আমদাবাদ: উৎসবের যাবতীয় আয়োজন সারা ছিল। আতসবাজি। ড্রোনের মাধ্যমে অত্যাধুনিক লেজ়ার শো।


ভিভিআইপি বক্সে পাশাপাশি বসে ম্যাচ দেখছেন সস্ত্রীক শাহরুখ খান, আশা ভোঁসলে, সচিন তেন্ডুলকর, সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়, রণবীর সিংহ, দীপিকা পাড়ুকোন, ছেলে তথা বোর্ড সচিব জয় শাহর সঙ্গে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিও এলেন বলে... ভারতের কোনও ক্রিকেট ম্যাচে এরকম চাঁদের হাট আগে দেখা গিয়েছে। মুম্বইয়ের ওয়াংখেড়েতে ভারত-নিউজ়িল্যান্ড সেমিফাইনাল কাছাকাছি তুলনায় আসতে পারে শুধুমাত্র।


আর সেই উৎসবের মঞ্চে লেখা হল ভারতীয় ক্রিকেটের (IND vs AUS) শোকগাথা। ফের ওয়ান ডে বিশ্বকাপের (ODI World Cup) ফাইনাল। ফের প্রতিপক্ষ অস্ট্রেলিয়া। ফের স্বপ্নভঙ্গ। সকলে ধরেই নিয়েছিলেন যে, অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়ে ২০ বছর আগে সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়দের পরাজয়ের প্রতিশোধ নেবেই রোহিত শর্মার দলবল। তার ওপর যেরকম ছন্দে রয়েছে ভারতীয় দল। যেন অশ্বমেধের ঘোড়া। টুর্নামেন্টে অজেয়। অপ্রতিরোধ্য। টানা ১০ ম্যাচ জিতে ফাইনালে। আর এই অস্ট্রেলিয়াকে তো গ্রুপ পর্বে দাপটের সঙ্গে হারিয়েছে ভারত।


কিন্তু ক্রিকেটের কলোসিয়াম বলা হচ্ছে যে মাঠকে, সবরমতীর তীরে সেই নরেন্দ্র মোদি স্টেডিয়ামে ফাইনালে ভারতের জন্য বরাদ্দ রইল যন্ত্রণাই। প্রথমে ব্যাটিং করে ২৪০ রানে অল আউট টিম ইন্ডিয়া। যারা গোটা টুর্নামেন্টে ব্যাট হাতে প্রতিপক্ষ বোলিংকে গুঁড়িয়ে দিয়েছেন, তাঁরাই ফাইনালে বর্ণহীন। জবাবে ব্যাট করতে নেমে মাত্র ৪ উইকেট হারিয়ে লক্ষ্যপূরণ অস্ট্রেলিয়ার। তাও ৪২ বল বাকি থাকতে। ভারতীয় বোলাররা দ্রুত ৩ উইকেট তুলে নেওয়ার পর যে পাল্টা লড়াইয়ের স্বপ্ন দেখেছিল এক লক্ষ ৩২ হাজারের গ্যালারি, তা কার্যত একপেশে ম্যাচ হয়ে দাঁড়াল শেষের দিকে। 


অস্ট্রেলিয়ার জয়ে সবচেয়ে উজ্জ্বল হয়ে রইলেন এমন একজন ক্রিকেটার, যিনি গোটা টুর্নামেন্টে খেলতেই পারেননি। ট্র্যাভিস হেড। রবিবার ফাইনাল ছিল চলতি বিশ্বকাপে তাঁর ষষ্ঠ ম্যাচ। চোটের জন্য বাকি পাঁচ ম্যাচে খেলেননি। ফাইনালে নামলেন। প্রথমার্ধে গ্লেন ম্যাক্সওয়েলের বলে পিছনের দিকে দৌড়ে অবিশ্বাস্য ক্ষিপ্রতায় শরীর ছুড়ে রোহিত শর্মার ক্যাচ তালুবন্দি করলেন। রণমূর্তি ধরা রোহিত (৩১ বলে ৪৭ রান) আর আধ ঘণ্টা ক্রিজে থাকলে ম্যাচটি একপেশে হয়ে যেতে পারত।


পরে সেই হেড ব্যাট হাতে ভারতীয় বোলিংকে দুঃস্বপ্ন উপহার দিলেন। চতুর্থ উইকেটে মার্নাস লাবুশেনের সঙ্গে ১৯২ রান যোগ করে ভারতের ম্যাচে ফেরার রাস্তা বন্ধ করে দিলেন হেড। ইনিংস ওপেন করতে নেমে বিধ্বংসী সেঞ্চুরি করলেন। ১২০ বলে ১৩৭ রান করে মহম্মদ সিরাজের বলে বাউন্ডারি লাইনে যখন ধরা পড়লেন, ম্যাচ জিততে অস্ট্রেলিয়ার ৪৩ বলে চাই ২ রান। কার্যত একা হাতে অস্ট্রেলিয়াকে ষষ্ঠবার বিশ্বকাপ জেতালেন হেড। অপরাজিত ৫৮ রানের ইনিংস খেলে ভারতের যন্ত্রণা বাড়ালেন লাবুশেন।


ফাইনাল শেষ হতেই আতসবাজির প্রদর্শনী হল। ড্রোন থেকে যে লেজ়ার শো হল, নিষ্পলক দৃষ্টিতে তা দেখলেন অজ়ি ক্রিকেটারেরাও। এতটাই মনোমুগ্ধকর। সেই উৎসবে শুধু রইল না প্রাণ। অস্ট্রেলিয়ার অধিনায়ক প্যাট কামিন্স ম্যাচের আগেই বলেছিলেন, ১ লক্ষ ৩২ হাজারের গ্যালারিকে চুপ করিয়ে দেওয়ার চেয়ে আনন্দের আর কিছু হয় না। ম্যাচ যত গড়াল, ভারতীয় সমর্থকদের শব্দব্রহ্ম হারিয়ে গেল। উৎসবের মঞ্চে শ্মশানের নীরবতা।


আপনার পছন্দের খবর আর আপডেট এখন পাবেন আপনার পছন্দের চ্যাটিং প্ল্যাটফর্ম টেলিগ্রামেও। যুক্ত হোন


https://t.me/abpanandaofficial


আপনার পছন্দের খবর আর আপডেট এখন পাবেন আপনার পছন্দের চ্যাটিং প্ল্যাটফর্ম হোয়াটস অ্যাপেও। যুক্ত হোন ABP Ananda হোয়াটস অ্যাপ চ্যানেলে।