সন্দীপ সরকার, কলকাতা: তাঁকে নিয়ে ধন্য ধন্য পড়ে গিয়েছে বিশ্ব ক্রিকেটে। সুনীল গাওস্করের মতো কিংবদন্তি বলছেন, এরকম শটের বৈচিত্র আগে দেখেননি। জাতীয় দলের প্রাক্তন অধিনায়ক ও প্রাক্তন কোচ রবি শাস্ত্রী মুগ্ধ গলায় জানতে চাইছেন, সপ্তম স্টাম্পের বলকে কীভাবে হাঁটু গেড়ে বসে উইকেটকিপারের মাথার ওপর দিয়ে ফাইন লেগ বাউন্ডারিতে পাঠিয়ে দিচ্ছেন তিনি। তাও অবলীলায়।


টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে (T20 World Cup) ভারতের ম্যাচ উইনার হিসাবে হাজির হয়েছেন সূর্যকুমার যাদব (Suryakumar Yadav)। যদিও একটা সময় তাঁকে পেরতে হয়েছে অনেক প্রতিকূলতা। এমনকী, শৃঙ্খলা নিয়েও প্রশ্নের মুখে পড়েছিলেন মুম্বইয়ের তারকা। 'স্কাই'-এর অজানা সেই কাহিনি শোনালেন মুম্বই রাজ্য দলে তাঁর দীর্ঘদিনের সতীর্থ ও বন্ধু সুফিয়ান শেখ (Sufiyan Shaikh)।                                                                                                          


সোমবার মুম্বই থেকে মোবাইল ফোনে এবিপি লাইভকে সুফিয়ান বললেন, 'অনেক লড়াই করেছে সূর্য। একটা সময় ওর শৃঙ্খলা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল। ওর অভিভাবকদের ডেকে পাঠানো হয়েছিল। তবে আমি ওকে চিনি। বহু টুর্নামেন্টে ওর রুমমেট ছিলাম। যখন ও শৃঙ্খলা নিয়ে প্রশ্নের মুখে পড়ল, তখনও ওর কোনও দোষ ছিল না। আমি সেটা খুব ভাল করে জানি। কী হয়েছিল এতদিন পরে আর তা প্রকাশ করতে চাই না। তবে বাবা-মাকে ডেকে পাঠানোয় স্বাভাবিকভাবেই মুষড়ে পড়েছিল সূর্য। সেই সময় ওকে অনেক বোঝাই। সবসময় কথা বলতাম ওর সঙ্গে। তারপর আরও পরিণত হয়। সেই থেকে ক্রিকেট ওর কাছে প্রথম। বাকি সব তার পরে।'                                                               


সূর্যর বাবা ভাবা রিসার্চ সেন্টারের বিজ্ঞানী। খুব ছোট বয়সে উত্তরপ্রদেশ ছেড়ে মুম্বইয়ে এসেছিলেন সূর্য। তাঁর যে থ্রি সিক্সটি ডিগ্রি শট নিয়ে হৈ চৈ পড়ে গিয়েছে, কেরিয়ারের শুরুর দিকে তা অবশ্য খেলতেন না। সুফিয়ান বলছেন, 'আগে সোজা শট ভাল খেলত। মিড অন, মিড অফের ওপর দিয়ে দারুণ মারত। কিন্তু শুরুর দিকে কাট, ড্রাইভ বা পুল ভাল খেলতে পারত না। তারপর পরিশ্রম করে। সিনিয়র দলে গিয়ে ব্যাটিং স্টাইল বদলে যায়।' কিন্তু উইকেটের পিছন দিকে চার-ছক্কা মারা শুরু কবে? সুফিয়ানের কথায়, 'সেটা একটু পরে। রাবার বল জলে ভিজিয়ে কাউকে ছুড়তে বলত। সিমেন্টের পিচে সেই বল দ্রুত গতিতে যেত। লাফাত। আর ওই শট প্র্যাক্টিস করে যেত সূর্য।'


পেসারদের বলেও সাবলীলভাবে স্কুপ মারেন। রবিবার মেলবোর্নে সূর্যর দাপট দেখেননি বন্ধু। সুফিয়ান বলছেন, 'আমার ম্যাচ ছিল। ম্যাচের সরাসরি সম্প্রচার দেখতে পাইনি। পরে রিপ্লে দেখি। আমি ওর সেই শট দেখিনি। তবে সবার মুখে আলোচনা শুনে ওকে হোয়াটসঅ্যাপে জিজ্ঞেস করেছিলাম, কী শট মেরেছিস ভাই, হৈ চৈ পড়ে গিয়েছে যে! শট খেলার সময় ওর মাথা সরে না। ওর মাথা সব সময় দৃঢ় থাকে। তাই এত নিখুঁতভাবে শটটা খেলতে পারে।'


সুফিয়ান শোনালেন আরও এক অত্যাশ্চর্য গল্প। বললেন, 'লক্ষ্য করে দেখবেন, ও থাই প্যাড পরে না। ঘণ্টায় ১৪৫-১৫০ কিলোমিটার গতির বল খেলে থাই প্যাড না পড়ে। আমি বলতাম, আঘাত লেগে যাবে তো। ও বলত, যাতে লাগে সেই জন্যই থাই প্যাড পরে না! আশ্চর্য আত্মবিশ্বাস। আসলে শরীরের কাছাকাছি বল এলে খেলে। বলে, শরীরে লাগলে লাগুক না। তবে ও চোট পায় না। ঠিক ব্যাটে করে মেরে দেয়। ওর খেলার ধরনই তাই। দশবারের মধ্যে ৯ বার ওইরকম বলে মারবে।'


এর নেপথ্যে রয়েছে ফিটনেসও। একটা সময় স্থূল ছিলেন। সূর্যর জন্য বিশেষ ডায়েট চার্ট বানিয়ে দিয়েছিলেন ডায়েটেশিয়ান। সেই তালিকা কঠোরভাবে মেনে খাবার খান মুম্বইয়ের ডানহাতি ব্যাটার। সুফিয়ান বলছেন, 'ও মানুষ হিসাবেও দারুণ। বন্ধুদের খেয়াল রাখে। সবাইকে ভালবাসে। হইহুল্লোড় করে, আনন্দে বাঁচতে চায়। সবাইকে প্রেরণা জোগায়। ভীষণ আত্মবিশ্বাসী।'


চেঙ্গুরে বাড়ি সূর্যকুমারের। ১৫ মিনিটের দূরত্বে থাকেন সুফিয়ান। বলছেন, 'মাঝে মধ্যেই ওয়াংওখেড়ে যাওয়ার পথে আমার বাড়িতে আসে। খেলা নিয়ে আলোচনা করে। কোনও অহঙ্কার নেই। এখন ও জাতীয় দলের তারকা। তাও সব সময় জিজ্ঞেস করে কোনও ভুল শট খেলেছে কি না।'


আরও পড়ুন: অস্ট্রেলিয়া সফরে সুযোগ না পেয়ে বেড়েছিল জেদ, গোটা ঘরে লিখে রেখেছিলেন 'ইন্ডিয়া'