কলকাতা: বিশ্বকাপে পাকিস্তানকে ৮ উইকেটে হারাল আফগানিস্তান (Afg vs Pak)। ৭৭ বছর বয়সে প্রয়াত কিংবদন্তি বিষাণ সিংহ বেদী। মঙ্গলবার মুখোমুখি বাংলাদেশ-দক্ষিণ আফ্রিকা। খেলার দুনিয়ার সারাদিন।


অঘটন আফগানিস্তানের


বিশ্বকাপে (ODI World Cup) ফের অঘটন। নেপথ্যে, ফের আফগানিস্তান। বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ডকে হারিয়ে যারা ক্রিকেটবিশ্বকে নাড়িয়ে দিয়েছিল। এবার বধ পাকিস্তান। তাও ৮ উইকেটে। কার্যত একপেশেভাবে। এবারের বিশ্বকাপে 'জায়ান্ট কিলার' তকমাটাও নিজেদের জার্সির পিঠে সেঁটে নিয়েছেন হাশমাতুল্লাহ শাহিদিরা।


ম্যাচের প্রথমার্ধের ছবিটা কিন্তু বেশ আলাদা ছিল। টস জিতে প্রথমে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন বাবর আজ়ম। যিনি নিজে এই ম্যাচে রানের মধ্যে ফিরলেন। আর এমন এক ম্যাচে ছন্দে ফিরলেন বাবর, যা পাকিস্তানের ক্রিকেটে কলঙ্ক বয়ে আনল।


চেন্নাইয়ের এম এ চিদম্বরম স্টেডিয়ামে আফগানিস্তানের (PAK vs AFG) বিরুদ্ধে তিন নম্বরে নেমে ৭৪ রান করলেন পাক অধিনায়ক। হাফসেঞ্চুরি ওপেনার আবদুল্লা শফিকেরও। ৫৮ রান করলেন তিনি। শেষ দিকে চালিয়ে খেলে রান পেলেন শাদাব খান ও ইফতিকার আমেদও। ৩৮ বলে ৪০ রান করলেন শাদাব। ২৭ বলে ৪০ রান ইফতিকার আমেদের। দুজনকেই শেষ ওভারে ফেরান নবীন উল হক। আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে প্রথমে ব্যাট করে পাকিস্তান তোলে ২৮২/৭।


লক্ষ্য ছিল ২৮৩ রানের। যে লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে আফগানিস্তানের ওপেনাররাই তুলে দিলেন ১৩০ রান। গত আইপিএলে কলকাতা নাইট রাইডার্সের জার্সিতে দেখা গিয়েছিল রহমানুল্লাহ গুরবাজ়কে। পাক বোলিংকে কোণঠাসা করে ফেলার কাজটা শুরু করলেন তিনিই। ৫৩ বলে ৬৫ রান করলেন। সঙ্গী ওপেনার ইব্রাহিম জাদ্রান তুলনামূলকভাবে ছিলেন সংযত। কিন্তু লক্ষ্যে অবিচল। ১১৩ বলে ৮৭ রান করেন তিনি। ওপেনাররাই জয়ের ভিত গড়ে দেন। যে ভিতের ওপর দাঁড়িয়ে ম্যাচ বার করে আনেন রহমত শাহ ও আফগান অধিনায়ক হাশমাতুল্লাহ শাহিদি। ৮৪ বলে ৭৭ রানে অপরাজিত ছিলেন রহমত। হাশমাতুল্লাহ ৪৫ বলে ৪৮ রান করে ক্রিজে ছিলেন।  ১ ওভার বাকি থাকতে মাত্র ২ উইকেট হারিয়ে লক্ষ্যপূরণ আফগানিস্তানের।


