রাজকোট: তাঁর নামের পাশে জ্বলজ্বল করছে ৭২৮ আন্তর্জাতিক উইকেট। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে ৭২ উইকেট। ওয়ান ডে-তে ১৫৬ শিকার। আর টেস্টে পাঁচশো। শুক্রবার রাজকোটে জ্যাক ক্রলিকে ফিরিয়ে যে মাইলফলক স্পর্শ করলেন আর অশ্বিন (Ravichandran Ashwin)। অনিল কুম্বলের (Anil Kumble) পর ভারতের দ্বিতীয় ক্রিকেটার হিসাবে পাঁচশো উইকেটের ক্লাবে নাম লেখালেন তামিলনাড়ুর অফস্পিনার।


অথচ, শৈশবের কোচ হস্তক্ষেপ না করলে অফস্পিনার নয়, অশ্বিন হয়তো হতেন ওপেনিং ব্যাটার। বা মিডিয়াম পেসার। স্পিন শিল্প আয়ত্ত করা তাঁর ভবিষ্যৎ পরিকল্পনায় কোনওভাবেই ছিল না।


কীভাবে সম্ভব হয়েছিল অশ্বিনের কেরিয়ারের এই দিকবদল? তাঁর শৈশবের কোচ বিজয় কুমার জানিয়েছিলেন, অশ্বিন তখন ক্লাস ইলেভেনের ছাত্র। পদ্ম শেশাদ্রী বালা ভবন স্কুল বদলে সেন্ট বেডে'স অ্যাঙ্গলো ইন্ডিয়ান হাই স্কুলে ভর্তি হন তিনি। একদিন স্কুলের নেটে প্র্যাক্টিস করার সময় মিডিয়াম পেস বল করতে করতে ক্লান্তি অনুভব করেন অশ্বিন। কোচের কাছে অনুমতি চান, তিনি কি অফস্পিন বোলিং করতে পারেন? রাজি হন বিজয় কুমার। আর প্রথম দিন নেটে অফস্পিন করেই চমকে দেন অশ্বিন। তাঁর নিয়ন্ত্রণ, বল ঘোরানোর দক্ষতা নজর কেড়ে নেয় কোচের। তিনি বুঝে যান, এ ছেলে তৈরিই হয়েছে স্পিনার হওয়ার জন্য।


অশ্বিন অবশ্য পরের দিনই নেটে মিডিয়াম পেস বোলিং শুরু করেন। বাধা দেন বিজয় কুমার। তাঁকে বলেন, স্পিন বোলিংই করে যাও। স্যরের কথায় অশ্বিন খুশি হননি। কিন্তু কোচও নাছোড়বান্দা। সেদিন নেটে বলই করতে দিলেন না ছাত্রকে। তারপর অশ্বিনের বাবার সঙ্গে কথা বলেন বিজয় কুমার। তাঁকে আশ্বস্ত করেন, অফস্পিন করলে এ ছেলে অনেক দূর যাবে। চেন্নাইয়ের মেরিনা বিচ লাগোয়া স্কুলের নেটে নতুন শিল্পকে আরও ঘষামাজা করতে শুরু করে দেন অশ্বিন। কোচের তত্ত্বাবধানে।


আর ব্যাটিংয়ের নেশা? অশ্বিন যে ওপেনার হতে চাইতেন। তবে কোচ বিজয় কুমার তাঁকে বোঝান, ব্যাটার হলে দলে ঢোকার জন্য অনেকের সঙ্গে লড়াই করতে হবে। বোলিং করলে এবং নিয়মিত উইকেট তুলতে পারলে হয়তো প্রতিদ্বন্দ্বিতা কিছুটা কম। হয়ও তাই। পরিশ্রমে খামতি রাখেননি অশ্বিন। পুরস্কারও পান। নিয়মিত উইকেট নিয়ে প্রথমে তামিলনাড়ুর রাজ্য দল ও পরে ভারতীয় দলেও জায়গা করেন নেন। হয়ে ওঠেন বিশ্বের সর্বকালের অন্যতম সেরা স্পিনার।


যদিও ব্যাটিং এখনও ভীষণ প্রিয় অশ্বিনের। রাজকোটে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধেও প্রথম ইনিংসে ৯ নম্বরে ব্যাট করতে নেমে লড়াকু ৩৭ করেছেন। টেস্টে পাঁচটি সেঞ্চুরিও রয়েছে তাঁর সাফল্যের ঝুলিতে। সঙ্গে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ১৫টি হাফসেঞ্চুরি।


২০১১ সালে নয়াদিল্লিতে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে টেস্ট অভিষেক। আর সেই ম্যাচেই দুই ইনিংস মিলিয়ে ৯ উইকেট নেন। ম্যাচের সেরাও হন অশ্বিন। ভারত ম্যাচ জেতে ৫ উইকেটে। সীমিত ওভারের ক্রিকেটে অশ্বিনের ফিল্ডিং নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। তবে যখনই সুযোগ পেয়েছেন, উইকেট তুলে নিজেকে প্রমাণ করেছেন।


অশ্বিন তাঁর পাঁচশো উইকেটের কীর্তি উৎসর্গ করেছেন বাবাকে। জানিয়েছেন, কেরিয়ারের সমস্ত উত্থান-পতনে পাশে থেকেছেন বাবা। সব সময় সাহস জুগিয়েছেন। তাই গর্বের এই মুহূর্ত বাবাকেই উপহার দিয়েছেন অশ্বিন। ভক্তরা অবশ্য এতেই খুশি নন। প্রত্যাশার পারদ আরও বেশি। সামনে পরপর রেকর্ড ভাঙার হাতছানি। নাথান লায়নের ৫১৭, কোর্টনি ওয়ালশের ৫১৯, গ্লেন ম্যাকগ্রার ৫৬৩। সাঁইত্রিশের ক্রিকেটারের দম ফেলার ফুরসত কই!


আরও পড়ুন: অশ্বিনের কীর্তির দিনই ডাকেটের ঝোড়ো সেঞ্চুরি, ৩৫ ওভারে ২০৭ তুলল ইংল্যান্ড!


আপনার পছন্দের খবর আর আপডেট এখন পাবেন আপনার পছন্দের চ্যাটিং প্ল্যাটফর্ম হোয়াটস অ্যাপেও। যুক্ত হোন ABP Ananda হোয়াটস অ্যাপ চ্যানেলে।