ভুবনেশ্বর: ওড়িশার গরিব পরিবারের সন্তান চন্দন নায়েক যাচ্ছে জার্মানির সেরা ক্লাব বায়ার্ন মিউনিখের অ্যাকাডেমিতে প্রশিক্ষণ নিতে। সারা বিশ্বের ১২০ জন খুদে ফুটবলার এই সুযোগ পেয়েছে। তাদের অন্যতম চন্দন। আপাতত দু মাসের জন্য জার্মানিতে থাকবে সে। ভাল পারফরম্যান্স দেখিয়ে বায়ার্নের কোচ-কর্মকর্তাদের সন্তুষ্ট করতে পারলে সেখানে থাকার মেয়াদ বাড়তে পারে।


 

১১ বছরের চন্দন ভুবনেশ্বরের শবর শাহী বস্তিতে থাকে। তার বাবা অনেকদিন আগেই তাদের ছেড়ে চলে গিয়েছেন। বাবার কথা মনে নেই চন্দনের। তার মা দূহিতা নায়েক লোকের বাড়ি কাজ করেন। তিনিই চন্দন ও তার ছোট ভাইকে আগলে রেখেছেন। স্থানীয় একটি স্কুলে সপ্তম শ্রেণিতে পড়ে চন্দন। চরম দারিদ্রের মধ্যে ফুটবলকেই বাঁচার অবলম্বন হিসেবে আঁকড়ে ধরেছে বাচ্চা ছেলেটি।

 

ফুটবল খেলতে খেলতেই কোচ জয়দেব মহাপাত্রর নজরে পড়ে যায় চন্দন। ভুবনেশ্বরের কলিঙ্গ স্টেডিয়ামের কাছে থাকত সে। জয়দেব সেখানে গরিব বাচ্চাদের ফুটবল প্রশিক্ষণ দেওয়ার সময় চন্দনের প্রতিভা দেখে মুগ্ধ হয়ে যান। এরপরেই তাকে একটি প্রতিযোগিতায় নিয়ে যান কোচ। সেই প্রতিযোগিতাটি ছিল ১৪ থেকে ১৬ বছর বয়সিদের। চন্দনের বয়স ১১ বছর হওয়ায় প্রথমে তাকে সেখানে খেলতে দেওয়া হচ্ছিল না। অনেক অনুরোধ করে তাকে খেলতে দেওয়ার ব্যবস্থা করেন জয়দেব। পুণের এই প্রতিযোগিতায় প্রধান বিচারক ছিলেন ভারতের অধিনায়ক সুনীল ছেত্রী। তিনিও চন্দনের পাসিং, ড্রিবলিং, স্কিল দেখে অবাক হয়ে যান। এরপরেই জার্মানি যাওয়ার সুযোগ মেলে।

 

বায়ার্নের অ্যাকাডেমিতে সুযোগ পাওয়ার পরেও অবশ্য সেখানে যাওয়া অনিশ্চিত হয়ে পড়েছিল চন্দনের। কারণ, তার জন্মের শংসাপত্র ছিল না। ফলে জার্মানির ভিসা পাওয়া যাচ্ছিল না। ভুবনেশ্বরের মেয়র এ এন জেনা জন্ম শংসাপত্র পেতে সাহায্য করেন। বিদেশমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ এবং পেট্রোলিয়াম ও প্রাকৃতিক গ্যাস মন্ত্রকের রাষ্ট্রমন্ত্রী ধর্মেন্দ্র প্রধানও চন্দনকে সাহায্য করেছেন। তাঁদের ধন্যবাদ জানিয়েছেন চন্দনের কোচ।

 

চন্দনের মা বলেছেন, ‘আমরা খুব গরিব। বাড়িতে টিভি নেই। তাই খেলা দেখতে পারে না চন্দন। কিন্তু তা সত্ত্বেও ও মেসির বড় ভক্ত। মেসির নাম লেখা একটা জার্সি কিনেছে। ও যদি দেশকে গর্বিত করতে পারে আমি খুশি হব। সেই দিনটার জন্যই আমাদের অপেক্ষা।’

 

চন্দন মুম্বই হয়ে মিউনিখে উড়ে যাচ্ছে। সে এখন ভুবনেশ্বরের গরিব বাচ্চাদের কাছে নায়ক হয়ে উঠেছে। তাকে দেখে গরিব বাচ্চারাও বড় ফুটবলার হওয়ার স্বপ্ন দেখছে।