কলকাতা: করোনা অতিমারির হাত থেকে তিনিও রেহাই পাননি। আক্রান্ত হয়েছিলেন। ধাক্কা খেয়েছিল প্রস্তুতি। তবুও হার মানেননি লভলিনা বরগোহাঁই। অসমের প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে উঠে এসে জিতে নিয়েছেন অলিম্পিক্স বক্সিংয়ে ব্রোঞ্জ পদক। ছাত্রীর হার না মানা মনোভাব দেখে উচ্ছ্বসিত লভলিনার বাঙালি কোচ মহম্মদ আলি কামার। কলকাতায় ফিরে এবিপি লাইভকে জানালেন ছাত্রীর লড়াইয়ের কাহিনি।


কামার বললেন, 'করোনার জন্য লভলিনার প্রস্তুতি ধাক্কা খেয়েছিল। ও নিজে করোনা আক্রান্ত হয়েছিল। আমিও সংক্রমিত হয়েছিলাম। ৬-৭ মাস প্র্যাক্টিস করতে পারেনি। ফের শূন্য থেকে শুরু করতে হয়েছিল। তবে বক্সিং ফেডারেশন ও স্পোর্টস অথরিটি অফ ইন্ডিয়া আমাদের খুব সাহায্য করেছে। বাড়িতে প্র্যাক্টিসের সরঞ্জাম পৌঁছে দিয়েছে। অনলাইনে ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থা করে দিয়েছে। যার সুফল পেয়েছে লভলিনা। চারজন করে ভাগ করে প্র্যাক্টিস চলত।'


মহিলা বক্সাররা লড়াই করলেও লভলিনা ছাড়া আর কেউ পদক পাননি। কামার বলছেন, 'ভেবেছিলাম বক্সিংয়ে আমরা আরও পদক পাব। তবে তা হয়নি। একটা ব্রোঞ্জ জিতেই থেমে যেতে হল। তবে কোচ হিসাবে আমি খুশি। মেয়েরা নিজেদের সর্বস্ব দিয়ে লড়াই করেছে।'



কোচ হিসাবে প্রথমবার অলিম্পিক্সে গিয়েই পদক জিতে ফিরতে পেরে তৃপ্ত আলি কামার। একবালপুরে তাঁর বাড়ি সংলগ্ন ক্লাবে দাঁড়িয়ে বলছিলেন, 'ভেবেছিলাম সোনা জিতবে মেয়েরা। সেটা না হলেও খারাপ হয়নি পারফরম্যান্স। লভলিনা সেমিফাইনালে বিশ্বের সেরা বক্সারের সামনে পড়ে গেল। তবু ও চেষ্টা করেছিল। লড়াই করেছে, আত্মত্যাগ করেছে। লভলিনা ও মেরি কমকে দেখে উদীয়মান বক্সাররা অনুপ্রাণিত হবে। ভারতীয় বক্সিংয়ের জন্য খুব ইতিবাচক ছবি।'


প্রথম দর্শনে লভলিনাকে দেখে দারুণ কিছু মনে হয়নি আলি কামারের। 'প্রথমে দেখে খুব একটা দুর্দান্ত প্রতিভা মনে হয়নি। তবে পরিশ্রম করত। তা দিয়েই সমস্ত খামতি মিটিয়ে দিয়েছিল। অভিজ্ঞতা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আরও ভাল খেলেছে,' বলছিলেন আলি কামার। যোগ করলেন, 'আগে মনে করা হতো অলিম্পিক্সের যোগ্যতা অর্জন করলেই অনেক হয়েছে। এখন সকলে উপলব্ধি করেছে যে, শুধু যোগ্যতা অর্জন করলেই হবে না। পদকও জিততে হবে।'



করোনা পরিস্থিতিতে জৈব সুরক্ষা বলয়ের কড়া নিয়মে অনেকে হাঁসফাস করছেন। আলি কামারও মেনে নিলেন যে, বায়ো বাবলে অ্যাথলিটদের জীবন কঠিন। তবে বললেন, 'তার মধ্যেও ইতালিতে প্র্যাক্টিস করতে যেতে পেরে ভাল হয়েছিল। আমাদের সঙ্গে মনোবিদ ছিলেন। তিনি সবসময় বক্সারদের মানসিকভাবে চাঙ্গা রাখতেন। নিজেদের ম্যাচ দেখতাম। ইতালিতে বিধিনিষেধে কিছুটা শিথিলতা ছিল। ওখানে থাকার সময় শপিং মলে গিয়েছি এক আধদিন। ইন্ডোর গেমস চলত। একঘেঁয়েমি আসতে দিইনি।'


পরিশ্রম ও নিষ্ঠার পুরস্কার হিসাবে এসেছে ব্রোঞ্জ পদক। তৃপ্ত লভলিনার বাঙালি গুরু।