কলকাতা: ৮ জুলাই আর পাঁচদিনের চেয়ে অনেকটা আলাদাভাবেই কাটে তাঁর। হবে না-ই বা কেন! ৮ জুলাই যে তাঁর জন্মদিন। ক্রিকেট কেরিয়ারে বাড়িতে কার্যত থাকাই হতো না এই দিনটায়। দেশের কোনও প্রান্তে বা বিদেশে ম্যাচ থাকত। অবসরের পর অবশ্য দিনটি বাড়িতে কাটাতেই পছন্দ করেন। বুধবার ৪৮ পূর্ণ করলেন। এ বছরের জন্মদিন তাঁর কাছে বেশ আলাদা। করোনা আবহে সকাল থেকে বীরেন রায় রোডের বাড়িতে চেনা ভিড়টা নেই। ভক্তদের আনা একের পর এক কেক হাসিমুখে কেটে যাওয়ার ব্যস্ততা নেই। রোজনামচাতেও খুব একটা বদল হয়নি। অফিসের কাজ সেরেছেন নিয়ম মতো। তারই ফাঁকে তিনি, ভারতীয় ক্রিকেট দলের প্রাক্তন অধিনায়ক তথা বোর্ড প্রেসিডেন্ট সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় মোবাইল ফোনে একান্ত সাক্ষাৎকার দিলেন এবিপি আনন্দ-কে।


প্রশ্ন: এ বছরের জন্মদিনটা ভীষণ আলাদা। বর্তমান করোনা পরিস্থিতি, রাজ্যের একাধিক জায়গায় নতুন করে লকডাউন ঘোষিত হয়েছে। কীভাবে উদযাপন করলেন?

সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়: জন্মদিনের কোনও সেলিব্রেশন হচ্ছে না। বেহালা অবশ্য কন্টেনমেন্ট জোন নয়। তবে কোনও ঝুঁকি না নেওয়াই উচিত। সকলকেই সতর্ক থাকতে হবে। সারাদিন বাড়িতেই থাকছি। অফিসের কাজ সারছি।

প্রশ্ন: অন্যান্য বছর এই দিনটিতে বাড়িতে বন্ধু, ভক্তদের জমায়েত লেগে থাকে। তবে এবার বীরেন রায় রোডের বাড়িতে সেই চেনা ভিড়টা নেই। অন্যরকম লাগছে না?

সৌরভ: তা একটু লাগছে। তবে কিছু উপায়ও নেই। করোনার প্রকোপ থেকে সুরক্ষিত থাকাটাই আমার ও সকলের কাছে অগ্রাধিকার পাওয়া উচিত। জন্মদিন তো প্রত্যেক বছর হবে।

প্রশ্ন: ক্রিকেট খেলার সময় বহু জন্মদিন কেটেছে বাইরে। কখনও দেশের অন্য শহরে, কখনও আবার বিদেশে। এবার বাড়িতে সময় কাটাতে পারছেন। ডোনাদি, সানা আছেন। সেটাই কি সেরা প্রাপ্তি?

সৌরভ: খেলার সময় এই দিনটি বাড়িতে থাকাই হতো না। খেলা ছাড়ার পর বাড়িতেই কাটাই। এবারও বাড়িতেই থাকতে পারছি। সানা আছে। ও খুব খুশি। সারাদিন আমাকে পাচ্ছে।

 

প্রশ্ন: ৪৮ বছর সম্পূর্ণ হল। অথচ আপনাকে দেখে মনে হয় বয়স কমছে। আগের চেয়েও যেন বেশি ফিট। এর রহস্যটা কী?

সৌরভ: এখনও বেশ অনেকক্ষণ ধরে ট্রেনিং করি নিয়মিত। লকডাউনেও জিমে প্রত্যেক দিন শরীরচর্চা করি। সাঁতার কাটি। খাওয়াদাওয়া নিয়ম মেনে করি। কড়া ডায়েট মেনে চলি। মিষ্টি, চিনি খাই না। ওজন কমিয়েছি কিছুটা। বয়স বাড়ছে। ফিট থাকাটা তাই ভীষণ জরুরি।

প্রশ্ন: এখনও পর্যন্ত জন্মদিনের সেরা অভিজ্ঞতা কী? কোন জন্মদিন স্মৃতিতে সবচেয়ে উজ্জ্বল?

