কলকাতা : প্রয়াত ময়দানের ‘শিল্পী’ ফুটবলার সুরজিত্‍ সেনগুপ্ত । প্রাণের বন্ধুর প্রয়াণে কান্নায় ভেঙে পড়লেন প্রাক্তন ফুটবলার প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায়।  


তিনি বলেন, "সুরজিৎ আমার প্রাণের বন্ধু। আমরা দুই ভাই ছিলাম। আমাকে গোপাল বলত ডাক নামে, আমি ওকে সুরজিৎ বলতাম। ভাবতে পারছি না, সুরজিৎ নেই। এমন খেলত, তুলনাহীন একদম। স্টার প্লেয়ার। ওর চেয়ে বড় খেলোয়াড় নেই। পিকে বন্দ্যোপাধ্যায়ের পর সুরজিৎ ছাড়া আর কেউ নয়। আর কী শিল্পী। যেরকম পড়াশোনা, তেমন খেলা। তেমন সভ্য লোক, তেমন ভালবাসা। গোয়ায় গিয়েছিলাম ভোটের জন্য। ওখান থেকে শুনলাম, অরূপ বিশ্বাস বলল ভাল আছে। বললাম, ঠিক আছে। এই মানুষটা চলে যাবে এই বয়সে এটা মানা যায় ? কোনও চাহিদা ছিল না। কোনও দিন বলেনি আমায় এই দাও। দিনের পর দিন একসঙ্গে খেলেছি আমরা। একসময় ইস্টবেঙ্গলের ক্যাপ্টেন ছিল, আমি মোহনবাগানের ক্যাপ্টেন ছিলাম। দুজনে ব্যাঙ্ক থেকে একসঙ্গে স্কুটারে এলাম। ও চলে গেল ইস্টবেঙ্গলে, আমি চলে গেলাম মোহনবাগানে। মাঠে হ্যান্ডশেক করব যখন হাসছে। বলছে, গোপাল বেস্ট অফ লাক। ইস্টবেঙ্গল হেরে গেল শ্যাম থাপার গোলে। আমি ক্যাপ্টেন। কিন্তু তাকে হাসতে দিল না। কেন প্রসূনের সাথে হাসছ ?


খেলোড়ায়ের সুরজিতের উচ্ছ্বসিত প্রশংসাও করলেন প্রসূন। বললেন, ওর মতো প্লেয়ার হবে ন। পিকে বন্দ্যোপাধ্যায়ের পর রাইট-আউট যদি দেখে থাকি ভারতে, একমাত্র সুরজিৎ। এত বড় মন। কারও অভাব থাকলে সাহায্য করত। কি না করেছে। ভাবা যায় না। সুরজিতের মতো লোক হয় না। কোরিয়ার সাথে খেলায় এমন একটা আউটসাইড করে গোল করল ভাবা যায় না। আমি বলছি, ওর মূল্যায়ন হয়নি। ভারতে ফুটবলারদের মূল্যান হয় না। কী প্লেয়ার। বিশ্বমানের প্লেয়ার ছিল। এই বয়সে সুরজিৎ গেল কী করে ? যখন এমপি হয় আমাকে ফোন করে। বলে, গোপাল এমপি হয়েছ। ভাল করে কাজ করতে হবে। সবাইকে নিয়ে করতে হবে। ও চলে গেছে ভাবতে পারছি না। আমার জীবনে আর ওকে দেখা হবে না। ওর মুখ দেখতে পারব না। দুর্ভাগ্য আমার।"


কোভিডে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন সুরজিৎ সেনগুপ্ত। ২৩ জানুয়ারি থেকে ভর্তি ছিলেন হাসপাতালে। ১৯৬৮-তে ময়দানে পা সুরজিতের। ১৯৭২-এ শৈলেন মান্নার হাত ধরে মোহনবাগানে সই। ১৯৭৪ থেকে ১৯৭৯ পর্যন্ত খেলেন ইস্টবেঙ্গলে। ’৮০ সালে ফের আসেন মোহনবাগানে। ১৯৭৮-এ সুরজিত্‍-এর অধিনায়কত্বে ডুরান্ড জয় ইস্টবেঙ্গলের। ’৭৫-এর শিল্ড ফাইনালে প্রথম গোল সুরজিৎ সেনগুপ্তর। সেই ম্যাচে ৫ গোলে মোহনবাগানকে হারায় ইস্টবেঙ্গল। ভারতীয় জাতীয় ফুটবল দলের নিয়মিত সদস্য ছিলেন সুরজিত্‍।


গল্ফ গ্রিনের উদয় সদনে সন্ধে ৭-৮ পর্যন্ত রাখা থাকবে মরদেহ। শেষশ্রদ্ধা জানানো যাবে সুরজিৎ সেনগুপ্তকে।