কলকাতা: সুপার সানডে। বিশ্ব ফুটবলের ইতিহাসে এরকম দিন কমই এসেছে। রবিবার ভারতীয় সময় ভোর সাড়ে পাঁচটায় কোপা আমেরিকা ফাইনালে নেমার দ্য সিলভা স্যান্টোস জুনিয়রের ব্রাজ়িলের মুখোমুখি হচ্ছে লিওনেল মেসির আর্জেন্তিনা। আর একই দিনে রাত সাড়ে বারোটায় ইউরো কাপের ফাইনালে ইতালির মুখোমুখি ইংল্যান্ড। ফুটবল বিশ্বের দুই সেরা টুর্নামেন্ট ঘিরে ভক্তদের উন্মাদনার শেষ নেই। কোপা ফাইনালে কারা এগিয়ে, ইউরোয় ফেভারিট কে, আর্জেন্তিনার জার্সিতে মেসির ট্রফি খরা কাটবে? দুই হাইভোল্টেজ় ফাইনালের আগে এবিপি লাইভ-কে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে বিশ্লেষণ করলেন ভারতীয় ফুটবল দলের অধিনায়ক সুনীল ছেত্রী


প্রশ্ন: ফুটবলপ্রেমীদের জন্য এত রোমাঞ্চকর রবিবার খুব কমই এসেছে। যেদিন ভারতীয় সময় ভোরে কোপা আমেরিকা ফাইনালে ব্রাজ়িলের প্রতিপক্ষ আর্জেন্তিনা। আর রাত সাড়ে বারোটায় ইউরো কাপের ফাইনালে মুখোমুখি ইতালি-ইংল্যান্ড। কী বলবেন, ফুটবলের সুপার সানডে?


সুনীল ছেত্রী: সত্যিই তাই। দুটো দুর্দান্ত ম্যাচ অপেক্ষা করে রয়েছে। দুটো টুর্নামেন্টেই যে দুই দল সবচেয়ে ভাল ফুটবল খেলেছে, তারাই ফাইনালে পৌঁছেছে। ইউরো কাপের কথা ধরুন। ইংল্যান্ড তো সমালোচনা করার মতো কোনও জায়গাই দেয়নি। একবার মনে হয়েছিল যে, জার্মানির কাছে হয়তো ধাক্কা খেতে পারে। কিন্তু জার্মানির বিরুদ্ধে প্রি-কোয়ার্টার ফাইনালে অসাধারণ ফুটবল খেলেছিল ইংল্যান্ড। অন্যদিকে স্পেনের বিরুদ্ধে ম্যাচটি বাদ দিলে সব ম্যাচেই দাপট দেখিয়েছে ইতালি। দারুণ দুটি ফাইনাল দেখার জন্য অপেক্ষা করে রয়েছি সকলে। ফুটবলপ্রেমী হিসাবে দুর্দান্ত একটা দিনের অপেক্ষায় রয়েছি আমি নিজেও।


প্রশ্ন: গত বিশ্বকাপের যোগ্যতা অর্জনে ব্য়র্থ হয়েছিল ইতালি। দেশে সমালোচনার ঝড় বয়ে গিয়েছিল। কোচ রবের্তো মানচিনির প্রশিক্ষণে অবশ্য দুর্দান্ত ফুটবল উপহার দিচ্ছে ইতালি। বিশ্বকাপে না খেলতে পারার যন্ত্রণা কি ওদের মধ্যে সকলকে ভুল প্রমাণ করার জন্য বাড়তি তাগিদ হিসাবে কাজ করছে?


সুনীল: প্রমাণ তো ওরা ইতিমধ্যেই করে দিয়েছে। তার আগের পাঁচ বছর ধরে ওরা ভাল খেলতে পারছিল না। কিন্তু এখন দুরন্ত ফুটবল উপহার দিচ্ছে। তিরিশের বেশি ম্যাচে হারেনি। ফুটবলের এই পর্যায়ে টানা এতগুলি ম্যাচ অপরাজিত থাকা দুর্দান্ত ব্যাপার। ওদের প্রমাণ করার আর কিছু বাকি নেই। ইউরো কাপের প্রথম ম্যাচ থেকে ওরা দাপট দেখাচ্ছে। ইতালি দলটি কাটাছেঁড়া করতে বসলে দেখা যাবে, ওদের গোলকিপার বিশ্বের অন্যতম সেরা, রক্ষণ জমাট, আক্রমণ ভাগ অসাধারণ। সবচেয়ে বড় কথা, বলের দখল একবার হারানোর পর সেটি ফিরে পেতে দলের সকলে মিলে ঝাঁপাচ্ছে। দারুণ ঐক্যবদ্ধ দল। আমি নিশ্চিত ফাইনাল জিতে দেশবাসীকে ট্রফি উপহার দিতে ওরা মরিয়া থাকবে। আবারও বলছি, ওরা সকলের কাছে নিজেদের দক্ষতা প্রমাণ করে দিয়েছে। ৩৩ ম্যাচ অপরাজিত থাকা অসাধারণ কৃতিত্ব।


প্রশ্ন: ইংল্যান্ড ঘরের মাঠে খেলছে। এবং ইউরো কাপে প্রথম ফাইনাল খেলছে। এটা কি হ্যারি কেন-দের ওপর কোনও মনস্তাত্ত্বিক চাপ তৈরি করতে পারে?


