নয়াদিল্লি: ভারতে এতদিন ধরে তথাকথিত ফর্সা হওয়ার ক্রিম কেন বিক্রি হচ্ছে, সেই প্রশ্ন তুললেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের প্রাক্তন অধিনায়ক ড্যারেন স্যামি। একটি সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন, ‘আপনাদের ফেয়ার অ্যান্ড লাভলির বিজ্ঞাপনে স্পষ্ট বলা হয়, ফর্সা লোকজনই ভাল মানুষ। এই বিজ্ঞাপনে পরিষ্কার বর্ণবৈষম্যের কথা বলা হয়। ভারতের মতো দেশে যেখানে এত বৈচিত্র্য আছে, এতরকমের মানুষ, সেখানে কেন ফেয়ার অ্যান্ড লাভলির মতো পণ্য গ্রহণ করা হচ্ছে?’
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পুলিশি অত্যাচারে কৃষ্ণাঙ্গ ব্যক্তি জর্জ ফ্লয়েডের মৃত্যুর পর থেকেই বিশ্বজুড়ে বর্ণবিদ্বেষের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ শুরু হয়েছে। স্যামিও প্রতিবাদে সামিল হয়েছেন। তাঁর অভিযোগ, আইপিএল-এ খেলার সময় বর্ণবিদ্বেষের শিকার হয়েছিলেন। শ্রীলঙ্কার পেসার থিসারা পেরেরাকেও গায়ের রঙের জন্য কটাক্ষ শুনতে হয় বলে অভিযোগ স্যামির।
২০১৬ সালে ইডেনে স্যামির নেতৃত্বেই টি-২০ বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়ন হয় ওয়েল্ট ইন্ডিজ। সোশ্যাল মিডিয়ায় ভারতের পেসার ইশান্ত শর্মার পুরনো পোস্টে দেখা গিয়েছে, তিনি স্যামিকে ‘কালু’ বলে উল্লেখ করেছেন। এই শব্দটি কৃষ্ণাঙ্গদের পক্ষে অবমাননাকর। সেই কারণেই ইশান্তদের বিরুদ্ধে সরব হন স্যামি। তিনি দাবি করেন, যাঁরা তাঁকে উদ্দেশ্য করে ওই শব্দটি বলতেন, তাঁদের ক্ষমা চাইতে হবে।
এখন অবশ্য ইশান্ত সম্পর্কে আর কোনও অভিযোগ করেননি স্যামি। বরং তিনি বলেছেন, ‘আমাদের বিভিন্ন সংস্কৃতি, বর্ণবিদ্বেষ ও গায়ের রং নিয়ে শিক্ষা দরকার। ইশান্ত হয়তো কোনও খারাপ উদ্দেশ্য ছাড়াই আমাকে কিছু একটা বলেছে, কিন্তু অবমাননাকর যে কোনও শব্দের ব্যবহারই বন্ধ করা দরকার। ওর সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। আমি সেই ঘটনা পিছনে ফেলে জীবনে এগিয়ে গিয়েছি। আমার অবসর নেওয়ার সময় এসে গিয়েছে। ইশান্ত এখনও আমার ভাই। ওর সঙ্গে আবার দেখা হলে আলিঙ্গন করব। কোচ, মেন্টর বা খেলোয়াড়, যেভাবেউ হোক না কেন, আমি ভারতে ফিরতে চাই। ভারতে অনেক সুন্দর স্মৃতি আছে।’
স্যামি আরও জানিয়েছেন, ‘ইশান্তের বাড়িতে আমাদের একটি বড় পোস্টার আছে। সেই ছবিতে আমি স্বাক্ষর সহ লিখেছি, ‘সারা জীবনের জন্য ভাই’। আমি ইশান্তের সঙ্গে একটি শব্দ নিয়ে লড়াই চালিয়ে যেতে চাই না। কারণ, আরও অনেক বড় সমস্যার দিকে নজর দেওয়া দরকার। সামনের দিকে তাকাতে হবে।’
কয়েকদিন আগেই ইউনিলিভারের পক্ষ থেকে ঘোষণা করা হয়েছে, ফেয়ার অ্যান্ড লাভলি থেকে ‘ফেয়ার’ শব্দটি বাদ দেওয়া হবে। ভারত সহ এশিয়ার দেশগুলিতে তথাকথিত ফর্সা হওয়ার ক্রিমও আর নতুন করে বিক্রি করা হবে না।