কলকাতা: স্বামী বরাবরই নির্লিপ্ত স্বভাবের। তাঁর কাছে ভালবাসার কোনও বিশেষ দিন নেই। তাই ভ্যালেন্টাইন্স ডে-তে বিশেষ কোনও উপহার দিয়ে চমকে দেওয়া তাঁকে টানে না। স্ত্রী আবার হা পিত্যেশ করে বসে থাকেন উপহারের জন্যই। আর না পেলে অনুযোগের সুরে বলেন, ‘ও গিফট পার্সন নয়।’


 


যাঁদের নিয়ে আলোচনা, তাঁরা এখন চেন্নাইয়ে। বিরাট কোহলিদের টিমহোটেলে জৈব সুরক্ষা বলয়ে আটক। তবে প্রেম থমকে নেই ঋদ্ধিমান ও দেবারতি সাহার। বরং উত্তরোত্তর যেন বেড়েই চলেছে।


 


আর ভ্যালেন্টাইন্স ডে-র আগে তাঁদের প্রেমের গল্প শোনাতে গিয়ে দেবারতি এমন এক কাহিনি শোনালেন, যা সিনেমার স্ক্রিপ্টের মতো। মিতভাষী প্রেমিক কি না বাবা-মাকে নিয়ে সটান হাজির হয়ে গিয়েছিলেন প্রেমিকের বাড়িতে! বিয়ের প্রস্তাব-সহ!


 


দেবারতি বলছেন, ‘পাপালি (ঋদ্ধিমানের ডাকনাম) মা-বাবাকে নিয়ে আচমকা হাজির হয়ে গিয়েছিল কলকাতায় আমাদের বাড়িতে। আমরা অমৃতসরে বেড়াতে গিয়েছিলাম। কলকাতায় ফেরার দশ মিনিটের মধ্যে ফোন করে পাপালি বলেছিল, মা-বাবাকে নিয়ে আসছি। সেদিনই ওর বাবা-মায়ের সঙ্গে আলাপ হয়। আমি ভাবতেই পারিনি ও সটান বাবা-মাকে নিয়ে বাড়িতে চলে আসবে।’


 


প্রেমের গল্প শোনাতে গিয়ে ঋদ্ধিমান ও দেবারতি ফিরে গিয়েছিলেন ১৪ বছর আগে। দেবারতি বলছিলেন, ‘সালটা ২০০৭। প্রথম আইপিএল তখন শুরু হওয়ার মুখে। সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং ওয়েবসাইট অরকুটে পাপালির সঙ্গে আলাপ হয়েছিল। তখন অরকুটই ছিল একমাত্র সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং ওয়েবসাইট। আমি তো তখন জানতামও না পাপালি ক্রিকেটার। বাংলার ক্রিকেটারদের মধ্যে চিনতাম শুধু মনোজ তিওয়ারিকে।’


 


ধীরে ধীরে বন্ধুত্ব থেকে প্রেম। ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে সিরিজের জন্য বিরাট কোহলিদের শিবিরে যোগ দেওয়ার আগে ঋদ্ধি বলেছিলেন, ‘ধর্মতলায় প্রথম দেখা করেছিলাম দুজনে। তারপর থেকে সাউথ সিটি মলে ডেট করতাম।’ কে প্রথমে প্রেমের প্রস্তাব দিয়েছিলেন? ঋদ্ধির জবাব, ‘দুজনই কার্যত একসঙ্গে নিজেদের মনের কথা জানিয়েছিলাম।’


 


দেবারতির সঙ্গে পরিচয় ও প্রেম হওয়ার পর থেকে খেলার জন্য অনেক ভ্যালেন্টাইন্স ডে-তে কলকাতার বাইরে কাটাতে হয়েছে ঋদ্ধিকে। তবে প্রেমদিবসের দেবারতির সেরা স্মৃতি ২০১২ সালে। সেবার দলীপ ট্রফি খেলতে ইনদওর গিয়েছিলেন ঋদ্ধি। দেবারতিও সঙ্গে ছিলেন। সেই ম্যাচে পূর্বাঞ্চলের হয়ে ১৭০ রান করেছিলেন ঋদ্ধি। রাতে সকলে হই হই করতে করতে ডিনারে গিয়েছিলেন।


 


ঋদ্ধিমান ভালবাসেন গুজরাতি খাবার। আর রোমির পছন্দ নিরামিশ ডিশ। আপনার রাঁধা কোন পদ খেতে ভালবাসেন তারকা স্বামী? দেবারতি বলছেন, ‘আমার রান্না করা পাস্তা ও ভীষণ ভালবাসে। এছাড়া চিকেন ও মাটন কারিও পছন্দ করে।’ চেন্নাইয়ে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে দ্বিতীয় টেস্ট খেলছে ভারত। প্রথম একাদশে অবশ্য নেই ঋদ্ধিমান। ভ্যালেন্টাইন্স ডে-তে কী পরিকল্পনা? দেবারতি বললেন, ‘শপিং তো প্রায় বন্ধ। জৈব সুরক্ষা বলয়ে রয়েছি। বাইরে বেরতে পারব না। অন্যরকম ভ্যালেন্টাইন্স ডে এবার। তবে ছেলে ও মেয়েকে নিয়ে পাপালির সঙ্গে সময় কাটাতে পারব, সেটাই এবারের ভ্যালেন্টাইন্স ডে-র সেরা প্রাপ্তি।’


 


১৪ বছরের সম্পর্ক দুজনের। ৪ বছরের প্রেমের পর ২০১১ সালে বিয়ে। ঋদ্ধিমানের স্ত্রী কখনও কখনও তাঁর ব্যাটিং কোচও। ঋদ্ধি বলছেন, ‘রোমি (দেবারতির ডাকনাম) আমাকে আগলে রাখে। খেলার ভুল দেখলে ধরিয়ে দেয়।’ দাম্পত্যের প্রায় এক দশক কাটিয়ে দেওয়ার পরও সবুজ শিলিগুড়ির ঋদ্ধিমান ও কলকাতার দেবারতির ভালবাসা।