কলকাতা: ২৭ জানুয়ারি, ২০১৯-এ শেষবার কলকাতা ডার্বির জয়ের স্বাদ পেয়েছিল লাল-হলুদ শিবির। আই লিগের সেই ম্যাচে গোল করেছিলেন হাইমে স্যান্টোস কোলাডো ও জবি জাস্টিন। ২-০ গোলে ম্যাচ জিতেছিল ইস্টবেঙ্গল। তারপর গঙ্গা দিয়ে অনেক জল গড়িয়ে গিয়েছে। এখন যেমন এসসি ইস্টবেঙ্গল, তেমনই উল্টোদিকে এটিকে মোহনবাগান। করোনা আবহে ফুটবল অন্যরকম হয়ে গিয়েছে। গত মরসুম থেকেই আইএসএল হচ্ছে গোয়ায় দর্শকশূন্য মাঠে। সোশ্যাল মিডিয়া ছাড়া ফুটবলারদের সঙ্গে সমর্থকদের কোনও যোগাযোগ নেই। ফলে বড় ম্যাচের আগের দিন অনুশীলনে ভিড়, জয়ের দাবি জানিয়ে সমর্থকদের আকুতির ছবি উধাও। কিন্তু এত পরিবর্তনের মধ্যেও একটি বিষয়ে কোনও বদল নেই। সেটা হল, এখন কলকাতা ডার্বি হলেই জয় পাচ্ছে এটিকে মোহনবাগান। এক হাজারেরও বেশি দিন অপরাজিত সবুজ-মেরুন শিবির।


কাল কি আরও একটি সহজ জয় পাবে এটিকে মোহনবাগান? এসসি ইস্টবেঙ্গল কোচ মারিও রিভেরা অবশ্য সেটা মানতে নারাজ। তাঁর দাবি, ‘ডার্বি সবময় ৫০-৫০। আমাদের আন্ডারডগ বলা হচ্ছে ঠিকই, কিন্তু বাস্তব পরিস্থিতি অতটাও খারাপ না। সব ফুটবলারই পেশাদার। পেশাদার ফুটবলাররা জেতার লক্ষ্যেই মাঠে নামে। আমাদের দলের ফুটবলারদের প্রস্তুতি দেখলেই বোঝা যাবে, ওরা ডার্বি জয়ের জন্যই তৈরি হচ্ছে।’


নিজেদের উপর থেকে চাপ হাল্কা করার জন্যই হয়তো বিপক্ষকে এগিয়ে রাখার কৌশল নিয়েছেন লাল-হলুদ কোচ। তিনি সটান বলে দিলেন, ‘ডার্বিতে ওদের উপরেই বেশি চাপ থাকবে। কারণ, ওরা প্রথম চারটি দলের মধ্যে থাকার লড়াইয়ে আছে। তাই এই ম্যাচ থেকে পয়েন্ট পাওয়ার তাগিদ ওদের বেশি থাকবে।’


মারিও দায়িত্ব নেওয়ার পরেই এফসি গোয়ার বিরুদ্ধে জয় পায় এসসি ইস্টবেঙ্গল। সেটাই এবারের আইএসএল-এ দলের প্রথম এবং এখনও পর্যন্ত একমাত্র জয়। সেই জয়ের পরেই অবশ্য হায়দরাবাদের বিরুদ্ধে ছন্নছাড়া ফুটবল খেলে দল। হায়দরাবাদ জেতে ৪-০ গোলে। গোয়ার বিরুদ্ধে জয়ের পর কি আত্মতুষ্টি এসেছিল? এবিপি লাইভের এই প্রশ্নের সরাসরি কোনও জবাব দিলেন না মারিও। তিনি বললেন, ‘আমরা একটা ম্যাচ জেতার পর হেরে গিয়েছি। আবার নতুন করে শুরু করতে হবে। আগের ম্যাচে আমরা কোন জায়গায় ভাল করেছি, সেটা মাথায় রাখতে হবে। একইসঙ্গে যে ভুলগুলি করেছি, সেগুলির পুনরাবৃত্তি করলে চলবে না। সেই জায়গাগুলিতে উন্নতি করতে হবে।’


৩ বছর ডার্বি জেতেনি দল। তাছাড়া আগের ম্যাচেই বিশ্রী হার। সেখান থেকে কীভাবে ঘুরে দাঁড়াবেন ফুটবলাররা? লাল-হলুদ কোচ বলছেন, ‘আমরা ডার্বি জিততেই পারি। ডার্বিতে অন্য কোনও কিছু মাথায় থাকে না। দল লিগ টেবলে কত নম্বরে আছে, লিগের কী পরিস্থিতি, সেসব কিছুই এই ম্যাচে গুরুত্বপূর্ণ নয়। এই ম্যাচটা আলাদা। সবাই পেশাদার। দল হারতেই পারে আগের ম্যাচে। ডার্বিতে সেটা মাথায় থাকে না। এটা নতুন ম্যাচ। আমাদের আগের ম্যাচের কথা ভুলে গিয়ে খেলতে হবে।’


মারিও আরও বললেন, ‘আমি নতুন বিদেশিদের এই ম্যাচের গুরুত্ব বোঝাচ্ছি। যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনে খেলা হলে গ্যালারিতে দু’দলের সমর্থকরাই থাকত। এবার সেটা থাকবে না। ফাঁকা মাঠে খেলতে হবে আমাদের। তা সত্ত্বেও নতুন বিদেশিদের পুরনো ভিডিও দেখিয়ে বোঝাচ্ছি, সমর্থকরা এই ম্যাচের দিকে তাকিয়ে আছে। সমর্থকদের জন্য ম্যাচটা জিততে হবে।’


এটিকে মোহনবাগানের আক্রমণভাগ অসাধারণ। বিপক্ষের স্ট্রাইকারদের আটকানোর জন্য কী পরিকল্পনা করছেন? এসসি ইস্টবেঙ্গল কোচ জানালেন, ‘ওদের আক্রমণভাগ আইএসএল-এর অন্যতম সেরা। কিন্তু ওদের আটকাতে হবে। আমরা মাঝমাঠেই ওদের আটকে দেওয়ার পরিকল্পনা করছি। ওদের মিডফিল্ডারদের দৌড়তে দিলে হবে না। আমাদের রক্ষণে ওদের জায়গা দেওয়া চলবে না।’


ডার্বির আগে এসসি ইস্টবেঙ্গলে যোগ দিয়েছেন নতুন দুই বিদেশি মার্সেলা ও ফ্রান সোতা। ওঁদের কি ডার্বিতে শুরু থেকেই দেখা যাবে? মারিও সেই সম্ভাবনা নাকচ করে দিলেন। তিনি জানিয়ে দিলেন, ‘ফ্রান সোতা করোনা আক্রান্ত হয়েছিল। ও কোয়ারেন্টিনে ছিল। ও ডার্বির জন্য প্রস্তুতি শুরু করেছে। ও হয়তো কিছুক্ষণের জন্য খেলতে পারবে। কিন্তু শুরু থেকেই ওকে খেলানো যাবে না।’