কলকাতা: ডার্বিতে হারের পর এ বার ইস্টবেঙ্গল এফসি-র সামনে আর এক কঠিন প্রতিদ্বন্দী চেন্নাই এফসি, যারা কয়েকদিন আগেই কলকাতায় এসে সবুজ-মেরুন শিবির থেকে তিন পয়েন্ট নিয়ে গিয়েছে। সেই দলের মুখোমুখি হওয়ার আগে এ বার সতর্ক ইস্টবেঙ্গল এফসি-র কোচ স্টিফেন কনস্টান্টাইন। ঘরের মাঠে এই ম্যাচে নামার আগে তিনি সাংবাদিকদের বললেন, তিন পয়েন্ট পাওয়ার লক্ষ্যেই এই ম্যাচে নামছে তাঁর দল। ঘরের মাঠে এর আগে এফসি গোয়ার কাছে শেষ মুহূর্তের গোলে হেরেছেন। কোচের বক্তব্য, তাঁর দল যথেষ্ট ভাল খেলছে। কিন্তু যখন গোল দরকার, তখন সেই গোলটাই করতে পারছে না। তবে তিনি যে দুশ্চিন্তায় পড়েননি, এটুকু বুঝিয়ে দিলেন এ দিন। বললেন, দল ক্রমশ প্রতি ম্যাচে উন্নতি করছে, আরও করবে। এই ম্যাচে তাই তাঁর তিন পয়েন্টের আশা অনেক। 


এটিকে মোহনবাগানকে যারা প্রথম ম্যাচে হারিয়েছিল, সেই চেন্নাইন এফসি সম্পর্কে আপনার ধারণা কী?


কলকাতায় এসে যারা এটিকে মোহনবাগানকে হারিয়ে গিয়েছে, তাদের সমীহ করতেই হবে। ওদের যথেষ্ট ভাল ভাল খেলোয়াড় আছে। আগেও বলেছি, প্রত্যেক প্রতিপক্ষকেই আমরা শ্রদ্ধা করি। কাল আমরা ঘরের মাঠে তিন পয়েন্টের জন্যই খেলব।


চেন্নাইন এফসি-র বিরুদ্ধে আপনাদের পরিকল্পনা কী?


চার-পাঁচ নম্বর ম্যাচ খেলছি আমরা। এখন পর্যন্ত দলের পরিকল্পনা জানাইনি। ওদের দলে নারায়ণ দাস, অনিরুদ্ধ থাপার মতো কয়েকজন ভারতীয় খেলোয়াড় আছে, যাদের নিয়ে আমাদের সতর্ক থাকতে হবে। ভাল লাগছে, ওরা যথেষ্ট গুরুত্ব পাচ্ছে। তবে আমাদের এই ম্যাচে জিততেই হবে।


গত ম্যাচে আপনারা ভাল শুরু করেও পরের দিকে গোল খেয়ে যান। এই ব্যাপারে কি আপনি উদ্বিগ্ন?


এটিকে মোহনবাগানের বিরুদ্ধে প্রথমার্ধে আমরাই ভাল খেলেছিলাম। আমরা ওদের চেয়ে বেশি সুযোগ তৈরি করেছি। বল দখলেও সম্ভবত আমরা এগিয়েছিলাম। কিন্তু সুযোগগুলো গোলে পরিণত না করতে পারলে তার মাশুল দিতেই হবে। এটিকে মোহনবাগান একটা সুযোগ পেয়েই তা থেকে বুমৌস গোল করে। এটাই ফুটবল। ওরা আর একটা সুযোগ পেয়ে তা থেকে ২-০ করে। আমরা গোল খাওয়ার পর বলি, নিজেদের ভুলে গোল খেয়েছি। ফুটবল মানে তো তা-ই। ভুল করলে তার শাস্তি পেতেই হবে। তবে আমি উদ্বিগ্ন নই। আগের ম্যাচে আমরা খুবই ভাল খেলেছিলাম ও ম্যাচটা জিতেছিলাম। কেরালা ও গোয়ার বিরুদ্ধেও ভাল খেলেছি। আমাদের দলটা নতুন। দাঁড় করাতে সময় লাগবে। প্রতি ম্যাচে আমরা উন্নতি করছি। আরও উন্নতি করতে হবে। দুই অর্ধেই সমান ভাল খেলতে হবে। দেখা যাক এই ম্যাচে সেটা পারি কি না।


আপনার শিবিরে চোট-আঘাতের কী অবস্থা?


কয়েকজনের চোট আছে। নবীর কুমার এই মরশুমে আর খেলতে পারবে না, সে তো জানিয়েই দিয়েছি। ম্যাচের আগে শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত দেখতে হবে কে একশো শতাংশ ফিট আছে।


ডার্বির মতো ম্যাচে হারের ধাক্কা কাটিয়ে ঘুরে দঁড়ানো কতটা কঠিন আপনাদের কাছেযেখানে আপনাদের ভুলের জন্য প্রতিপক্ষ জিতেছে এবং আপনাদেরও কৌশলগত সমস্যা ছিল?


