অনন্তনাগ: বয়স ৩৪। পেশায় ক্রিকেটার। তবে তাঁর গল্পটা একটু অন্যরকম। আর পাঁচজনের মত তাঁর নেই দুটো হাত। কিন্তু তাতে কুছ পরোয়া নেহি। অনন্তনাগের ওয়াঘমা গ্রামের বিজবেহারার ৩৪ বছরের আমির হুসেনের কাহিনি যেন যে কোনও প্রতিবাদি চরিত্রের ছায়া। প্যারা ক্রিকেটার আমির। ব্যাট ধরার জন্য যে হাত দরকার, তা নেই। তবে তাতেও ভালোবাসার ক্রিকেট থেকে সরে আসেননি আমির। নিজের কাঁধের ভারেই ব্যাট নিয়ে হাঁকিয়ে চলেছেন একের পর এক শট। আমির বোলিংয়েও পারদর্শী। পায়ের পাতায় বল রেখে ব্যাটারের দিকে ছুড়ে মারেন।
সচিন তেন্ডুলকর এবং আশিস নেহরার মতো ক্রিকেট কিংবদন্তিরা এই প্যারা ক্রিকেটারের খেলার প্রশংসা করেছেন। নেহরা তাঁকে ওয়াংখেড়েতে টি২০ বিশ্বকাপ ২০১৬ সেমিফাইনাল দেখার জন্য আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। কাশ্মীরের মত বোমা, গোলা বারুদ ও মৃত্যু উপত্যকায় এভাবে আমিরের উত্থাণ যে কারও কাছে অনুপ্রেরণা।
সালটা ২০০৮। একটা দুর্ঘটনা কেড়ে নিয়েছিল আমিরের হাত। ভালোবাসার ক্রিকেটকে বিসর্জন দিতে হল। কিন্তু বেশিদিন পারেনি সে। দেবদূতের মতো আমিরের জীবনে এসে উপস্থিত হলেন তার এক শিক্ষক। আমিরকে প্যারা ক্রিকেট কোচিং সেন্টারে ভর্তি করানো পরামর্শ দিলেন। এরপর আর পিছনে ফরে তাকাতে হয়নি। বর্তমানে জম্মু-কাশ্মীরের প্যারা ক্রিকেট দলের অধিনায়ক আমির। ২০১৩ সাল থেকে পেশাদার ক্রিকেট খেলছেন এই ৩৪ বছরের অলরাউন্ডার। আমির বলছেন, "দুর্ঘটনার পরও আমি আশা ছাড়িনি। আমি অনেক পরিশ্রম করছিলাম। হাল ছাড়িনি একদমই। এই সময়টাতে আমাকে কেউ কোনও সাহায্য করেননি। এমনকী সরকারের তরফেও কোনও সাহায্য পাইনি। আমার প্রয়োজনও নেই। তবে এই সময়টাতে আমার পরিবার আমার পাশে ছিল সব সময়।"
২০১৩ ও ২০১৮ সালে জাতীয় দলের জার্সিতে খেলেছি দিল্লিতে। এছাড়া বাংলাদেশের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলেছি। নেপাল, শারজা, দুবাইয়ে খেলেছি। সব জায়গায় সবাই আমাকে দেখে অবাক হয়ে গিয়েছি। আমার পায়ের সাহায্যে বোলিং আর কাঁধের নির্ভরতা নিয়ে ব্যাটিং দেখে চমকে উঠেছে৷ আমি ভগবানের কাছে কৃতজ্ঞ আমাকে শক্তি দেওয়ার জন্য।"