কলকাতা: অভিষেক ম্যাচেই ঘণ্টায় ১৫৫.৮ কিলোমিটার গতিতে বল করে আইপিএলে হইচই ফেলে দিলেন লখনউ সুপার জায়ান্টসের পেসার ময়ঙ্ক যাদব। কলকাতা নাইট রাইডার্সের হয়ে ওপেন করার নেপথ্য কাহিনি শোনালেন সুনীল নারাইন। পাঞ্জাব কিংসকে ২১ রানে হারাল লখনউ সুপার জায়ান্টস। খেলার দুনিয়ার সারাদিন।


দিল্লি এক্সপ্রেস


লখনউ সুপার জায়ান্টসের অধিনায়ক নিকোলাস পুরান যখন পাঞ্জাব কিংস ইনিংসের (LSG vs PBKS) দশম ওভারে তাঁর হাতে বল তুলে দিলেন, ময়ঙ্ক যাদবের (Mayank Yadav) নাম কেউ শুনেছেন বলে জানা ছিল না।


যখন টানা চার ওভারে স্পেল শেষ করলেন, ময়ঙ্কের নামের পাশে জ্বলজ্বল করছে ৪-০-২৭-৩। যেটা স্কোরবোর্ডে লেখা থাকছে না, তা হল আইপিএল (IPL 2024) অভিষেকেই ব্যাটারদের মনে আতঙ্ক তৈরি করলেন ময়ঙ্ক। চলতি আইপিএলে সবচেয়ে দ্রুত গতির বলটিও বেরল ডানহাতি তরুণ ফাস্টবোলারের হাত থেকে। লখনউ সুপার জায়ান্টসের পেসারকে নিয়ে হইচই পড়ে গেল। সকলেই খোঁজ নিতে শুরু করে দিয়েছেন, কে এই ময়ঙ্ক?


শনিবার লখনউয়ের নবনির্মিত অটলবিহারি বাজপেয়ী স্টেডিয়ামে পাঞ্জাব কিংসের বিরুদ্ধে নেমেছে লখনউ সুপার জায়ান্টস। সেই ম্যাচেই অভিষেক হল ময়ঙ্কের। প্রথম বলটিই তিনি করেন ঘণ্টায় ১৪৭.১ কিলোমিটার গতিতে। হকচকিয়ে গিয়েছিলেন ইংল্যান্ডের তারকা জনি বেয়ারস্টোও। কাট করতে গিয়ে পরাস্ত হন।


পাঞ্জাবকে হারাল লখনউ


ঘরের মাঠে এবারের আইপিএলে (IPL 2024) নিজেদের প্রথম জয়ের খোঁজে নেমেছিল লখনউ সুপারজায়ান্টস (Lucknow Supergiants)। সমর্থকদের হতাশ করল না লখনউ শিবির। পাঞ্জাব কিংসকে (Punjab Kings) ২১ রানে হারিয়ে দিল তারা। আর এই জয়ের মুখ্য কারিগর হয়ে গেলেন ২১ বছরের এক নবাগত পেসার। যার আগুনে গতির সামনে কুপােকাত হল পাঞ্জাবের টপ অর্ডার। তিনি ময়ঙ্ক যাদব। নিজের প্রথম আইপিএল ম্য়াচ খেলতে নেমেছিলেন। আর নেমেই নিজের চার ওভারের স্পেলে মাত্র ২৭ রান খরচ করে তুলে নিলেন প্রতিপক্ষের গুরুত্বপূর্ণ ৩ উইকেট। ২০০ রান তাড়া করতে নেমে পাঞ্জাব কিংসের ইনিংস শেষ হয়ে যায় নির্ধারিত ২০ ওভারে ১৭৮/৫ স্কোরে। 


কীভাবে হয়ে গেলেন ওপেনার?


বল হাতে তিনি ভেল্কি দেখাতে পারেন। তাঁর কোন বল পড়ে যে ভিতরে আসবে, আর কোনটা বাইরে যাবে, ঠাহর করে উঠতে পারেন না তাবড় ব্যাটাররাও। যে কারণে তাঁকে বলা হয় বিস্ময় স্পিনার।


সেই সুনীল নারাইনকে (Sunil Narine) কিন্তু কলকাতা নাইট রাইডার্সের (KKR) জার্সিতে দেখা যায় দ্বৈত ভূমিকায়। বল হাতে প্রতিপক্ষের ত্রাস। ব্যাট হাতেও বিপক্ষ শিবিরের সব পরিকল্পনা ভেস্তে দিতে পারেন। যেমন দিয়েছেন শুক্রবার। বেঙ্গালুরুর এমন চিন্নাস্বামী স্টেডিয়ামে। যে মাঠ কেকেআরের পয়মন্ত মাঠ। 


বিরাট কোহলির (Virat Kohli) ব্যাটের ঝড়ও ম্লান হয়ে গিয়েছে ব্যাট হাতে নারাইনের দাপটে। ১৮৩ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে ২২ বলে ৪৭। ওপেনার নারাইনই ম্যাচের রিংটোন সেট করে দিয়ে যান। ফিল সল্টের সঙ্গে ৬.৩ ওভারে ৮৬ রান তুলে দেন ক্যারিবিয়ান তারকা। ওপেনিং জুটিই ম্যাচের রাশ কেকেআরের হাতে তুলে দেয়।


