পার্থপ্রতিম ঘোষ, কলকাতা : কলকাতা ডার্বি। মাঠে-ময়দানে বারুদ ঠাসা টক্কর। স্কিল, ক্ষিপ্রতা, প্রতিভার ঠোকাঠুকি। কখনও কড়া ট্যাকল, কখনও কার্ডের ছড়াছড়ি। কলকাতা ডার্বি মানেই উচ্চ রক্তচাপ। লাগামহীন আবেগ। লাল-হলুদ বনাম সবুজ-মেরুন। দুই প্রধানের রেষারেষির গ্রাফ মাঠ ছাপিয়ে কখনও ছড়িয়ে পড়েছে মাঠের বাইরেও। দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ক্লাবের সমর্থকদের মধ্যে মতপার্থক্য মাঝে মধ্যেই হিংসাত্মক চেহারা নিতেও দেখেছে বঙ্গবাসী। কিন্তু বুধবার যখন চুক্তিপত্র নিয়ে সমর্থকদের বিক্ষোভে ইস্টবেঙ্গল ক্লাব অগ্নিগর্ভ, তখনই একেবারে সৌহার্দ্যের অন্য এক ছবি দেখা গেল চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী মোহনবাগানে।
রণক্ষেত্র লেডলি ক্লডিয়াস সরণিতে বিক্ষোভ, হাতাহাতি, মারামারির মধ্যে পুলিশ লাঠিচার্জ। সেই সময় পুলিশের তাড়া খেয়ে মোহনবাগানের ক্লাব-তাঁবুর দিকে দৌড়তে শুরু করেন অনেকে। ক্লাবের মূল গেট বন্ধ থাকলেও পাশের সিএফসির দিকে যাওয়ার রাস্তা দিয়ে সবুজ মেরুন শিবিরে ঢুকে পড়েন সমর্থকদের কেউ কেউ। পুলিশ ক্লাবের মাঠ টপকেও ঢুকে পড়েন অনেকে। সমস্যার মধ্যে পড়া লাল-হলুদ সমর্থকদের আশ্রয় দেন মোহনবাগান-কর্তারা।
মোহনবাগান কর্তা সঞ্জয় ঘোষ বলেছেন, 'সমর্থকরাই ক্লাবের প্রাণ। তারা যখন বিপদে পড়বে, তাদের বাইরে বের করে দিতে পারি? ওদের জল দিই, কাউকে বার করে দেওয়া হয়নি।' এদিকে, ইনভেস্টর-সঙ্কটের মধ্যে ইস্টবেঙ্গল ক্লাবের হাতে এক মাসের বেতন তুলে দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছেন তৃণমূল বিধায়ক মদন মিত্র। যাঁকে কট্টর মোহনবাগানী হিসেবেই চেনে ময়দান। এই মরসুমে যখন আইএসএল এগিয়ে আসছে তখনই লগ্নিকারী সংস্থার সঙ্গে ইস্টবেঙ্গল ক্লাব কর্তৃপক্ষের মতবিরোধ। যার জেরেই বুধবার বিকেলে রণক্ষেত্রের চেহারা নেয় ইস্টবেঙ্গল ক্লাবের সামনে। এই চুক্তি-বিরোধ নিয়ে ক্লাব কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্তকে সমর্থন জানিয়েছে সমর্থকদের এক পক্ষ। অপরপক্ষ আবার চুক্তিতে সইয়ের পক্ষে।
মাঠে বল দখলের লড়াই। মাঠের বাইরে সমর্থকদের স্লোগানে-স্লোগানে টক্কর। দুই ক্লাবের প্রতিদ্বন্দ্বিতার ইতিহাস, ডার্বির ঐতিহ্য, সব তো ফুটবলকে ঘিরেই। একপক্ষের ঘোর দুর্দিনে তাই বাড়িয়ে দেওয়া সাহায্যের হাত, হোক না সে ময়দানের চিরশত্রু। এরকম স্পোর্টিং স্পিরিট শিখিয়েছে তো এই খেলাটাই। তাই তো বারবার বাঙালি গেয়ে ওঠে, 'সব খেলার সেরা....'