কলকাতা: একবার এক সাক্ষাৎকারে রাহুল দ্রাবিড় বলেছিলেন যে সেদিন ইডেনে তাঁর ওই ইনিংস বা লক্ষ্মণের সঙ্গে তাঁর বিশাল পার্টনারশিপের পেছনে বিশাল কৃতিত্ব ইডেনের দর্শকদের প্রতি মুহূর্তের সমর্থন, চিৎকার। কোনওভাবেই নিজেকে নিয়ে বড়াই করা পছন্দ করেন না ভারতীয় ক্রিকেটের মিস্টার ডিপেন্ডেবল। যা ক্রিকেটীয় কেরিয়ারে প্রতি মুহূর্তে বিভিন্ন সময় বোঝা গিয়েছে। একের পর এক কালজয়ী ইনিংস খেলেছেন। কিন্তু মিডিয়া, সোশ্য়াল হাইপ, জনপ্রিয়তায় দলের বাকিদের ছায়া হয়েই থেকে গিয়েছেন বেশিরভাগ সময়টাই। আসলে রাহুল দ্রাবিড় মানুষটা এমনই। বিতর্ক যেমন তাঁকে ছুঁতে পারে না, তেমনই ফ্ল্যামবয় ইমেজ তাঁর নেই। তাই নিজের কাজটি চুপচাপ করে গিয়েছেন নিজের ১৬ বছরের ক্রিকেট কেরিয়ারে। ইডেনে ২০০১ সালে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে ম্যাচে লক্ষ্মণের ২৮১ রানের ইনিংসের পাশে উজ্জ্বল ছিল রাহুল দ্রাবিড়ের ১৮০ রানের ইনিংসও। আজকের ওস্তাদের মার সিরিজে আমাদের প্রতিবেদন সেই ইনিংস নিয়েই।


সেই সিরিজে ১-০ ব্য়বধানে পিছিয়ে থেকে ইডেনে খেলতে নেমেছিল ভারত। মুম্বইয়ে ১০ উইকেটে আগের ম্যাচে হারের দগদগে ঘা। তার ওপর আবার ইডেন টেস্টে প্রথম ইনিংসে অস্ট্রেলিয়ার ৪৪৫ রানের বিশাল স্কোরের সামনে ১৭১ রানে অল আউট হয়ে গিয়েছিল টিম ইন্ডিয়া। ফলো অনের পর দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট করতে নেমে একটা সময় ৬ উইকেট হারিয়ে ২৩২ রান বোর্ডে তুলেছিল ভারত। ৬ নম্বরে ব্যাট করতে নেমেছিলেন রাহুল দ্রাবিড়। তৃতীয় দিনের শেষে ৪ উইকেটে ২৫৪ রান বোর্ডে তুলেছিল ভারত। লক্ষ্মণ ১০৭ রানে ও দ্রাবিড় ৭ রানে অপরাজিত ছিলেন। 


তৃতীয় দিন পর্যন্তও পুরোদমে ম্যাচ স্টিভ ওয়ার দলের দখলে ছিল। তবে পালটে গেল তা চতুর্থ দিনেই। গ্লেন ম্যাকগ্রা, মাইকেল কাসপ্রোইচ, শেন ওয়ার্ন, জেসন গিলেসপিদের বোলিংয়ের সামনে মাথা উঁচু করে গোটা দিন মাটি কাঁমড়ে পড়ে থাকলেন ২ যোদ্ধা। সেদিন মোট ৯০ ওভারে ৩৩৫ রান বোর্ডে যোগ করেছিলেন লক্ষ্মণ-রাহুল। তৃতীয় দিনের শেষে ভাইরাল ফিভারে ভুগছিলেন রাহুল। তবে লক্ষ্যে অবিচল ছিলেন যে ম্যাচ বাঁচাতেই হবে। তাই নিজের শরীরের অসুস্থতার তোয়াক্কা না করেই লক্ষ্মণের সঙ্গী হয়ে পরের দিন মাঠে নেমেছিলেন। আর শুধু নামাই নয়, ৪৪৬ মিনিট সেই জ্বর নিয়ে, ট্যাবলেট খেয়ে ক্রিজে কাটিয়ে দিলেন। ২০টি বাউন্ডারির সাহায্যে ৩৫৩ বলে ১৮০ রান করে যখন রান আউট হয়ে প্যাভিলিয়নে ফিরছেন, তখন দল বিপদসীমা পেরিয়ে গিয়েছে। শেষ পর্যন্ত সেই ইনিংসে ৭ উইকেটে ৬৫৭ বোর্ডে তোলার পর ইনিংস ডিক্লেয়ার করে দেন তৎকালীন ভারত অধিনায়ক সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়। 


ম্যাচের পরেরটুকু বিশ্বের সব ক্রিকেটপ্রেমীদেরই জানা। প্রথম ভারতীয় হিসেবে টেস্টে হ্যাটট্রিক করেছিলেন হরভজন সিংহ। তাঁর ইনিংসে ৭ উইকেট নেওয়ার সুবাদে অস্ট্রেলিয়া ৩৮৪ রান তাড়া করতে নেমে ২১২ রানে অল আউট হয়ে যায়।