কলকাতা: কেরিয়ারের তৃতীয় ওয়ান ডে। আর সেই ম্যাচে কি না প্রতিপক্ষ পাকিস্তান (Ind vs Pak)। তাও আবার শেষ ওভারে বল করছেন এমন একজন, যিনি দুসরার জনক। কিংবদন্তি স্পিনার সাকলিন মুস্তাক। আর তাঁর ওভারেই শেষ ৩ বলে করতে হবে ২ রান। তার ওপর দিনের আলো পড়ে আসছে। বল ঠিক মতো ঠাহর করা যাচ্ছে না।


যে কোনও তরুণ ক্রিকেটারের পা কেঁপে যাওয়ার মতোই পরিস্থিতি। হৃষিকেষ কানিতকর (Hrishikesh Kanitkar) যে স্নায়ুর চাপে ভুগবেন, সে তো স্বাভাবিক।


সাল ১৯৯৮। বাংলাদেশের মাটিতে ইন্ডিপেন্ডেন্স কাপ (Independence Cup)। ম্যাচের পরিস্থিতিও তখন চড়া সুরে বাঁধা। একে তো ভারত-পাকিস্তান মহারণ। তার ওপর ফাইনাল। বেস্ট অফ থ্রি ফাইনালের আয়োজন করা হয়েছিল। যার প্রথমটিতে জিতেছে ভারত। দ্বিতীয়টিতে একপেশেভাবে জিতেছে রশিদ লতিফের পাকিস্তান। পরিস্থিতি এমন হয়ে দাঁড়ায় যে, তৃতীয় ফাইনালে নির্ধারিত হবে কার হাতে উঠবে ট্রফি। ভারতের অধিনায়ক মহম্মদ আজহারউদ্দিন, নাকি পাক নেতা লতিফ!


চূড়ান্ত ফাইনালের উন্মাদনা আর উত্তেজনা কয়েক গুণ বাড়িয়ে জোড়া সেঞ্চুরিতে পাকিস্তানকে রানের পাহাড়ে বসিয়ে দিয়েছিলেন সঈদ আনোয়ার ও ইজাজ আমেদ। প্রথমে ব্যাট করে পাকিস্তান তুলেছিল ৪৮ ওভারে ৩১৪/৫। অনেকেই ভেবে নিয়েছিলেন যে, চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীদের কাছে পরাস্ত হতে হবে টিম ইন্ডিয়াকে।


কিন্তু অন্যরকম ভেবেছিলেন ভারতের দুই ওপেনার সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় ও সচিন তেন্ডুলকর। দুই ওপেনার ৮.২ ওভারে ৭১ রান তোলেন। সচিন ফিরলেও সৌরভের সঙ্গে ইনিংসের হাল ধরেন রবিন সিংহ। সৌরভ করেন ১২৪। রবিন সিংহ ৮২ রান করে ফেরেন।


শেষ পর্যন্ত অন্তিম ওভারে ম্যাচ বার করার গুরুদায়িত্ব এসে পড়ে কানিতকরের ওপরে। নবাগত ক্রিকেটারের চোখেমুখে চাপ যেন পড়তে পেরেছিলেন অভিজ্ঞ জাভাগাল শ্রীনাথ। কানিতকরের মুশকিল আসান হয়ে দেখা দিলেন কর্নাটকের পেসারই। এগিয়ে গিয়ে কিছু কথা বলেন তিনি। তারপরেই কানিতকরের সেই বিখ্যাত শট। মিড উইকেটের ওপর দিয়ে সাকলিনের বল বাউন্ডারিতে পাঠিয়ে দেন বাঁহাতি ব্যাটার। রুদ্ধশ্বাস ফাইনালে মাত্র এক বল বাকি থাকতে পাকিস্তানকে তিন উইকেটে হারিয়ে নাটকীয়ভাবে ইন্ডিপেন্ডেন্স কাপ জিতে নেয় ভারত।


পরে এক সাক্ষাৎকারে কানিতকর বলেছিলেন, 'সাকলিনের ওভারে শ্রীনাথ ভাই আমাকে ডেকে বলেছিল, বল ব্যাটে লাগানোর চেষ্টা করিস। তাহলেই হবে। আমিও ঠিক করে নিয়েছিলাম, বলের ওপর নজর রেখে তা ব্যাটে লাগানোর চেষ্টা করব। সেই মন্ত্রেই সাফল্য পাই।'


ক্রিকেট তাঁর পরিবারে। বাবা হেমন্ত কানিতকর জাতীয় দলের হয়ে খেলেছেন। কেরিয়ারে মাত্র ৩৪টি ওয়ান ডে ও দুটি মাত্র টেস্ট খেলেন কানিতকর। কিন্তু ওই একটা বাউন্ডারি ভারতীয় ক্রিকেটের ইতিহাসে অমর করে রেখেছে কানিতকরের নাম।


আরও পড়ুন: দামী ব্যাগ নষ্ট করেছে বিমান সংস্থা, ক্ষোভে ফুঁসছেন কেকেআর তারকা