হায়দরাবাদ: ওয়ান ডে বিশ্বকাপের (ODI World Cup 2023) আর মাস দু'য়েকও বাকি নেই। বিশ্বক্রিকেটে ইতিমধ্যেই সাজ সাজ রব শুরু গিয়েছে, বাড়ছে সমর্থকদের উন্মাদনার পারদও। মেগা টুর্নামেন্টের আগে সব দলই নিজেদের দলের ভারসাম্য, শক্তি, দুর্বলতা বিচার করে দল গোছানোর কাজ সারতে ব্য়স্ত। তার ফাঁকে এবিপি লাইভ বিশ্বকাপের দশ স্টেডিয়ামের হাল হকিকত জানাতে শুরু করল বিশেষ এই সিরিজ়। এই সিরিজ়ের প্রথম চার পর্বে আলোচনা হয়েছে ধর্মশালা ক্রিকেট স্টেডিয়াম, আমদাবাদের নরেন্দ্র মোদি ক্রিকেট স্টেডিয়াম, ভারতে আয়োজিত গত বিশ্বকাপ ফাইনালের ভেন্যু, মুম্বইয়ের বিখ্যাত ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়াম ও নয়াদিল্লির অরুণ জেটলি স্টেডিয়াম নিয়ে। পঞ্চম কিস্তিতে আজ হায়দরাবাদের রাজীব গাঁধী ইন্টারন্যাশনাল স্টেডিয়াম নিয়ে আমরা আলোচনা করব।


বিশ্বকাপের জন্য যে কতগুলো মাঠ এবার বাছাই করা হয়েছে, তার মধ্যে অন্যতম এই মাঠটি। প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী রাজীব গাঁধীর নামে নামকরণ করা হয়েছিল এই স্টেডিয়ামের। হায়দরাবাদের তেলেঙ্গানায় অবস্থিত এই স্টেডিয়াম হায়দরাবাদ স্টেডিয়াম নামেও পরিচিত। হায়দরাবাদ ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন ও আইপিএলে সানরাইজার্স হায়দরাবাদের ঘরের মাঠ এটি। চলতি বছর  ১৮ জানুয়ারি পর্যন্ত এই স্টেডিয়ামে ৫টি টেস্ট, ৭টি ওয়ান ডে ও ৩টি টি-টোয়েন্টি ম্যাচ আয়োজিত হয়েছে। ২০১৭ ও ২০১৯ সালের আইপিএল ফাইনাল আয়োজিত হয়েছিল এই মাঠে।


ইতিহাস


হায়দরাবাদ ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশনের আগের হোম গ্রাউন্ড ছিল লাল বাহাদুর শাস্ত্রী স্টেডিয়াম। যা ফতেহ ময়দান স্পোর্টস কমপ্লেক্সে অবস্থিত ছিল। কিন্তু স্টেডিয়ামটি অনেক ছোট হওয়ায় শুধু ব্যাটাররাই সুবিধে পেতেন। হাই স্কোরিং গ্রাউন্ড ছিল এটি। যার ফলে খুব বেশি আন্তর্জাতিক ম্যাচ পেত না। ২০০৩ সালে হায়দরাবাদ ক্রিকেট অ্য়াসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে একটি নতুন স্টেডিয়ামের প্রস্তাব তৎকালীন অন্ধ্রপ্রদেশ সরকারের কাছে রাখা হয়েছিল। যা দ্রুত পাশ হয়ে যায় ও নতুন স্টেডিয়ামের জন্য বাজেট বরাদ্দ করা হয়। এরপরই সরকারের তরফে উপ্পলে একটি বড় জমি বেছে নেওয়া হয় স্টেডিয়ামের জন্য। ২০০৪ সালে স্টেডিয়ামটি নির্মান হয় ও তার নাম রাখা হয় বিশাখা ইন্টারন্যাশনাল ক্রিকেট স্টেডিয়াম। পরে ২০০৫ সালে তার নাম পরিবর্তিত হয় প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী রাজীব গাঁধীর নামে করা হয়। এই স্টেডিয়ামের দুটাে এন্ড। একটি প্যাভিলিয়ন এন্ড ও দ্বিতীয়টি নর্থ এন্ড। পরে নর্থ এন্ডের নাম বদলে ভিভিএস লক্ষ্মণ এন্ড রাখা হয়।


