নয়াদিল্লি: প্রায় এক বছরের উত্তাল পরিস্থিতি। ভারতীয় কুস্তি সংস্থার (WFI) প্রেসিডেন্ট ব্রিজভূষণ শরন সিংহের (Brij Bhushan Saran Singh) বিরুদ্ধে যৌন হেনস্থার অভিযোগ তুললেন মহিলা পালোয়ানরা। পথে নামলেন বজরঙ্গ পুনিয়া, সাক্ষী মালিকরা। ব্রিজভূষণের অপসারণ, ভারতীয় কুস্তি সংস্থাকে নির্বাসিত করা, নতুন নির্বাচনের পর প্রেসিডেন্ট পদে এলেন সেই ব্রিজভূষণ ঘনিষ্ঠ কর্তাই। সব মিলিয়ে কুস্তি নিয়ে তুলকালাম চলছে বছরভর। এক ঝলকে দেখে নেওয়া যাক ঘটনাপ্রবাহ...


১৮ জানুয়ারি: নয়াদিল্লির যন্তর মন্তরে ধর্নায় বসলেন জাতীয় কুস্তিগীরেরা। অভিযোগ তুললেন, ভারতের মহিলা কুস্তিগীরদের যৌন হেনস্থা করেছেন কুস্তি সংস্থার প্রধান ব্রিজভূষণ। তাঁর অপসারণ ও কুস্তি সংস্থায় নতুন নির্বাচনের দাবি তুললেন বজরঙ্গ পুনিয়া, সাক্ষী মালিক, বিনেশ ফোগতরা। সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করলেন ব্রিজভূষণ।


১৯ জানুয়ারি: কমনওয়েলথ গেমসে সোনাজয়ী কুস্তিগীর তথা বিজেপি নেত্রী ববিতা ভোগত পালোয়ানদের সঙ্গে দেখা করলেন। আশ্বাস দিলেন, তিনি সরকারের সঙ্গে কথা বলবেন। সেদিনই কেন্দ্রীয় ক্রীড়ামন্ত্রী অনুরাগ ঠাকুরের সঙ্গে দেখা করলেন প্রতিবাদী পালোয়ানেরা। তবে কোনও রফাসূত্র মিলল না।


২০ জানুয়ারি: ভারতীয় অলিম্পিক সংস্থার (IOA) প্রধান পি টি ঊষার কাছে চিঠি লিখে তদন্তের দাবি জানালেন প্রতিবাদী পালোয়ানেরা। ব্রিজ ভূষণের বিরুদ্ধে ওঠা যৌন হেনস্থার অভিযোগ খতিয়ে দেখতে মেরি কম, যোগেশ্বর দত্তদের নিয়ে সাত সদস্যের কমিটি তৈরি করল আইওএ।


২১ জানুয়ারি: তদন্ত কমিটি গড়ার আশ্বাস কেন্দ্রীয় ক্রীড়ামন্ত্রী অনুরাগ ঠাকুরের। যতদিন না তদন্ত শেষ হচ্ছে, ততদিন ব্রিজভূষণকে পদ থেকে সরে দাঁড়ানোর নির্দেশ দেওয়া হয়। ধর্না তুলে নেন কুস্তিগীররা। যদিও সব অভিযোগ ফের অস্বীকার করে জাতীয় কুস্তি সংস্থা। যদিও সংস্থার সহ সচিব বিনোদ তোমরকে নির্বাসিত করা হয়। সব টুর্নামেন্ট স্থগিত করে দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয় কুস্তি সংস্থাকে।


২৩ জানুয়ারি: মেরি কমদের নিয়ে পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গড়া হয়। চার সপ্তাহের মধ্যে রিপোর্ট জমা দিতে বলা হয় কমিটিকে।


২৪ জানুয়ারি: কুস্তিগীরেরা জানান, তাঁদের সঙ্গে কথা না বলে কমিটির সদস্যদের বাছা হয়েছে। ৩১ জানুয়ারি ববিতা ফোগত কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত হন।


২৩ ফেব্রুয়ারি: কমিটির মেয়াদ আরও ২ সপ্তাহের জন্য বাড়ানো হয়।


১৬ এপ্রিল: কমিটির রিপোর্ট কেন্দ্রীয় ক্রীড়া মন্ত্রকে জমা পড়ার পর জাতীয় কুস্তি সংস্থা জানিয়ে দেয়, ৭ মে হবে সংস্থার নির্বাচন। রিপোর্ট প্রকাশ্যে আনা হয়নি। ব্রিজভূষণ জানিয়ে দেন, তিনি নির্বাচনে লড়াই করবেন না। স্পোর্টস কোড মেনে।


২৩ এপ্রিল: যন্তর মন্তরে ফেরেন প্রতিবাদী কুস্তিগীরেরা। জানান, এক নাবালিকা সহ মোট সাতজন মহিলা কুস্তিগীর ব্রিজভূষণের বিরুদ্ধে কনট প্লেস থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন। তবে পুলিশ এফআইআর নেয়নি, অভিযোগ ওঠে। ওভারসাইট কমিটির রিপোর্ট প্রকাশ করার দাবি জানান পালোয়ানেরা।


২৪ এপ্রিল: কেন্দ্রীয় ক্রীড়ামন্ত্রক আইওএ-কে অ্যাড হক কমিটি গঠন করতে বলে এবং ৪৫ দিনের মধ্যে নির্বাচন আয়োজন করতে বলে। ব্রিজভূষণের বিরুদ্ধে এফআইআর না করা হলে সুপ্রিম কোর্টে যাওয়ার হুঁশিয়ারি দেন কুস্তিগীরেরা।


