভরত (উইকেটকিপার), উপেন্দ্র যাদব (উইকেটকিপার), কুলদীপ যাদব, সৌরভ কুমার, রাহুল চাহার, প্রসিদ্ধ কৃষ্ণ, উমরন মালিক, মুকেশ কুমার, যশ দয়াল ও আরজান নাগসওয়ালা।