কলকাতা: তিনবার জাতীয় লিগ, ২০০২ সালে পাঁচটা টুর্নামেন্ট খেলে পাঁচটাতেই চ্যাম্পিয়ন, ২০০৩-এ আশিয়ান কাপ। কলকাতা লিগ, আইএফএ শিল্ড, ডুরান্ড কাপ তো আছেই। ঘানার ডিফেন্ডার সুলে মুসার সময় ইস্টবেঙ্গল দল এরকমই সাফল্য পেত। মাঠে নেমে লড়াই করতেন মুসা, জ্যাকসনরা। ১৯৯৯-২০০০ মরসুমের জাতীয় লিগ চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল মোহনবাগান। কিন্তু বড় ম্যাচের ফিরতি লেগে ব্যারেটো-ইগর-স্টিফেন সমৃদ্ধ মোহনবাগানকে ৩-১ গোলে উড়িয়ে দিয়েছিল ইস্টবেঙ্গল। সেই ইস্টবেঙ্গলের এমন হতাশাজনক পারফরম্যান্স মানতে পারছেন না আশিয়ান কাপের অধিনায়ক মুসা। ঘানা থেকে ফোনে হতাশা ও বেদনা প্রকাশ করলেন তিনি।


এখনও ইস্টবেঙ্গলের সব খবরই রাখেন। দল যে আইএসএল-এ লিগ টেবলে সবার পিছনে, ক্লাবের কর্মকর্তাদের সঙ্গে ইনভেস্টদের বিরোধ, সেসব জানেন তিনি। ইস্টবেঙ্গলের বর্তমান অবস্থার জন্য কর্তা ও ইনভেস্টর, দু’পক্ষকেই দুষছেন মুসা। তাঁর সাফ কথা, ‘ইস্টবেঙ্গলের এই পারফরম্যান্স আমার কাছে বিস্ময়কর। আমি এটা কিছুতেই মানতে পারছি না। সাফল্য পেতে গেলে দলে ভাল খেলোয়াড় দরকার। রাস্তা থেকে যে কাউকে ধরে এনে ইস্টবেঙ্গলে খেলিয়ে দেওয়া যায় না। যে ক্লাবটা চ্যাম্পিয়ন হওয়ার জন্য খেলতে নামে, তারা লিগ টেবলে তলানিতে থাকবে কেন? ইনভেস্টরদের সঙ্গে কর্মকর্তাদের যত ঝামেলাই থাক না কেন, দলটা তো ভাল করতে হবে। ইনভেস্টর, ক্লাব কর্তা আর ফুটবলাররা যদি ঐক্যবদ্ধ না হতে পারে, তাহলে সাফল্য পাওয়া সম্ভব নয়। সমর্থকরা সবসময়ই দলের পাশে আছে, থাকবে। ওরা যাতে খুশি থাকতে পারে, সেটা নিশ্চিত করার দায়িত্ব খেলোয়াড়দের। ওরা যদি চাপ নিয়ে খেলার জন্য মানসিকভাবে তৈরি না থাকে, তাহলে ইস্টবেঙ্গলের মতো দলে খেলার মতো যোগ্যতা নেই।’


তিনি নিজে যখন খেলতেন, সেই সময় ইস্টবেঙ্গলের এত সাফল্য কীভাবে এসেছিল? মুসা বললেন, ‘আমাদের সময় সুভাষ ভৌমিকের মতো একজন ভাল কোচ ছিলেন। কর্মকর্তারাও সবসময় আমাদের পাশে থাকতেন। আমরা যা চাইতাম সেটাই পেতাম। আশিয়ান কাপের আগে আমাদের একমাস পাঁচতারা হোটেলে রাখা হয়েছিল। সেবার দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে ফিজিক্যাল ট্রেনার কেভিন জ্যাকসনকে আনা হয়েছিল। আমরা ফুটবলাররাও ঐক্যবদ্ধ ছিলাম। মাঠের বাইরে যা সমস্যাই থাক না কেন, খেলতে নামলে সবাই দলের জন্য লড়াই করতাম। সিনিয়র-জুনিয়র বলে আলাদা কিছু ছিল না। সবাই একে অপরের পাশে থাকতাম। তার ফলেই সাফল্য পেতাম। এখন ইস্টবেঙ্গলে এই ব্যাপারটাই নেই। ক্লাব, ইনভেস্টর আর দল, তিনটে আলাদা। এখন ইস্টবেঙ্গলের ফুটবলাররা কর্মকর্তাদের চেনে না। কর্মকর্তারাও বোধহয় বেশিরভাগ ফুটবলারকেই চেনেন না। এভাবে সাফল্য পাওয়া সম্ভব নয়।’


মুসা আরও বললেন, ‘সাফল্য পেতে গেলে দলে অন্তত এমন তিনজন ফুটবলার দরকার, যারা একক দক্ষতায় যে কোনও সময় ম্যাচের রং বদলে দিতে পারে। একজন ডিফেন্ডার, একজন মিডফিল্ডার আর একজন স্ট্রাইকারকে এরকম হতে হবে। আমাদের সময় ইস্টবেঙ্গলে গোলকিপার ছিল সন্দীপ নন্দী, ডিফেন্সে জ্যাকসন, এম সুরেশ, দীপক মণ্ডল, মহেশ গাউলি, মিডফিল্ডে ওপোকু, ষষ্ঠী দুলে, দেবজিৎ ঘোষ, দীপঙ্কর রায়, কুলুথুঙ্গন, মামা (টুলুঙ্গা), আলভিটো ডি’কুনহা, স্ট্রাইকার মাইক ওকোরো, ভাইচুং ভুটিয়া, জুনিয়ররা ছিল। বর্তমান ইস্টবেঙ্গল দলে এরকম একজনও নেই।’


গ্যালারি থেকে সমর্থকদের মুসা-মুসা চিৎকার এখনও আবেগতাড়িত করে তোলে এই ঘানাইয়ান ডিফেন্ডারকে। তিনি জানালেন, ‘এই অনুভূতি বলে বোঝাতে পারব না। সমর্থকরা যখন মুসা-মুসা চিৎকার করত, তখন শুধু আমি না, মাঠে থাকা বাকি ১০ জন, এমনকী রিজার্ভ বেঞ্চে যারা থাকত তারাও উত্তেজিত হয়ে উঠত। সবাই ভাবত, এবার কিছু একটা হতে চলেছে। বিপক্ষ দলও ভয় পেয়ে যেত।’


আসিয়ান কাপের সময় মুসার গলায় ‘কুছ কুছ হোতা হ্যায়’ গান জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিল। সে কথা আজও মনে রেখেছেন লাল-হলুদের প্রাক্তন অধিনায়ক। পুরনো দলের এই হাল দেখে তিনিও সমর্থকদের মতোই কষ্ট পাচ্ছেন। ঘানায় এখন কোচিং করাচ্ছেন। জানালেন, ভবিষ্যতে ইস্টবেঙ্গলের কোচ হতে চান। ১৯৯৮ সালে মুসা-জ্যাকসন-ওপোকু এসে চিমাকে আটকে দিয়েছিলেন। আবার সাফল্য পেয়েছিল ইস্টবেঙ্গল। এবার কি কোচ মুসার হাত ধরে আবার সাফল্য আসবে? উত্তর লুকিয়ে ভবিষ্যতে।