সন্দীপ সরকার, কলকাতা: তেত্রিশ বছর আগে ইডেন গার্ডেন্সের (Eden Gardens) এক ফাইনাল। তার আগের বছরই দিল্লির কাছে ট্রফির যুদ্ধে হারতে হয়েছিল। তবে ১৯৮৯-৯০ মরসুমে সম্বরণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Sambaran Banerjee) বাংলা শাপমোচন ঘটায়। রঞ্জি (Ranji Trophy) চ্যাম্পিয়ন হয় বাংলা (Bengal Cricket Team)। ফাইনালে দিল্লিকে হারিয়েই। যে ম্যাচে বাংলার অন্যতম সৈনিক ছিলেন ইন্দুভূষণ রায়। যিনি বঙ্গ ক্রিকেটে 'আইবি' নামে পরিচিত।


ইডেনে ফের এক রঞ্জি ফাইনালের আগে ইন্দুভূষণ যেন ৩৩ বছর আগের পরিস্থিতির সঙ্গে মিল খুঁজে পাচ্ছেন। এবার বাংলার সামনে সৌরাষ্ট্র। এবিপি লাইভকে ইন্দুভূষণ বলছিলেন, 'আমরা যেবার চ্যাম্পিয়ন হলাম, তার আগের বছরই দিল্লির কাছে ফাইনালে হেরেছিলাম। তাই বাড়তি জেদ ছিলই। সকলে নিজের দায়িত্বটা জানত। বাড়তি কিছু করার চেষ্টা করিনি ফাইনালে। এবার বাংলার পরিস্থিতিও খানিকটা একইরকম। কারণ, ২০১৯ সালে সৌরাষ্ট্রের কাছেই ফাইনালে হেরেছিল বাংলা। এবার ফের সৌরাষ্ট্রই মুখোমুখি আমাদের ছেলেরা।' যোগ করছেন, 'বাংলার খেলা খুব ভালভাবে অনুসরণ করি। গত তিন বছর দারুণ ক্রিকেট খেলছে ছেলেরা। ২০১৯-এর ফাইনালে শেষ দিন পর্যন্ত লড়াই করেছিল। তার পরেরবার সেমিফাইনাল খেলেছি। লাল বলের ক্রিকেটে দারুণ ধারাবাহিকতা। মন বলছে বাংলাই এবার চ্যাম্পিয়ন হবে।'


এবারের রঞ্জি ট্রফিতে বাংলার সাফল্যের নেপথ্যে আইবি কৃতিত্ব দিচ্ছেন মাঠ ও মাঠের বাইরের কয়েকজন চরিত্রকে। বলছেন, 'লক্ষ্মী (হেড কোচ লক্ষ্মীরতন শুক্ল), সৌরাশিস (কোচ সৌরাশিস লাহিড়ী), ম্যাকো (বোলিং কোচ শিবশঙ্কর পাল) মাঠের বাইরে দলটাকে দেখছে। মাঠে মনোজ তিওয়ারি দারুণ নেতৃত্ব দিচ্ছে। এই দলটাকে দেখে মনে হচ্ছে ৩৩ বছরের অপেক্ষার অবসান হবে।' 


তবে বাংলার শেষ রঞ্জি জয়ী দলের ওপেনারকে ভাবাচ্ছে বাংলার ওপেনিং কাঁটা। গোটা মরসুমে বারবার ওপেনিং জুটি বদলেছে বাংলা। কিন্তু অভিমন্যু ঈশ্বরণের সঠিক পার্টনার খুঁজে পায়নি। আইবি বলছেন, 'ওপেনিংয়ে একটু পিছিয়ে বাংলা। বিভিন্ন কম্বিনেশন চেষ্টা করা হয়েছে। কিন্তু ফল পাওয়া যায়নি।' যোগ করছেন, 'চ্যাম্পিয়ন হতে গেলে শুরুটা খুব ভাল হওয়া দরকার। সেমিফাইনালে কর্ণ লাল ও অভিমন্যু ঈশ্বরণ প্রায় ১০ ওভারে ৫০ রান তুলে দিয়েছিল। সেখানেই মানসিকভাবে এগিয়ে যায় বাংলা। মধ্যপ্রদেশের কোচ চন্দ্রকান্ত পণ্ডিতও স্বীকার করেছিল সেটা। কর্ণ আগ্রাসী খেলে। সুযোগ পেলে রান করে দিতে পারে। তবে ডিফেন্সটা আরও ভাল করতে হবে। বল ছাড়তে হবে। ক্রিজে থাকতে হবে। সব সময় শটের পিছনে গেলে হবে না।'