আমরা যদি খারাপ খেলতাম, যদি আমাদের প্রতিপক্ষ আমাদের ওপর আধিপত্য করত, তা হলে উদ্বিগ্ন হতাম। তবে আইএসএলের সেরা দলগুলো আমাদের দমিয়ে রাখতে পারেনি। বরং আমরা গত ম্যাচে আধিপত্য করেছি। পুরো দল নিয়ে ছয়-সাত সপ্তাহ প্রস্তুতি নেওয়ার পরে এ রকম পারফরম্যান্সকে আমি ইতিবাচকই বলব। অবশ্যই হারতে কারও ভাল লাগে না। আমাদের আরও উন্নতি করতে হবে। শুরু থেকেই আমরা ঠিক করে নিয়েছিলাম যে প্রতি সপ্তাহে আমরা উন্নতি করব। সেটাই করেছি। আশা করি, চেন্নাইনের বিরুদ্ধে ভাল পারফরম্যান্স দেখিয়ে তিন পয়েন্ট পাব। কঠিন মরশুম এটা। অনেক সমর্থকের কাছ থেকেই ইতিবাচক বার্তা পেয়েছি। কারণ, আমাদের ছেলেরা ভাল খেলছে, ইতিবাচক মানসিকতা নিয়ে যে মাঠে নামছে, তা বোঝা যাচ্ছে। এই ম্যাচেও আমরা নিজেদের সেরাটা দেওয়ারই চেষ্টা করব।


অযথা ভুল হচ্ছে আপনাদের। গত ম্যাচে গোলকিপার, এফসি গোয়া ম্যাচে ডিফেন্ডারদের অনিচ্ছাকৃত ভুলের জন্যই কি বারবার ব্যর্থ হতে হচ্ছে আপনাদের?


ঘটনাগুলো ঘটে যাওয়ার পর এগুলো মুখে বলা অনেক সোজা। কিন্তু সেই উত্তেজনার মুহূর্তে যা হয়েছে, এটাই ফুটবল। কেউ ভুল করতে চায় না, হয়ে যায়। কিন্তু এটা ঠিকই যে প্রতিপক্ষ অভাবনীয় কিছু না করা সত্ত্বেও আমরা ভুল করেছি। ফলে আমাদের পরাস্ত হতে হয়েছে। এগুলো মেনে নেওয়া কঠিন। বড় দলের বিরুদ্ধে ভাল খেলা সত্ত্বেও যদি তাদের হাতে পরাজয় স্বীকার করতে হয়, তা হলে একরম। কিন্তু নিজেদের ভুলের জন্য হারলে তখন আরও খারাপ লাগে।


যদিও এখনও অনেক ম্যাচ বাকি। আপনারা কি সেরা ছয়ের মধ্যে থাকার ব্যাপারে আত্মবিশ্বাসী?


এখন থেকেই সেই ভবিষ্যদ্বাণী করতে পারব না। আপাতত আমাদের নজর কালকের ম্যাচের দিকে। কত পয়েন্ট পেলে সেরা ছয়ে থাকতে পারব, ফেব্রুয়ারিতে সেই হিসেব করতে বসব। এখনই বলতে পারছি না।


কাল আপনাদের প্রতিপক্ষে একাধিক বাংলার খেলোয়াড় থাকবে। এই ব্যাপারটা কি আপনাদের সমস্যায় ফেলতে পারে?


আমার তা মনে হয় না। গ্যালারিতে আমাদের সমর্থকেরা অনেক বেশি গলা ফাটায়। আমাদের সমর্থকেরা যথেষ্ট সমর্থন দিচ্ছেন আমাদের। আশা করি ভবিষ্যতেও দেবেন। ওদের দলে একাধিক বাংলার খেলোয়াড় থাকলেও আমাদের কোনও সমস্যা হবে না।


গত ম্যাচে সাতটি কর্নার পেয়েও আপনারা কিছু করতে পারেননি। এই বিষয়ে কী বলবেন?


অনুশীলনে আমরা আক্রমণ ও রক্ষণের সেট পিসের প্রস্তুতি নিই। অবশ্যই এটা চিন্তার বিষয়। আমাদের এই সুযোগ থেকে আরও গোল করতে হবে। প্রতিপক্ষ রক্ষণে বক্সের মধ্যে অনেক লোক বাড়িয়ে রাখে। যার ফলে কাজটা আরও কঠিন হয়ে যায়। তবে আমাদের আরও সৃষ্টিশীল হতে হবে। রাস্তা তৈরি করতে হবে।


শুরু থেকেই আপনাদের অনেক ওঠা-নামার মধ্যে দিয়ে আসতে হয়েছে। এখন কি দলের ফুটবলাররা জানুয়ারির দলবদলের দিকে তাকিয়ে উন্নতি করছে বলে মনে হয়?


আমি কখনওই আশা করিনি দল টানা ৮-৯টা ম্যাচে জিতবে। এর জন্য সময় লাগবে। সবে ৩-৪টে ম্যাচ হয়েছে। সব কিছু নিখুঁত হতে কত ম্যাচ লাগবে জানি না। হয়তো ২০টা ম্যাচ লাগবে। প্রতি ম্যাচেই উন্নতি করছি। অনেক সুযোগ তৈরি করছি। লিগের অন্যতম সেরা দলের বিরুদ্ধে আমরা প্রথম ৪৫ মিনিট দুর্দান্ত খেলেছি। কিন্তু মুহূর্তের মনঃসংযোগ নষ্টের কারণে সাফল্য পাইনি। কিন্তু এটাই ফুটবল। গত মরসুম বা তার আগের মরসুম আমরা কোথায় ছিলাম, মনে করে দেখুন। ভাল দল কখনও এক দিনে তৈরি হয় না। ম্যাঞ্চেস্টার সিটিও একসময়ে তৃতীয় ডিভশনে খেলত।