সন্দীপ সরকার, কলকাতা: দেখলে মনে হবে যেন সাজানো চিত্রনাট্য।


নায়কের জন্মদিন। উৎসবের মোড়ক গোটা শহরে। সিএবি-র তরফে বিশেষ স্মারক উপহার। অর্ডারি কেক। আতসবাজি। এলইডি লাইটের মেগা শো। রেড রোডে ৪৮ কাট আউটে শুভেচ্ছা ও প্রার্থনা। শুভেচ্ছা ৩৫তম জন্মদিনের। প্রার্থনা ইডেনে (Eden Gardens) সেঞ্চুরি করে ওয়ান ডে ক্রিকেটে সচিন তেন্ডুলকরের (Sachin Tendulkar) কীর্তি স্পর্শ করার।


ভারতীয় ইনিংসের ষষ্ঠ ওভারে রোহিত শর্মা যখন কাগিসো রাবাডার বলে আউট হয়ে ফিরলেন, এবং ইডেন গার্ডেন্সের ক্লাব হাউসের ড্রেসিংরুম ছেড়ে মাঠে নামলেন তিনি, গ্যালারির গর্জন শুনে অনেকে বিভ্রান্ত হচ্ছিলেন। অবসর ভেঙে সচিন তেন্ডুলকর কি ফের মাঠে নেমে পড়লেন?


২৪ বছর ধরে সেই চিত্রনাট্যের সঙ্গেই পরিচিত ছিল বিশ্ব ক্রিকেট। ভারতের উইকেট পড়লে ভারতীয় ক্রিকেটপ্রেমীরাই গর্জন করবেন। মাস্টার ব্লাস্টার মাঠে নামছেন যে!


বিরাট কোহলিকে ঘিরেও সেই উন্মাদনাই ফিরেছে বিশ্বক্রিকেটে। বার্থ ডে বয় তাঁকে ঘিরে তিলোত্তমার উৎসবের মর্যাদাও রাখলেন। ৪৯তম ওয়ান ডে সেঞ্চুরি করে স্পর্শ করলেন সচিনকে। সেই সচিন, যাঁকে দেখে এক সময় কোহলি গেয়ে উঠেছিলেন, তুঝ মে রব দিখতা হ্যায়... বলেছিলেন, একার কাঁধে দেশকে বয়ে বেড়িয়েছেন সচিন। এবার আমাদের পালা...


মাস্টার ব্লাস্টারের রেকর্ড স্পর্শ করে উচ্ছ্বসিত চেজ়মাস্টার। ইডেনে দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে ১২১ বলে ১০১ রানের অপরাজিত ইনিংসকে হয়তো কেরিয়ারের অন্যতম সেরা হিসাবে চিহ্নিত করে রাখবেন কোহলিও। সে যতই দলের সেমিফাইনালের টিকিট কনফার্মড হয়ে যাক না কেন। এই ইডেন তো অজানা ইডেন। বল পড়ে থমকে আসছে। কোনও কোনও বল নীচু হচ্ছে। কোনও বল লাফাচ্ছে। যেমন লাফাল শুভমন গিলের আউট হওয়ার বলটি। কেশব মহারাজের বল বাড়তি লাফিয়ে গিলের অফস্টাম্পের বেলে চুমু খেয়ে চলে গেল।


বিরাট ক্রিজে গিয়েই যেন বুঝে গেলেন, এই পিচে ব্যাট হাতে চাবুক চালানো সম্ভব নয়। বরং আগে বাধ্য ছাত্রের মতো মাথা নীচু করে পড়ে থাকতে হবে। চিনতে হবে রান করার রাস্তা। তারপর গড়তে হবে ইনিংস। একটি একটি করে রানের ইট গাঁথতে হবে। তবে তৈরি হবে ইমারত। ফলে রোহিতের ২৪ বলে ৪০ যদি শাকিরার হিপ হপ হয়ে থাকে, কোহলির ইনিংস যেন পণ্ডিত রবিশঙ্করের সেতার। যার প্রতিটি তারে বাঁধা সুরমূর্ছনা। ৩ ঘণ্টা ১৫ মিনিটের ইনিংসে ১০টি বাউন্ডারি। উল্টো প্রান্তে দাঁড়িয়ে কখনও শ্রেয়স আইয়ার ৭টি ছক্কা মেরেছেন, তো কখনও সূর্যকুমার যাদব ৫ ছক্কায় রোশনাই ছড়িয়েছেন। বিরাট প্রলোভনে পা দেননি। তাঁর লক্ষ্য যেন ছিল আরও বড়। বিরাটের রবিবাসরীয় সেঞ্চুরি তাই চিনা এলইডি আলোর চমক নয়, হয়ে রইল হাজার মোমবাতির আলোর স্নিগ্ধতা।


যা দেখে মুগ্ধ কানায় কানায় ভরা ইডেন। দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে প্রথমে ব্যাট করে ভারত তুলল ৩২৬/৫। বিরাটের ১০১ রানের সাধক-সম ইনিংসের পাশে অবশ্য শ্রেয়সের ৭৭, সূর্যকুমারের ১৪ বলে ২২ ক্যামিও বা রবীন্দ্র জাডেজার ১৫ বলে ২৯ রানের ঝড়ও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়াল। ভারতকে পৌঁছে দিল রানের পাহাড়ে। দক্ষিণ আফ্রিকার বোলিংয়ের প্রাপ্তি বলতে, কেশব মহারাজের ম্যাজিক ডেলিভারিতে শুভমন গিলকে বোল্ড করার ঘটনা। যা ইনিংস বিরতিতে হয়তো বাড়তি অক্সিজেন জোগাবে কুলদীপ যাদব, জাডেজাদের।


দ্বিতীয় ইনিংসে বল এমন ঘুরলে আর লাফালে যে প্রোটিয়া শিবিরে বিপর্যয় নেমে আসবে দ্রুত।


আরও পড়ুন: ODI World Cup Exclusive: দু'পা দৌড়ে অভিনব প্রস্তুতি, কীভাবে ব্যাটারদের আতঙ্ক হয়ে উঠলেন শামি?


আপনার পছন্দের খবর আর আপডেট এখন লপাবেন আপনার পছন্দের চ্যাটিং প্ল্যাটফর্ম টেলিগ্রামেও। যুক্ত হোন


https://t.me/abpanandaofficial