সৌরভ: ১৯৯৬ সালের জন্মদিনের কথা প্রথমেই বলব। লর্ডসে টেস্ট অভিষেক হয়েছিল। সেঞ্চুরি করেছিলাম। ৮ জুলাই ট্রেন্ট ব্রিজে সিরিজের তৃতীয় টেস্ট চলছিল। সেই ম্যাচেও প্রথম ইনিংসে সেঞ্চুরি করেছিলাম। সতীর্থরা মিলে দারুণ সেলিব্রেশন হয়েছিল। আজীবন মনে থাকবে সেই জন্মদিন। পরে ২০০২ সালে ইংল্যান্ডে গিয়েছিলাম অধিনায়ক হিসাবে। ইংল্যান্ড ও শ্রীলঙ্কার সঙ্গে ত্রিদেশীয় ন্যাটওয়েস্ট ট্রফি খেলছিলাম। ইংল্যান্ডকে লর্ডসের ফাইনালে হারিয়ে চ্যাম্পিয়নও হয়েছিলাম। সেই সিরিজ চলাকালীন ৮ জুলাই পড়েছিল। সতীর্থদের সঙ্গে জন্মদিন পালন করেছিলাম। সেটাও স্মরণীয় হয়ে থাকবে।

প্রশ্ন: বাড়িতে জন্মদিন পালন কীভাবে হয়?

সৌরভ: কেক কাটি। মা পায়েস করে। এখন সানা বড় হয়ে গিয়েছে। বাড়িতেই রান্না-বান্না, খাওয়াদাওয়া হবে। ডোনার সঙ্গে মিলে সব পরিকল্পনা করছে সানাই।

প্রশ্ন: করোনা আবহে, পরে উমপুন বিপর্যয়ের পর আপনাকে অন্য ভূমিকায় দেখা গিয়েছে। দুঃস্থ মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন। ত্রাণ বিলি করেছেন। জন্মদিনে সেরকম কোনও পরিকল্পনা?

সৌরভ: বড় খারাপ সময়ের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছি সকলে। সাধ্যমতো মানুষের পাশে থাকার চেষ্টা করেছি। জন্মদিনে কিছু করছি না। সুযোগ পেলে পরে আবার চেষ্টা করব কিছু করার।



প্রশ্ন: বুধবার থেকে ক্রিকেট ফিরছে। ইংল্যান্ড-ওয়েস্ট ইন্ডিজ টেস্ট ম্যাচ নিয়ে আগ্রহ তুঙ্গে...

সৌরভ: করোনার আবহে ক্রিকেট শুরু হওয়াটা ভীষণ তাৎপর্যপূর্ণ। সবরকম সুরক্ষাবিধি মেনে খেলা করা গেলে ভাল। ম্যাচটির দিকে আমারও নজর রয়েছে।

প্রশ্ন: ক্রিকেটার, তারপর ক্রিকেট প্রশাসন, সিএবি থেকে বিসিসিআই – প্রত্যেক চ্যালেঞ্জের মুখেই দৃঢ়চেতা ছিলেন। বারবার প্রত্যাবর্তন ঘটিয়েছেন। প্রত্যেক ভূমিকায় এত প্রাণবন্ত থাকার রসায়ন কী?

সৌরভ: সব ক্ষেত্রেই নিজের ক্ষমতা ও দক্ষতা অনুযায়ী সেরাটা দিয়েছি। পরিশ্রম করেছি। ভূমিকা যাই হোক না কেন, নিজের একশো শতাংশ দেওয়াটাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।

প্রশ্ন: জন্মদিনের কোনও রেজোলিউশন?

সৌরভ: কোনও রেজোলিউশন নেই। করোনা তাড়াতাড়ি দূর হোক। তারপর রেজোলিউশন নিয়ে ভাবা যাবে। এই পরিস্থিতিটা বদলানো ভীষণ দরকার।

প্রশ্ন: ভক্তদের কী বলবেন? অতিমারী, লকডাউন মিলিয়ে সকলেই বেশ উদ্বিগ্ন...

সৌরভ: এটা মেডিক্যাল যুদ্ধ। সকলে সাবধানে থাকুন। সুস্থ থাকুন। কী হবে কেউ জানে না। এই লড়াইটা তো অন্য লড়াই। চিকিৎসক ও বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ মেনে চলুন।