২৫ এপ্রিল: কুস্তিগীরদের প্রতিবাদে রাজনীতির রং লাগে। কৃষক নেতারা পালোয়ানদের সমর্থনে রাস্তায় নামেন। ব্রিজ ভূষণের বিরুদ্ধে এফআইআর নেওয়ার দাবি জানিয়ে পালোয়ানেরা সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হন। দিল্লি পুলিশকে নোটিস পাঠায় সর্বোচ্চ আদালত।


২৭ এপ্রিল: তিন সদস্যের প্যানেল তৈরি করে আইওএ। পি টি ঊষা জানান, পথে না নেমে আইওএ-র কাছে আসা উচিত ছিল পালোয়ানদের। 


২৮ এপ্রিল: ব্রিজ ভূষণের বিরুদ্ধে যৌন হেনস্থার অভিযোগে জোড়া এফআইআর নেয় দিল্লি পুলিশ। 


৩ মে: পালোয়ানদের সঙ্গে ধস্তাধস্তি হয় পালোয়ানদের। অভিযোগ ওঠে, মহিলা কুস্তিগীরদের হেনস্থা করেছে পুলিশ। এমনকী, কিছু পুলিশ মদ্যপ অবস্থায় ছিল বলেও অভিযোগ ওঠে।


৫ মে: অভিযোগকারিণী মহিলা কুস্তিগীরদের বয়ান রেকর্ড করে পুলিশ। ১১ মে ব্রিজ ভূষণের বয়ানও রেকর্ড করা হয়।


২৮ মে: নতুন সংসদ ভবনে যাওয়ার চেষ্টা করেন পালোয়ানেরা। বিনেশ ফোগত, সাক্ষী মালিক ও বজরঙ্গ পুনিয়ার বিরুদ্ধে পুলিশে অভিযোগ দায়ের হয়।


৩০ মে: আন্তর্জাতিক অলিম্পিক সংস্থা ও আন্তর্জাতিক কুস্তি সংস্থা পালোয়ানদের আটক করার ঘটনা ও পুলিশি পদক্ষেপের কড়া  নিন্দা করে। হরিদ্বারে পদক বিসর্জন দিতে যান পালোয়ানেরা।


৩ জুন: স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ দেখা করেন কুস্তিগীরদের সঙ্গে। ৮ জুন এক অভিযোগকারিনীর বাবা জানান যে, তাঁরা মিথ্যে অভিযোগ করেছেন ব্রিজভূষণের বিরুদ্ধে। 


৭ জুন: ৩০ জুনের মধ্যে কুস্তি সংস্থার নির্বাচন সম্পূর্ণ করার আশ্বাস দেন ক্রীড়ামন্ত্রী অনুরাগ ঠাকুর। ১২ জুন রিটার্নিং অফিসার নিয়োগ করে আইওএ। ৬ জুলাই নির্বাচনের দিন ধার্য হয়। ১৫ জুন পুলিশ চার্জশিট জমা দেয়।


২১ জুন: পাঁচ রাজ্যের কুস্তি সংস্থা ভোটাধিকার চায়। নির্বাচনের দিন পাল্টে ১১ জুলাই করা হয়।


২২ জুন: অ্যাড হক কমিটি জানায়, এশিয়ান গেমস ও বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপের যোগ্যতা অর্জনের জন্য প্রতিবাদরত ৬ পালোয়ানকে মাত্র একটি করে লড়াই করতে হবে। প্রতিবাদে সরব হন অন্যান্য পালোয়ানেরা। ২৫ জুন গুয়াহাটি হাই কোর্ট ১১ জুলাইয়ের নির্বাচনে স্থগিতাদেশ দেয়। 


১৮ জুলাই: ব্রিজ ভূষণকে অন্তর্বর্তীকালীন জামিন দেয় দিল্লি হাইকোর্ট। বজরঙ্গ ও বিনেশকে সরাসরি এশিয়ান গেমসে নামার ছাড়পত্র দেওয়া হয়। প্রতিবাদে সরব হন অন্যান্য কুস্তিগীরেরা। ৭ অগাস্ট কুস্তি সংস্থার নির্বাচনের নতুন দিন স্থির করা হয়। পরে ফের সেটা পিছিয়ে ১২ অগাস্ট করা হয়।


১১ অগাস্ট: পাঞ্জাব ও হরিয়ানা হাইকোর্ট ১২ অগাস্টের নির্বাচনে স্থগিতাদেশ দেয়। চোটের জন্য এশিয়ান গেমস থেকে সরে দাঁড়ান বিনেশ।


 






২৩ অগাস্ট: আন্তর্জাতিক কুস্তি সংস্থা ভারতীয় কুস্তি সংস্থাকে নির্বাসিত করে। অভিযোগ, সঠিক সময়ে নির্বাচন করা হয়নি।


৫ ডিসেম্বর: জাতীয় কুস্তি সংস্থার নির্বাচন হবে ২১ ডিসেম্বর, ঘোষণা করা হয়।


২১ ডিসেম্বর: জাতীয় কুস্তি সংস্থার নির্বাচনে প্রেসিডেন্ট পদে নির্বাচিত হন ব্রিজ ভূষণ ঘনিষ্ঠ সঞ্জয় সিংহ। ক্ষোভে অবসর ঘোষণা সাক্ষী মালিকের। হতাশ প্রতিক্রিয়া বজরঙ্গ-বিনেশদের।


আরও পড়ুন: ৩ জন একসঙ্গে খেললেই ভয় পাবে প্রতিপক্ষ! কেকেআর সমর্থকদের জন্য আশার কথা শোনালেন গম্ভীর


আপনার পছন্দের খবর আর আপডেট এখন পাবেন আপনার পছন্দের চ্যাটিং প্ল্যাটফর্ম হোয়াটস অ্যাপেও। যুক্ত হোন ABP Ananda হোয়াটস অ্যাপ চ্যানেলে