প্রয়াত বেদী


সোমবার ৭৭ বছর বয়সে জীবনাবসান ঘটল কিংবদন্তি বিষাণ সিংহ বেদীর (Bishan Singh Bedi)। ১৯৬৭ সাল থেকে ১৯৭৯ সালের মধ্যে ভারতের হয়ে ৬৭টি টেস্ট ম্যাচ খেলে ২৬৬টি উইকেট নিয়েছেন তিনি। ১০টি ওয়ান ডে ম্যাচে সাতটি উইকেট নেওয়ারও কৃতিত্ব রয়েছে তাঁর দখলে। ভারতের প্রথম ওয়ান ডে ম্যাচ জয়ে বিষাণ বেদীর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল। তবে ৭৭-এই থামল তাঁর জীবন। 


এরাপল্লি প্রসন্ন, বিএস চন্দ্রশেখর এবং এস বেঙ্কটরাঘবনের স্পিনত্রয়ী ভারতীয় ক্রিকেটে (Indian Cricket Team) চিরস্মরণীয় হয়ে আছে। ১৯৭০ সালে পদ্মশ্রী জেতেন বেদি। তিনি ভারতীয় দলকে ২২টি টেস্টে নেতৃত্বও দিয়েছেন। ১৯৭৫ সালে ইস্ট আফ্রিকার বিরুদ্ধে ভারতের প্রথম ওয়ান ডে ম্যাচে ভারতীয় একাদশেরও অঙ্গ ছিলেন তিনি।


রেকর্ড দর্শক


তাঁকে বলা হয় চেজ়মাস্টার। রান তাড়া করতে নেমে তিনি যেন ভিন্ন মূর্তি ধরেন। বাংলাদেশের বিরুদ্ধে দুরন্ত সেঞ্চুরি করেছিলেন। নিউজ়িল্যান্ডের (ODI World Cup) বিরুদ্ধে ৯৫ রান করে ম্যাচ জিতিয়েছেন (Ind vs NZ)। শেষ বলে ছক্কা মেরে দলকে জেতানো ও নিজের সেঞ্চুরি পূরণ করার চেষ্টা করেছিলেন। তবে বাউন্ডারি লাইনে ধরা পড়েন।


আর শৈলশহর ধর্মশালায় বিরাট কোহলির (Virat Kohli) ব্যাটের শাসন নতুন এক রেকর্ড গড়ল। ভারত-নিউজ়িল্যান্ড ম্য়াচ যাঁরা মাঠে বসে দেখার সুযোগ পাননি, চোখ রেখেছিলেন টিভির পর্দায়। আর যাঁরা টেলিভশের সামনেও বসার সুযোগ পাননি, অনলাইনে ডিজ়নি প্লাস হটস্টার অ্যাপে ম্যাচ দেখেছেন। অনলাইন দর্শকসংখ্যায় রেকর্ড গড়েছে ভারত-নিউজ়িল্যান্ড ম্যাচ।


ডিজ়নি প্লাস হটস্টার অ্যাপের দেওয়া তথ্য বলছে, রবিবার ভারত-নিউজিল্যান্ড ম্যাচ একসঙ্গে সর্বোচ্চ ৪ কোটি ৩০ লক্ষ মানুষ দেখেছেন। যা একটি রেকর্ড। এর আগে চলতি বিশ্বকাপে ভারত বনাম পাকিস্তান ম্যাচে একটি নির্দিষ্ট সময়ে একসঙ্গে সবচেয়ে বেশি মানুষ দেখার রেকর্ড হয়েছিল। সেই ম্যাচ ডিজ়নি প্লাস হটস্টার অ্যাপে একসঙ্গে একই সময়ে সর্বোচ্চ সাড়ে তিন কোটি মানুষ দেখেছিলেন। তবে ভারত-নিউজ়িল্যান্ড ম্যাচ সেই রেকর্ডও ছাপিয়ে গেল।


পরিণত শামি


১০ ওভার ৫৪ রান পাঁচ উইকেট এবং একাধিক রেকর্ড। মহম্মদ শামি (Mohammed Shami) বিশ্বকাপের (ODI World Cup 2023) প্রথম চার ম্যাচে সুযোগ না পেলেও, নিউজ়িল্যান্ডের বিরুদ্ধে (IND vs NZ) ম্যাচেই প্রথমবার সুযোগ পান। আর প্রথম সুযোগেই ধামাকা। তারকা ভারতীয় বোলারের দলে সুযোগ না পাওয়া নিয়ে বারংবার একাধিক মহলে প্রশ্ন উঠেছে। তবে শামি সুযোগ পেয়েই নিজের দক্ষতা প্রমাণ করে দিলেন। ম্যাচ শেষে সাংবাদিক সম্মেলনে তারকা বোলারের কথায় তিনি যে টিমম্যান তা স্পষ্ট ফুটে উঠে।


