ইম্ফল: ভাইয়েরা ফুটবল খেলে বাড়ি ফিরলে একটু যেন বিরক্তই হতেন তিনি। কারণ, তাদের সকলের শরীরে কাদা-মাটি মাখামাখি। যা দিদির একেবারেই অপছন্দের। দিদি চাইতেন এমন খেলা খেলতে, যেখানে শরীরে নোংরা লাগবে না। ধোপদূরস্ত থাকা যাবে। বেশ সাফসুতরো। ফ্যাশন স্টেটমেন্টও দেওয়া যাবে পোশাকে। যেমন তিরন্দাজদের থাকে। দিদিও তাই চেয়েছিলেন তিরন্দাজ হতে।


সেদিনের সেই দিদি, মীরাবাঈ চানু, শনিবার দেশকে গর্ব করার মতো মুহূর্ত উপহার দিলেন ভারোত্তোলনে পদক জিতে। স্ন্যাচ ও ক্লিন অ্যান্ড জার্ক মিলিয়ে ২০২ কেজি ওজন তুলে টোকিও অলিম্পিক্সে রুপো জিতলেন। যদিও অনেকে শুনলে অবাক হবেন যে, চানু কোনওদিন ভারোত্তোলনে নিজের নাম লেখানোর কথা ভাবেনইনি। তাঁর স্বপ্ন ছিল তিরন্দাজি!


অলিম্পিক্সের জন্য টোকিও রওনা হওয়ার আগে চানু এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, 'আমার সব ভাইয়েরাই ফুটবল খেলত। সারাদিন খেলার পর যখন বাড়ি ফিরত, গোটা শরীর কর্দমাক্ত। আমি চাইতাম এমন একটা খেলা খেলব, যেটা পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন। আমি চাইতাম তিরন্দাজ হব। তিরন্দাজরা সাফসুতরো থাকে, খুব স্টাইলিশও হয়।'


মণিপুরের রাজধানী ইম্ফল থেকে ২০ কিলোমিটার দূরের গ্রাম নঙ্গপক কাকচিং পরিবারের অভাবী পরিবারের সন্তান মীরাবাঈ ছোট থেকেই স্বপ্ন দেখতেন খেলার ময়দানে নাম করবেন। সেই স্বপ্নপূরণের জন্য তিনি এক ভাইয়ের সঙ্গে ২০০৮ সালে খুমান লম্পকে স্পোর্টস অথরিট অফ ইন্ডিয়া (সাই) এর কমপ্লেক্সে গিয়ে হাজির হন। সেদিন কোনও তিরন্দাজ প্র্যাক্টিস করছিলেন না। হতাশ হয়ে পড়েন চানু। তখনই তিনি সাই কমপ্লেক্সের দেওয়ালে টাঙানো বিখ্যাত ভারোত্তোলক কুঞ্জরানি দেবীর ছবি দেখেন। সেই ছবি দেখে চানুর এতটাই ভাল লেগে গিয়েছিল যে, তিনি সিদ্ধান্ত বদল করেন। ঠিক করেন ভারোত্তোলকই হবেন।


ভারোত্তোলক কোচ অনিতা চানুর প্রশিক্ষণে নতুন ইনিংস শুরু হয়েছিল চানুর। বরাবরই পরিশ্রমী। ছোটবেলা ভাই ও দাদাদের সঙ্গে মিলে জঙ্গল থেকে কাঠ কেটে আনতেন, পানীয় জল ভরে নিয়ে আসতেন দুধের কন্টেনারে করে। ট্রেনিংয়ের জন্য রোজ তাঁকে দুবার বাস বদলে ২২ কিলোমিটার পথ যেতে হত। পৌঁছতে হতো সকাল ৬টায়। অক্লান্ত পরিশ্রমে বছরের পর বছর যা করে গিয়েছেন চানু।


সেই পরিশ্রমেরই পুরস্কার পেলেন টোকিওয়।