কীভাবে শুরু হল ওপেনিং? কখনও কি ব্যাটিংকে বোলিংয়ের মতোই গুরুত্ব দিয়েছেন? কেকেআরের ওয়েবসাইটে এক সাক্ষাৎকারে নারাইন বলেছিলেন, '২০১৭ সালে বিগ ব্যাশ লিগে আমি প্রথমবার ওপেন করি। পরের মরশুমে আইপিএলের সময় আমার কাছে জানতে চাওয়া হয়, ওপেন করতে তৈরি কি না। আমি কেকেআরকে জানাই, দলের যা প্রয়োজন, আমি করতে রাজি। দলের জয়ে অবদান রাখতে পারলে আমি খুশি হব বলে জানাই। তখন গম্ভীর আমার কাছে আসে আর বলে, কিচ্ছু পাল্টাতে যেও না। মাঠে নেমে আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে খেলো শুধু। ক্রিজে গিয়ে আমাদের ভাল শুরু দেওয়ার চেষ্টা করো। গম্ভীর বলে, আউট হওয়া নিয়ে ভেবো না। তুমি যেটা পারবে সেটাই করো আর মনে রেখো, তুমি যাই করবে, সেটায় দলের ভাল হবে। সেই ভিতের ওপর দাঁড়িয়ে আমরা বড় রান তোলার চেষ্টা করব।'


বিরাট উপহার


দারুণ ইনিংস খেলেও মাথা নীচু করে মাঠ ছাড়তে হয়েছে বিরাট কোহলিকে (Virat Kohli)। কারণ, তাঁর দল রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালোর (RCB) ঘরের মাঠে কলকাতা নাইট রাইডার্সের (KKR) কাছে হেরে গিয়েছে। তবু মাঠে ও মাঠের বাইরে এমন দুই দৃশ্য দেখা গেল, যা যারপরনাই খুশি করেছে ক্রিকেটপ্রেমীদের।


দৃশ্য এক, পুরনো বিবাদ মিটিয়ে কোলাকুলি করেছেন কোহলি ও গৌতম গম্ভীর (Kohli Hugs Gambhir)। যিনি এখন কলকাতা নাইট রাইডার্সের মেন্টর। 


দৃশ্য দুই, ম্যাচের পর কেকেআরের তারকা রিঙ্কু সিংহকে (Rinku Singh) নিজের ব্যাট উপহার দিয়েছেন কিংগ কোহলি। যে ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করেছে শাহরুখ খান-জুহি চাওলার দল।


তারপর থেকে আগুনে গতিতে প্রতিপক্ষ শিবিরে ধস নামালেন ময়ঙ্ক। তাঁর শিকারের তালিকায় বেয়ারস্টো, প্রভসিমরন সিংহ ও জিতেশ শর্মা। টানা ঘণ্টায় দেড়শো কিলোমিটার গতিতে বল করে গেলেন ময়ঙ্ক। তাঁর একটি বলের গতি ছিল ঘণ্টায় ১৫৫.৮ কিলোমিটার। সেটিই চলতি আইপিএলে দ্রুততম বল। রাজস্থান রয়্যালসের নান্দ্রে বার্গার ঘণ্টায় ১৫৩ কিলোমিটার গতিতে বল করেছেন। সেটিই ছিল এই আইপিএলের দ্রুততম বল। সেই রেকর্ড পেরিয়ে নতুন নজির গড়লেন ময়ঙ্ক। 


মোহনবাগানের পরীক্ষা


আন্তর্জাতিক ফুটবলের জন্য সপ্তাহ দুয়েকের অবকাশের পর মাঠে ফেরার পালা মোহনবাগান সুপার জায়ান্টের (Mohun Bagan Supergiant)। ঘরের মাঠে প্রতিপক্ষ চেন্নাইন এফসি, যারা অবকাশের আগেই হারিয়েছে লিগশিল্ডের আর এক দাবিদার ওডিশা এফসি-কে। লম্বা বিশ্রামের পর এ বার যদি তারা সবুজ-মেরুন বাহিনীকেও চাপে ফেলে দেয়, তা হলে তাদের লিগ শিল্ডের দৌড়ে বড়সড় ধাক্কা খেয়ে যেতে পারে কলকাতার দল।

কাজটা অবশ্য চেন্নাইনের পক্ষে খুব একটা সোজা হবে না। শুধু চেন্নাইন এফসি বলে নয়, লিগ পর্বে যে চারটি ম্যাচ বাকি রয়েছে তাদের, সেই চারটি ম্যাচে জেতাই এখন লক্ষ্য মোহনবাগান এসজি-র। দু’সপ্তাহের ছুটি যেমন চুটিয়ে উপভোগ করেছেন দলের বিদেশীরা, তেমনই অনুশীলনও করেছেন জমিয়ে। দলের আটজন খেলোয়াড় ভারতীয় শিবিরে ছিলেন। তাঁরাও ছিলেন অনুশীলন ও ম্যাচের মধ্যে। ফলে মাঝে অনেকগুলো দিন গেলেও মোহনবাগানের ছন্দে তার প্রভাব পড়বে বলে মনে হয় না। কোচ আন্তোনিও লোপেজ হাবাসও একই কথা বলেছেন।

নতুন বছরে এ পর্যন্ত যে আটটি ম্যাচ খেলেছে মোহনবাগান, তার মধ্যে চারটিতে ক্লিন শিট রাখতে পেরেছে তারা। তার আগে যে দশটি ম্যাচ খেলেছিল তারা, তার মধ্যে মাত্র দু’টিতে কোনও গোল খায়নি। বোঝাই যাচ্ছে ২০২৪-এ তাদের রক্ষণের পারফরম্যান্স আগের চেয়ে ক্রমশ ধারালো হয়ে উঠেছে। তাছাড়া হাবাসের দলের গোলকিপার বিশাল কয়েথ সব মিলিয়ে চলতি লিগে ৩৬টি সেভ করেছেন, তাঁর সেভ পার্সেন্টেজ ৬১%।