দলের স্বার্থে একাদশের বাইরে থাকলে অত্যাধিক পরিমানে হতাশ না হওয়ারই বার্তা দেন শামি। অতীতে এই একই জবাব বহুবার দিয়েছেন তারকা বোলার। স্বপ্নের বোলিংয়ের পরেও তাঁর মুখে একই সুর। দলের নাগাড়ে জয়ে তাঁকে একাদশের বাইরে থাকতে হলেও সেই নিয়ে ভেঙে পড়ার মানে হয় না বলে শামির মত। তিনি বলেন, 'আমি তো এতদিন বেঞ্চে বসে খেলা দেখছিলাম শুধু। আমি তো তখনই পারফর্ম করতে পারব, যখন আমায় সুযোগ দেওয়া হবে। তবে দল ভাল পারফর্ম করলে এবং সাজঘরের পরিবেশটা ইতিবাচক হলে বাইরে বসে থাকলেও, ভেঙে পড়ার মতো কিছুই থাকে না। কারণ আমরা সকলেই দলের অঙ্গ, বিশ্বকাপ দলের অঙ্গ। তাই আমার ব্যক্তিগত মত যে সকলের একে অপরের সাফল্য উপভোগ করা উচিত।'


শাকিবদের অগ্নিপরীক্ষা


আগের ম্য়াচে ৩৯৯ রানের বিশাল স্কোর করে একপেশেভাবে ম্যাচ জেতা দলের মুখোমুখি কেই বা হতে চায়? তাও সেই মাঠেই, যেখানে তাণ্ডব চালিয়েছিলেন প্রতিপক্ষ শিবিরের যোদ্ধারা। বাংলাদেশের সামনে মঙ্গলবার তাই অগ্নিপরীক্ষা (Ban vs SA)। মুম্বইয়ের ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামে তাদের সামনে দক্ষিণ আফ্রিকা। শনিবার যারা গতবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন (ODI World Cup) ইংল্য়ান্ডকে এই মাঠেই ২২৯ রানে বিধ্বস্ত করেছে।


চার ম্যাচে তিন জয়। পয়েন্ট টেবিলের তিন নম্বরে রয়েছেন প্রোটিয়ারা। সবচেয়ে বড় কথা, নেদারল্য়ান্ডসের বিরুদ্ধে অঘটনের আগে পর্যন্ত প্রত্যেক ম্যাচে বিরাট ব্যবধানে জিতেছে দক্ষিণ আফ্রিকা। শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে ১০২ রানে। অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে ১৩৪ রানে জয়। এবং ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে ২২৯ রানে জয়। টুর্নামেন্টের সেরা রান রেট এখন তেম্বা বাভুমাদের দখলে।


চলতি বিশ্বকাপে প্রথমে ব্যাট করা সব ম্যাচে তিনশোর বেশি রান তুলেছে দক্ষিণ আফ্রিকা। টপ অর্ডারে কুইন্টন ডি'কক দুরন্ত ছন্দে। হেনরিখ ক্লাসেন ও মার্কো জানসেন সব বোলিংকে ছারখার করে দিচ্ছেন। কাগিসো রাবাডা, লুনগি এনগিডি, মার্কো জানসেন ও জেরাল্ড কোয়েৎজে সমৃদ্ধ পেস বোলিং বিভাগ যে কোনও ব্য়াটিংকে চাপে ফেলার জন্য যথেষ্ট। সঙ্গে কেশব মহারাজের বাঁহাতি স্পিন। একমাত্র ডাচদের বিরুদ্ধে প্রথমে ফিল্ডিং করে ভরাডুবি হয়েছিল।