২০০০ সালে টেস্ট খেলিয়ে দেশ হিসেবে যোগ্যতা অর্জন করার পরে ভারতের মাটিতে প্রথমবার টেস্ট খেলতে এই স্টেডিয়ামেই নেমেছিল বাংলাদেশ শিবির। ২০১৭ সালে ভারত-বাংলাদেশ টেস্ট হয়েছিল এই মাঠে। এই মাঠেই আইপিলের সেরা বোলিং পারফরম্যান্স এসেছিল আলজারি জোসেফের তরফে। সানরাইজার্সের বিরুদ্ধে মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের হয়ে মাত্র ১২ রানের বিনিময়ে ৬ উইকেট তুলে নিয়েছিলেন। উমেশ যাদব এই মাঠেই প্রথমবার নিজের টেস্ট কেরিয়ারে প্রথমবার ম্যাচে ১০ উইকেট নিয়েছিলেন এই মাঠেই ক্যারিবিয়ানদের বিরুদ্ধে। ২০১২ সালে কিউয়িদের বিরুদ্ধে এই মাঠে একই রেকর্ডের মালিক হয়েছিলেন রবিচন্দ্রন অশ্বিন।


ওয়ান ডে ফর্ম্যাটে এই মাঠে রেকর্ড


সর্বাধিক স্কোর: অস্ট্রেলিয়া ৩৫০/৪ 


সর্বনিম্ন স্কোর: ইংল্যান্ড ১৭৪


এই ফর্ম্যাটে ৩ ইনিংয়ে ২৩৩ রান করেছেন যুবরাজ সিংহ। যা এখনও পর্যন্ত ব্যক্তিগত সর্বাধিক কোনও ব্যাটারের।


শুভমন গিলের ২০৮ রান ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ এই স্টেডিয়ামে কোনও ব্যাটারের।


এই মাঠেই সচিন তেন্ডুলকর তাঁর ওয়ান ডে ফর্ম্যাটে ১৭ হাজার তম রান পূর্ণ করেছিলেন। নিজের ৪৫ তম সেঞ্চুরি পূরণ করেছিলেন ওয়ান ডে-তে।


২০১৯ সালে ভারতীয় ক্রিকেট দল নিজেদের ৫০০ তম ওয়ান ডে ম্যাচ জিতেছিল এই মাঠেই।


ওয়ান ডে ফর্ম্যাটে ব্যক্তিগত সর্বাধিক ২টো সেঞ্চুরি এই মাঠে রয়েছে যুবরাজ সিংহের।


পিচ: এখানকার পিচ সাধারণত ফ্ল্যাট ট্র্যাক হয়ে থাকে। ব্যাটাররা বেশি সুবিধে পায়। হাই স্কোরিং গ্রাউন্ড। ওয়ান ডে ফর্ম্য়াটে মোট ৭ ম্যাচ খেলা হয়েছে এই মাঠে। সেখানে প্রথমে ব্যাট করা দল ৪ বার জিতেছে। পরে ব্যাট করতে নামা দল ৩ বার জিতেছে। প্রথমে ব্যাট করতে নামা দলের গড় স্কোর ২৮৮। মোট তিনবার তিনশো বা তার বেশি রান উঠেছে এক ইনিংসে এই মাঠে।


স্টেডিয়ামের মোট আসনসংখ্যা: রাজীব গাঁধী আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে একসঙ্গে ৫৫,০০০ হাজার দর্শক মাঠে বসে ম্যাচের মজা উপভোগ করতে পারবেন।


রাজীব গাঁধী আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে বিশ্বকাপের ম্যাচ


১. পাকিস্তান বনাম নেদারল্যান্ডস, ৬ অক্টোবর, শুক্রবার, দুপুর ২.০০


২. নিউজিল্য়ান্ড বনাম নেদারল্যান্ডস, ৯ অক্টোবর, সোমবার, দুপুর ২.০০ 


৩. পাকিস্তান বনাম শ্রীলঙ্কা, ১০ অক্টোবর, বৃহস্পতিবার, দুপুর ২.০০