নয়াদিল্লি: একজন কোচের সঙ্গে বাবা-মার কোনও ফারাক নেই। আর এ জন্যই সন্তানসম শিষ্যকে তিনি ‘আগলে’ রাখেন এবং ক্রিকেটার হিসেবে গড়ে ওঠার দিনগুলোতে খুব কাছ থেকে লক্ষ্য রাখতেন। এ কথা জানালেন ভারতের টেস্ট দলের অধিনায়ক বিরাট কোহলির কোচ রাজকুমার শর্মা।


শর্মাকে দ্রোনাচার্য পুরস্কারের জন্য বেছে নেওয়া হয়েছে। বিরাটের ১০ বছর বয়স থেকে শর্মা তাঁকে প্রশিক্ষণ দিয়েছেন। দ্রোনাচার্য পুরস্কারের জন্য তাঁর নাম বেছে নেওয়ায় উচ্ছ্বসিত বিরাটের কোচ। তিনি বলেছেন, এটা একটা বিরাট সম্মান। আর এই সম্মান দায়িত্ব আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। আরও বেশি বিরাটকে গড়ে তোলার দায়িত্ব বর্তেছে।

স্মৃতিচারণ করে শর্মা বলেছেন, ১০ বছরের বিরাট যেদিন আমার ক্যাম্পে এল, সেই দিনটা আমার আজও মনে আছে। এখন ও যখন নেট সেশনের জন্য আসে তখন তো ও ভারতের অধিনায়ক। কিন্তু আমার কাছে ও সেই ছোট্ট বিরাট। ওর সম্পর্কে আমার ধারনার বদল হয়নি।

৫১ বছরের শর্মার নাম এর আগেও দ্রোনাচার্য পুরস্কারের জন্য সুপারিশ করা হয়েছে। কিন্তু এবারই এই পুরস্কারের জন্য তাঁর নাম মনোনীত হয়েছে। ওয়েস্ট ইন্ডিজের পোর্ট অফ স্পেন থেকে কোচকে অভিনন্দন জানিয়েছেন কোহলি।

শর্মা বলেছেন, ২০১৩-তে বিরাট যখন অর্জুন পুরস্কার পেয়েছিল, তখন আমিও রাষ্ট্রপতি ভবনে গিয়েছিলাম। বিরাট তখন আমায় বলেছিল, এর পরের বছর আপনি দ্রোনাচার্য পুরস্কার পাবেন, আর আমি দর্শকাসন থেকে তা দেখব। বিদেশ সফরের জন্য বাইরে রয়েছে কোহলি। দেশে থাকলেও ও অবশ্যই আগামী ২৯ আগস্ট রাষ্ট্রপতি ভবনে থাকত। (উল্লেখ্য, ওই দিন আমেরিকা থেকে দেশে ফেরার বিমান ধরবেন কোহলি)।

অনুর্ধ ১৯ বিশ্বকাপে সাফল্য আর তারপর আইপিএলে রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালোর দলে সুযোগ পাওয়ার পর বিরাটের ফোকাস নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল। এ ব্যাপারে শর্মা বলেছেন, বাবা-মায়ের মতোই কোচের দায়িত্ব তাঁর শিষ্যর ওপর কড়া নজর রাখা। তখন একটা সময় গিয়েছে, যখন ওর বয়স মাত্র ১৯। অনুর্ধ ১৯ বিশ্বকাপ জয়ের সাফল্য আর তারপরই আরসিবিতে সুযোগ পাওয়ায় আচমকা একটা স্টারডম এসে গিয়েছেল। বাচ্চাদের ক্ষেত্রে তো এটা হতেই পারে। এরকম সময়েই কোচের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। সেই সময় সঠিক পথে গাইড করতে হয়। ও আমার ছেলের মতোই। তাই এ ব্যাপারে ওকে গাইড করা আমার কর্তব্য ছিল।

শর্মা বলেছেন, তারপর তো বিরাট নিজেকে একেবারেই অন্যরকম করে তুলেছে। আর এখন তরুণরা ওকে শুধু ক্রিকেটার হিসেবে নয়, একজন রোল মডেল হিসেবে দেখে।

বিরাটের কোচ বলেছেন, বয়সের সঙ্গে পরিণতিবোধটাও আসে। এমন অনেক কিছু আছে, যেগুলি নিয়ে কোচ কিছু করতে পারে না। ওটা একটা নিজস্ব বোধ গড়ে ওঠার সময়। বিরাটও ওই পর্যায় দিয়ে এগিয়েছে। বিরাটের একজন কিশোর থেকে নিজেকে দায়িত্বশীল তরুণে রূপান্তরিত করার ক্ষেত্রে তাঁর কোনও ভূমিকা ছিল না বলে জানিয়েছে শর্মা। এক্ষেত্রে বিরাটই নিজেকে পাল্টেছে।

কোচ বলেছেন, এখন বিরাটকে বিশ্বের সেরা ব্যাটসম্যানদের একজন বলা হয়। এরপরও ওর পায়ের নড়াচড়া বা ব্যাকলিফ্ট নিয়ে আমি কিছু বললে ও তা মন দিয়ে শোনে। এর থেকেই বোঝা যায় যে, সাফল্য ওর মাথা ঘুরিয়ে দেয়নি।