তবে বাংলার বাকি ব্যাটিং ও পেস বোলিং স্বস্তি দিচ্ছে ইন্দুভূষণকে। বলছেন, 'যে দল ফাইনাল খেলছে, তাদের তিনজন ব্যাটার টুর্নামেন্টের সেরা দশে রয়েছে। আমাদের পেস বোলিং ঘরোয়া ক্রিকেটে অন্যতম সেরা। মুকেশ কুমার, আকাশ দীপ, ঈশান পোড়েল, তিনজনই ছন্দে রয়েছে। কোনও দল আমাদের পেসারদের বিরুদ্ধে স্বস্তিতে থাকে না। যতটুকু খবর আছে, ইডেনে স্পোর্টিং উইকেট হবে। বাংলার পেসাররা ভাল খেলবে।'


ফাইনালের আগে সৌরাষ্ট্র শিবির বাড়তি অক্সিজেন পেয়েছে সেরা পেসার জয়দেব উনাদকাট যোগ দেওয়ায়। আইবি বলছেন, 'এটা নিয়ে চিন্তা রয়েছে। এবারের রঞ্জিতে দিল্লির বিরুদ্ধে ৮ উইকেট পেয়েছিল। ভারতীয় দলে গিয়েছিল। ফিরে এসেছে। তবে আমাদের ব্যাটারদের ওকে সামলে রান করার দক্ষতা রয়েছে।'


১৯৮৯-৯০ মরসুমে ফাইনালের আগে বাংলার ক্রিকেটারদের উৎসাহ দিতে হাজির হয়ে গিয়েছিলেন কিংবদন্তি ফুটবলার ও কোচ পিকে বন্দ্যোপাধ্যায়। আইবি বলছেন, 'সেবার আমাদের ড্রেসিংরুমের আবহ খুব ভাল ছিল। ফাইনালের আগে পি কে বলেছিলেন, বেশি ভেবো না। খেলাটাকে খেলার মতো দেখো। চাপমুক্ত থাকো। বেশি ভাবলে চাপে পড়ে যাবে। সেটাতেই কাজ হয়েছিল।'


নিজের রঞ্জি জয়ের অভিজ্ঞতা থেকে বাংলার ক্রিকেটারদের উদ্দেশে আইবি-র পরামর্শ, 'নিজের দক্ষতা অনুযায়ী খেলো। বাড়তি কিছু করার চেষ্টা কোরো না। বড় ম্যাচের আগে স্নায়ুর চাপ থাকেই। কেউ যদি বলে কোনও চাপ ছিল না, মিথ্যে বলবে। মাথা ঠান্ডা করে খেলছে মনোজ-অনুষ্টুপরা। বেশি মাতামাতি হচ্ছে না। নীরবে নিজেদের কাজটা করে যাচ্ছে। প্রথম ম্যাচ থেকে যেভাবে খেলছো, ফাইনালেও সেভাবেই খেলো।'


আরও পড়ুন: পেনাল্টি বাঁচিয়ে উঠেই লুটিয়ে পড়লেন মাঠে, ম্যাচের মাঝেই হৃদরোগ, মর্মান্তিক প্রয়াণ ফুটবলারের