কলকাতা: আসল নামটা ভানগিপুরাপু ভেঙ্কটশাই লক্ষ্মণ। কিন্তু ওই একটা ইনিংসের পর ভিভিএস লক্ষ্মণের নামটা বদলে গেল। বিশ্ব ক্রিকেটে তিনি হয়ে গেলেন ভেরি ভেরি স্পেশাল লক্ষ্মণ। স্টিভ ওয়ার অস্ট্রেলিয়ার বিজয় রথ থামিয়ে দেওয়াই নয়, ইডেনে গিলেসপি, ওয়ার্ন, কাসপ্রোইচদের সামনে অদম্য লড়াই করে দ্বিশতরানের ইনিংস। মাটি কামড়ে পড়ে থেকে ঐতিহাসিক ২৮১ রান। আজকের আমাদের ওস্তাদের মার প্রতিবদনে ভিভিএস লক্ষ্মণের সেই ঐতিহাসিক ২৮১ রানের ইনিংস নিয়েই।


সিরিজে ১-০ তে পিছিয়ে ছিল সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের ভারত। তখনকার সময়ের অস্ট্রেলিয়া দলকে হারানো দেশে-বিদেশে সব জায়গাতেই ছিল একপ্রকার অসাধ্য। কিন্তু অসম্ভবকে সম্ভব করে তোলার মধ্যেই তো রয়েছে বীরত্বের পরিচয়। সেটাই করে দেখিয়েছিলেন ভিভিএস লক্ষ্মণ ও রাহুল দ্রাবিড়। টেস্টে ''কামব্যাক'' শব্দটা শুনলেই এই দুজনের নাম মনে পড়ে যেন। ২০০১ সালের মার্চে কলকাতা টেস্টে মহাকাব্য রচনা করেছিলেন লক্ষ্মণ-দ্রাবিড়। প্রথম ইনিংসে অস্ট্রেলিয়া ৪৪৫ রান তুলে চাপে ফেলেছিল ভারতকে। জবাবে সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের দল গুটিয়ে গিয়েছিল ১৭১ রানেই। ফলো অনে নেমে সবার সব হিসেব পালটে দেওয়া শুরু করল লক্ষ্মণ-দ্রাবিড়ের সেই জুটি। ৬৩১ মিনিট ক্রিজে ছিলেন লক্ষণ, খেলেছিলেন ৪৫২টি বল। ৪৪টি চারের মারে খেলেছিলেন জীবনের সেরা ইনিংস ২৮১। ওদিকে লক্ষ্মণের সঙ্গে রেকর্ড জুটিতে ১৮০ রান করেছিলেন দ্রাবিড়। ৩৫৩ বল খেলেছিলেন ৪৪৬ মিনিটের ইনিংসে। দ্রাবিড়ের ব্যাট থেকে এসেছিল ২০টি চার। সাত উইকেট হারিয়ে স্কোরবোর্ডে ৬৫৭ রান তুলে ইনিংস ঘোষণা করে ভারত। পরে হরভজন সিংয়ের তাণ্ডবে ২১২ রানে গুটিয়ে গিয়েছিল অস্ট্রেলিয়া। হারের মুখ থেকে ঘুরে দাঁড়িয়ে অসাধারণ এক ইতিহাসের জন্ম দেয় ভারত।


এক সাক্ষাৎকারে লক্ষ্মণ বলেছিলেন যে সেই ইনিংস খেলার আগে পিঠের ব্যথায় ভুগছিলেন তিনি। এমনকী রাহুলেরও না কি ভাইরাল জ্বর ছিল। কিন্তু সব শারীরিক প্রতিকূলতা দূর করেই ইডেনের ২২ গজে সেদিন ইতিহাস রচনা করেছিলেন মিডল অর্ডারের ২ তারকা ব্যাটার সেদিন। পরবর্তীতে সেই ইনিংসের প্রশংসা করতে গিয়ে সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ও বলেছিলেন যে তাঁর নেতৃত্বের কেরিয়ার দীর্ঘায়িত হয়েছিল সেদিন লক্ষ্মণ ওরকম একটি ইনিংস খেলেছিলেন বলে। ২৮১ রানের ইনিংসের মাহাত্ম্য এতটাই যে সেই নাম দিয়েই নিজের অটোবায়োগ্রাফিও লিখেছিলেন প্রাক্তন ভারতীয় ক্রিকেট তারকা। 


সেই সিরিজে মুম্বই টেস্ট জিতে ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে কলকাতা পা রেখেছিল অস্ট্রেলিয়া। কিন্তু দ্বিতীয় টেস্টে ১৭১ রানে হারতে হয় ব্যাগি গ্রিনদের। শেষ টেস্ট ছিল চেন্নাইয়ে। সেই ম্যাচে ২ উইকেটে জিতে সিরিজ ২-১ ব্যবধানে পকেটে পুরে নেয় সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের ভারত।