সন্দীপ সরকার, কলকাতা: ব্যাট হাতে তিনি নামা মানেই প্রতিপক্ষ বোলারদের কপালে ভাঁজ। তাঁর ব্যাটের চাবুকে একের পর এক বল উড়ে গিয়ে পড়ে গ্যালারিতে। বাইশ গজে ব্যাট হাতে খুনে মেজাজের জন্য তাঁর নামকরণই হয়ে গিয়েছে 'কিলার মিলার'।


সেই ডেভিড মিলারের (David Miller) কি পুনর্জন্ম হল ইডেন গার্ডেন্সে (Eden Gardens)?


১১৬ বলে ১০১ রানের ইনিংসকে কেরিয়ারের সেরা হিসাবে চিহ্নিত করলেও ভুল করবেন না মিলার। প্রোটিয়া তারকার কেরিয়ারের পরিসংখ্যান দেখুন। ওয়ান ডে ক্রিকেটে স্ট্রাইক রেট ১০৪.১৪। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে আরও বিধ্বংসী। ১৪৪.৬৪। তিনি ক্রিজে থাকা মানেই চার-ছক্কার বন্যা বইবে, এটা দেখেই অভ্য়স্ত বিশ্বক্রিকেট (ODI World Cup 2023)।


তাহলে কি বৃহস্পতিবার ইডেনে যাঁকে ব্যাট হাতে সেঞ্চুরি করতে দেখা গেল, তিনি মিলার নন? কোনও ছদ্মবেশী, যিনি মিলার-সুলভ চেহারা নিয়ে ব্যাট করতে নেমে পড়েছেন?


বৃহস্পতিবার তিনি যখন ব্যাট করতে নামলেন, স্কোরবোর্ডে দেখাচ্ছে ১১.৫ ওভারে ২৪/৪। মেঘলা দুপুরের ইডেনে তখন দাপট অস্ট্রেলিয়ার পেসারদের। প্যাট কামিন্স, মিচেল স্টার্ক ও জশ হ্যাজলউড পেসার ত্রয়ী আগুন ছোটাচ্ছেন। প্রোটিয়া অধিনায়ক তেম্বা বাভুমা যে এই পরিস্থিতিতে কিছু করতে পারবেন না, খেলা দেখতে আসা প্রত্যেকেই নিশ্চিত ছিলেন। কীভাবে যে তিনি দক্ষিণ আফ্রিকার অধিনায়ক হিসাবে চালিয়ে যাচ্ছেন, তা এখন ক্রিকেট বিশ্বের গভীর এক রহস্য। এদিনও স্কোরারদের বিব্রত করেননি। ৪ বলে কোনও রান না করে ফিরলেন।


তবে প্রোটিয়া ইনিংসকে বড় ধাক্কা দিল কুইন্টন ডি'ককের মাত্র ৩ রান করে ফেরা। গোটা বিশ্বকাপে দারুণ ছন্দে থাকা ডি'কক আউট হলেন ষষ্ঠ ওভারেই। রান পাননি এইডেন মারক্রাম (১০) ও রাসি ফান ডার ডাসেনও (৬)।


তারপরই পাল্টা লড়াই শুরু মিলারের। সঙ্গী হিসাবে পেলেন হেনরিখ ক্লাসেনকে। মিলার যেন শুরুতেই বুঝে গিয়েছিলেন, ব্যাটিং বিস্ফোরণের রাত নয় এটা। বরং এটা সেই পরীক্ষাকেন্দ্র, যেখানে শেষ মিনিট পর্যন্ত হলঘরে মাথা গুঁজে পড়ে থাকতে হবে। প্রশ্ন কমন না পড়লেও চেষ্টা করে যেতে হবে সব উত্তর লিখে আসার। কলার তোলা মাস্তানি নয়, এই ইডেনের বাইশ গজে সফল হতে প্রয়োজন সাধক-সম ধৈর্য, অধ্যাবসায়।


ক্লাসেন তবু আগ্রাসী ব্যাটিং করলেন। মিলার পরিস্থিতির দাবি মেনে খুচরো রান নিলেন। ক্লাসেনের সঙ্গে পঞ্চম উইকেটে যোগ করলেন ৯৫ রান। যা দক্ষিণ আফ্রিকা ইনিংসকে ভেন্টিলেশন থেকে বার করে জেনারেল বেডে পাঠাল। প্যাট কামিন্সকে ছক্কা মেরে সেঞ্চুরি পূরণের পর ওই একবারই যেন তাঁর পেশাদারিত্বের বর্ম ভেদ করে আবেগ বেরিয়ে পড়ল। বুক ঠুকে হুঙ্কার দিলেন বাঁহাতি ব্যাটার। দক্ষিণ আফ্রিকা যে শেষ পর্যন্ত দুশো পেরল, পুরো কৃতিত্ব প্রাপ্য মিলারের। ক্লাসেন ৪৮ বলে ৪৭ রান করলেন। তিনটি করে উইকেট মিচেল স্টার্ক ও প্যাট কামিন্সের।


৪৯.৪ ওভারে ২১২ তুলল দক্ষিণ আফ্রিকা। অস্ট্রেলিয়াকে এই পুঁজি নিয়ে রুখে দেওয়া সম্ভব? ইডেনের পিচে বল পড়ে নড়ছে, ঘুরছে। নীচু হচ্ছে। কোনও কোনও বল লাফাচ্ছেও। কোনও দিন বিশ্বকাপের ফাইনাল খেলেনি দক্ষিণ আফ্রিকা। ইডেনে সর্বস্ব দিয়ে ঝাঁপাতে মরিয়া থাকবেন প্রোটিয়া বোলাররা। ইডেনের গ্য়ালারি এদিন কার্যত ভরা। প্রায় ৫০ হাজার জনসমাগম। রুদ্ধশ্বাস একটি লড়াইয়ের অপেক্ষায় ক্রিকেটপ্রেমীরা।


আরও পড়ুন: প্রিয়তম মানুষ আর নায়কের সামনে কীর্তি, অবাস্তব লাগছে, বলছেন কোহলি


আপনার পছন্দের খবর আর আপডেট এখন পাবেন আপনার পছন্দের চ্যাটিং প্ল্যাটফর্ম টেলিগ্রামেও। যুক্ত হোন


https://t.me/abpanandaofficial