কলকাতা: গোটা কেরিয়ারে যিনি বিতর্ক থেকে শতহস্ত দূরে থেকেছেন, যাঁকে হাজার খুঁচিয়েও কোনও গরমাগরম বিবৃতি বা দেখে নেব মার্কা মন্তব্য বার করা যায়নি, সেই ঋদ্ধিমান সাহাই (Wriddhiman Saha) সাম্প্রতিক সময়ে ভারতীয় ক্রিকেটে যাবতীয় বিতর্কের কেন্দ্রে। সিএবি-র (CAB) যুগ্মসচিব তাঁর দায়বদ্ধতা নিয়ে প্রশ্ন তোলায় ক্ষোভে, হতাশায় বাংলা ছাড়তে চেয়েছেন ঋদ্ধিমান। রঞ্জি ট্রফির কোয়ার্টার ফাইনালের জন্য বাংলা দলে রাখা হলেও সিএবি প্রেসিডেন্ট অভিষেক ডালমিয়াকে ফোন করে ভিন রাজ্যে খেলার ছাড়পত্র চেয়েছেন অপমানিত উইকেটকিপার।


ঋদ্ধিমানকে বোঝাতে এবার আসরে নামলেন বাংলার কোচ অরুণ লাল (Arun Lal)। বুধবার তিনি প্রথমে মেসেজ, পরে ফোন করলেন বঙ্গ তারকাকে। এবং পরামর্শ দিলেন, সব ভুলে বাংলার হয়ে মাঠে নামার জন্য। ঋদ্ধিকে অরুণ বলেন, শান্ত হয়ে ভাবো। তুমি বরাবর ঠাণ্ডা মাথার, ভাল মানুষ। সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে ভেবে দেখো। এই সুযোগ হারিয়ে ফেলো না। মাঠে নেমে রান করে সকলের মুখ বন্ধ করে দাও। শোনা গেল, ঋদ্ধি কোচকে ভেবে দেখার আশ্বাস দিয়েছেন।


বুধবার অরুণ লালের কাছে ঋদ্ধিমানকে ফোন করার বিষয়ে জানতে চেয়েছিল এবিপি লাইভ। অরুণ লাল সরাসরি কিছু বলেননি। তবে সিএবি সূত্রে খবর, অরুণ লাল ঋদ্ধিকে ফোন করে বুঝিয়েছেন।


অরুণের কথাতেও যেন সেই নির্যাস। বাংলার কোচ বললেন, 'ঋদ্ধির যদি মনে হয় ওকে কেউ অসম্মান করেছে, মাঠে নেমে ডাবল সেঞ্চুরি করে দাও। সবাই জবাব পেয়ে যাবে। আমাকে কেউ গালাগাল দিলে আমি বাংলার হয়ে খেলব না, তা আবার হয় নাকি! তবে ওর চিন্তাভাবনা আলাদা হতেই পারে। সকল ক্রিকেটারকে আমার পরামর্শ, যতই রাগ হোক, মাঠে নেমে জবাব দাও। সেঞ্চুরি করো। ৫ উইকেট নাও। দেখবে তুমি নায়ক হয়ে গিয়েছো।'


তবে কোনও ক্রিকেটারের উদ্দেশে বিরূপ মন্তব্যও সমর্থন করছেন না অরুণ। বলছেন, 'সিএবি-র যুগ্মসচিব কাউকে নিশানা করলে সেটাও ঠিক নয়। তবে বাংলা ক্রিকেট মানে তো সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়, অরুণ লাল বা সিএবি সচিব নয়। বাংলা ক্রিকেটকে প্রতিনিধিত্ব করা বিরাট ব্যাপার। নিজের স্বপ্ন, নিজের ক্রিকেটপ্রেমের কথা ভেবে খেলতে হয়। বাকি কিছুতে গুরুত্ব দেওয়া উচিত নয়।'


ঋদ্ধিকে পাওয়া গেলে যে নক আউটে বাংলা লাভবান হবে, একবাক্যে মেনে নিচ্ছেন অরুণ। বলছেন, 'ও কোয়ার্টার ফাইনালের দলে আসাটা দুর্দান্ত ব্যাপার। খুব ভাল অন্তর্ভুক্তি। ও অটোমেটিক চয়েস। আমরা তো পেতাম না ওকে। ঋদ্ধি খেললে আমার দল ভীষণ শক্তিশালী হবে। গ্রুপ পর্বে ভাল পারফর্ম করলেও অভিষেক পোড়েল নয়, ঋদ্ধি খেললে কোয়ার্টার ফাইনালে ওই প্রথম একাদশে জায়গা পাবে।' তবে অরুণ লাল মনে করিয়ে দিচ্ছেন, 'ঋদ্ধি না খেললে বাংলা তো দশজনে নামবে না। এগারোজনই খেলবে।'


অরুণ যোগ করছেন, 'বড় দাদা হিসাবে ঋদ্ধিকে বলব, বাংলাকে রঞ্জি ট্রফি জেতানোর সুযোগ দারুণ ব্যাপার। খেলোয়াড় না খেললে তার গুরুত্ব শূন্য। আমাদের হাতে রয়েছে তিনটি ম্যাচ। আমি বলব মাঠে নামো। ভেবে দেখো, ফাইনালে তুমি ২৪৭ নঃ আঃ আর বাংলা রঞ্জি চ্যাম্পিয়ন। ভেবে দেখো, গোটা রাজ্যে তুমি নায়ক হয়ে যাবে। হিরো, একদম হিরো। গোটা দেশে হইচই পড়ে যাবে।'


ঋদ্ধির খারাপ লাগা স্বাভাবিক, মানছেন অরুণ লাল। তবে দ্বিমত রয়েছে প্রতিক্রিয়া নিয়ে। বাংলার কোচ বলছেন, 'ঠাণ্ডা মাথায় ভাবতে হবে। কিছু কথা ওর খারাপ লেগেছে। কিন্তু তাই বলে বাংলার হয়ে খেলব না, এটা ভাবা ঠিক নয়। আমি বড় দাদা হিসাবে ওকে সেই পরামর্শই দেব। রঞ্জি চ্যাম্পিয়ন হলে ও নিজেও আজীবন মনে রাখবে। গোটা রাজ্যের ক্রিকেটপ্রেমীদের হতাশ করার মানে হয় না।' যোগ করছেন, 'অনেকেই মাঝে মধ্যে রেগে যায়। খারাপ লাগে। মনোজ তিওয়ারি একবার বলেছিল, নেতৃত্ব ছেড়ে দেবে। খেলবে না। ওকেও বুঝিয়েছিলাম। একজনের ওপর রাগ থাকলে নিজেকে বা ক্রিকেটকে কষ্ট দেওয়ার মানে হয় না।'


২৭ মে বেঙ্গালুরু যাচ্ছে বাংলা দল। ঝাড়খণ্ডের বিরুদ্ধে কোয়ার্টার ফাইনালের আগে কর্নাটকের সঙ্গে একটি তিনদিনের ও উত্তরাখণ্ডের সঙ্গে ২ দিনের ম্যাচ খেলবে বাংলা। তার আগে কি ঋদ্ধি সমস্যার সুরাহা হবে?


আরও পড়ুন: দ্রাবিড় থাকতেও জাতীয় দলের কোচ হচ্ছেন লক্ষ্মণ? জানুন আসল ঘটনা