সুনীল: এটা দুরকমই প্রভাব ফেলতে পারে। এক, ওদের মনে হতে পারে ঘরের মাঠে খেলছি। দর্শক সমর্থন ওদের সঙ্গে থাকবে। সেটা ওরা উপভোগ করতে পারে। আবার উল্টোটাও হতে পারে। মানে ওদের মনের মধ্যে এই ভাবনা কাজ করতে পারে যে, ভুল না হয়ে যায়। ঘরের মাঠের দর্শকদের সামনে হারতে না হয়। ফুটবলাররা কীভাবে সেই চাপ নেবে, সেটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। তবে ইউরো কাপে ৬টি ম্যাচের মধ্যে চারটি ম্যাচ ঘরের মাঠেই খেলেছে ওরা। আর সেই প্রত্যেক ম্যাচেই পরিণতিবোধ দেখিয়েছে। কোনও স্নায়ুর চাপে ভোগার ব্যাপার ছিল না। আমার মনে হয় না ঘরের মাঠে খেলার কোনও নেতিবাচক চাপ ওদের ওপর পড়বে।


প্রশ্ন: কোপা আমেরিকা ফাইনালে মুখোমুখি ব্রাজ়িল ও আর্জেন্তিনা। ফুটবলবিশ্বে সকলে হয়তো এরকম একটি ফাইনাল দেখার জন্য মুখিয়ে থাকবে। আপনার বাজি কে?


সুনীল: সত্যি কথা বলতে কী, কোপা আমেরিকার ম্যাচ সরাসরি দেখা হচ্ছে না। ইউরো কাপের ধারাভাষ্য দেওয়ার কাজ থাকছে এবং অনেক রাত পর্যন্ত জেগে থাকতে হচ্ছে। তারপর ভোরে উঠে কোপার ম্যাচের সরাসরি সম্প্রচার দেখা হচ্ছে না। তবে পরে রিপ্লে দেখছি। ব্রাজ়িল ও আর্জেন্তিনা, দুই দলই ভাল ফুটবল খেলেছে। মেসি দুর্দান্ত ফর্মে রয়েছে। আমি ওর ফুটবলের বড় ভক্ত। তবে খুব বেশি ম্যাচ দেখিনি বলে পূর্বাভাস করতে পারব না। অবশ্য নিরপেক্ষভাবে বলতে পারি, যে কোনও ফুটবলপ্রেমীর স্বপ্ন থাকে ব্রাজ়িল বনাম আর্জেন্তিনা ফাইনাল দেখার। আমিও ভোরে উঠে ফাইনাল ম্যাচটা দেখব।



প্রশ্ন: কোপা ফাইনালে আলোচনার কেন্দ্রে সেই লিওনেল মেসি। ক্লাবের জার্সিতে বিশ্ব ফুটবলের সমস্ত ট্রফি জিতেছেন। তবে আর্জেন্তিনার হয়ে বড় কোনও ট্রফি নেই। ফাইনালে উঠে বারবার হারতে হয়েছে। কোপা ফাইনালে কি সেই ব্যাপারটা মেসির ওপর কোনও প্রভাব ফেলবে?


সুনীল: আমি এই প্রশ্নটা কেন ওঠে কোনওদিনও বুঝে উঠতে পারিনি। বার্সেলোনা হোক বা আর্জেন্তিনা, মেসি তো একই ফুটবল খেলে। ও তো কোনওদিন এরকম ভাবতে পারে না যে, আমি ক্লাবের হয়ে ভাল খেলব আর দেশের জন্য খেলব না। চ্যাম্পিয়ন হতে পারাটা দলের ওপর নির্ভর করে। বার্সেলোনা দলটা এত শক্তিশালী যে, মেসি সব ট্রফি জিতেছে। আর্জেন্তিনার জার্সিতে খারাপ কোথায় খেলেছে? বিশ্বকাপের ফাইনালে উঠে জার্মানির কাছে হেরেছে। কোপা ফাইনাল খেলেছে। আবার একটা ফাইনাল। হতে পারে ও হয়তো একটা ম্যাচে ভাল খেলতে পারেনি। সেই কারণে বলে দেওয়া যে, মেসি খেলতে পারেনি বা পারে না! এটা অর্থহীন। দেশের হয়ে ৭৬টি গোল। বার্সেলোনার জার্সিতে সাতশোর বেশি গোল। অনবদ্য রেকর্ড। হতে পারে কারও হয়তো ভাল লাগে না। তা বলে মেসি ভাল প্লেয়ার নয়! ক্লাব হোক বা দেশ, ও বিশ্বের সেরা ফুটবলার। এরকম ফুটবলার দেখা যায় না। আমি তো কোনওদিন দেখিনি। জানি না মেসির মাপের ফুটবলার আবার কবে দেখা যাবে। তাই ক্লাবের হয়ে খেলে আর দেশের হয়ে খেলতে পারে না, এই সমালোচনা অনুচিত। দেশের হয়ে ৭৬টি গোল। অসাধারণ।


প্রশ্ন: কোপা ফাইনালে মেসি না নেমার?


সুনীল: মেসি, নেমার...। নেমার ভাল। তবে আমার কাছে সব সময় সেরা মেসিই।