কলকাতা : সকাল সকাল একটা ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট। ঝাঁ চকচকে প্রোফাইল ছবি। কেতাদুরস্ত বায়ো। টাইমলাইনেও আকর্ষক পোস্ট। এড়াতে পারলেন না ঋতম। ঝটপট রিকোয়েস্ট অ্যাকসেপ্টেড। তারপর একটু আধু গুড মর্নিং, গুড নাইট মেসেজ। তারপর কথা গড়াল আরও একটু। এরপর ফোন নম্বর বিনিময়। কথাবার্তা এগোল হোয়াটসঅ্যাপে। এরপর ভিডিওকল। কিন্তু ওপারে কাউকেই দেখতেই পেলেন না ঋতম। কিন্তু তারপর থেকেই একের পর এক হুমকি ফোন আসতে শুরু করল তাঁর কাছে। পাঠানো হল এমন কিছু আপত্তিকর ছবি-ভিডিও, যেখানে অন্যের শরীরে ঋতমের মুখ। বলা হতে থাকে, টাকা দাও ... নইলে ছড়িয়ে যাবে এই ভিডিও। ঋতম কোনও নির্দিষ্ট ব্যক্তির নাম নয়। ঋতম প্রতীকী নাম মাত্র। আসলে এমন বহু ঋতমই ছড়িয়ে আছেন আমাদের মধ্যে, যাঁরা ক্রমাগত সোশ্যাল মিডিয়ায় ব্ল্যাকমেলিংয়ের শিকার। 



করোনাকালে দমবন্ধ পরিবেশ। বাড়িতেই কাটছে বেশিরভাগ সময়। একাকীত্ব ক্রমেই ঘিরে ধরছে । দীর্ঘদিন বন্ধ শপিং মল। থিয়েটারে ছবি দেখতে যাওয়ার অভ্যেসও ছাড়তে হয়েছ বিধিনিষেধের চাপে। এই মুহূর্তে খোলা জানলা বলতে ফেসবুক, ইনস্টাগ্রামের মতো সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমগুলিই। বাইরে বেরিয়ে সময় কাটানোর বিধিনিষেধের মধ্যে ফেসবুক চ্যাটবক্সেই কফি টেবিলের মজা খুঁজছে নেটাগরিকরা। কিন্তু তাতে বাড়ছে বিপদও। 

দিকে দিকে সোশ্যাল মিডিয়া প্রতারণার ঘটনা। বিশ্বাসের বসে অদেখা মানুষের সঙ্গে বন্ধুত্বের মূল্য চোকাতে হচ্ছে ভীষণ দাম দিয়ে। থানা-পুলিশ-সাইবারক্রাইম শাখায় ছুটতে হচ্ছে ইজ্জত বাঁচাতে। তাহলে সোশ্যাল মিডিয়ায় বন্ধুত্ব পাতানো কি আর যাবে না ? বিশ্বাস করে ছবিও আপলোড করা যাবে না ? কীভাবে এড়ানো যাবে অবাঞ্ছিত পরিস্থিতি ? এবিপি লাইভের সঙ্গে আলোচনায় মনোবিদ সৃষ্টি সাহা ও সাইবার বিশেষজ্ঞ সন্দীপ সেনগুপ্ত। 

মনোবিদ সৃষ্টি সাহা জানালেন - 



  • বন্ধুত্ব করার সময় আমরা যেন দেখে নিই, তাঁর সঙ্গে অন্য কোনও বন্ধুর যোগাযোগ আছে কি ? বা যে সংস্থায় প্রস্তাবপ্রেরক কাজ করেন বলে দাবি করছেন, তিনি সত্যিই কি সেখানে কাজ করেন, নাকি মনগড়া প্রোফাইল। এখন প্রশ্ন, এতকিছু খতিয়ে দেখে কি বন্ধুত্ব করা সম্ভব ? কিন্তু সেক্ষেত্রে যদি বেশ তাড়া থাকে, তাহলে ফেসবুকে ছবি বা ব্যক্তিগত ডিটেইল শেয়ার করার আগে সাবধান হওয়া দরকার। 

  • মনে রাখবেন, ফেসবুকে কিছু ছবি বা পোস্ট ডিলিট করে বা কাউকে ব্লক করে আমরা কিন্তু সুরক্ষিত থাকতে পারি না। কারণ মুছে ফেলা ছবিও থেকে যায়। যা প্রোফাইল হ্যাক করে পাওয়া যেতে পারে। তাছাড়া ফেসবুকে যাঁরা বেশি ডিটেইল দিয়ে থাকেন, তাঁদের ব্যক্তিগত জীবনও অনেকটা খোলা খাতার মতো। তাঁদের নিয়ে গল্প বানিয়ে ব্ল্যাকমেইল করা কিন্তু অত্যন্ত সহজ। মনে রাখতে হবে ইন্টারনেটে একবার যা আপলোড হয়, তা কিন্তু কখনওই চিরতরে মুছে যায় না।

  • অনেকক্ষেত্রেই দেখা যায়, কারও সঙ্গে বন্ধুত্ব হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই তাঁরা ছবি চেয়ে পাঠাল। সাধারণ একটা ছবি পাঠালেও বড় বিপদ ঘটতেই পারে প্রেরকের সঙ্গে। কারণ ছবি তাঁর হাতের মুঠোয়। আর অত্যাধুনিক সফটওয়্যারের গুণে একটা ভিডিও তৈরি করে ফেলা কোনও ব্যাপারই নয়। 

  • টিন-এজে বন্ধুত্ব তৈরির সঙ্গে সঙ্গে অনেক বেশি আবেগতাড়িতও হয়ে পড়েন মানুষ। হয়ত ব্যক্তিগত কিছু মুহূর্তের ছবিও শেয়ার করে ফেলেন বিশ্বাস করে। সেক্ষেত্রে বিশ্বস্ত মানুষটি বিশ্বাস না ভাঙলেও অন্যান্যরা করতেই পারেন। কারণ সোশ্যাল মিডিয়া হ্যাক করা কোনও ব্যাপারই নয়! 

  • কেউ যদি ইন্টারনেটে ছবি বা ভিডিও দিয়ে বিপদে পড়েন, তাহলে সাইবার ক্রাইম বিভাগে যোগাযোগ করতেই হবে। সেক্ষেত্রে লজ্জার খাতিরে তথ্যগোপন করলে আরও বিপদ। 


সাইবার বিশেষজ্ঞ সন্দীপ সেনগুপ্তের পরামর্শ - 




  • সোশ্যাল মিডিয়ায় বন্ধুত্ব বা চ্যাট অনেকটাই সুরক্ষিত হয় হ্যাকারদের থেকে যদি টু-ফ্যাক্টর-অথেনটিকেশন অন করে নেওয়া হয়। কোনও কোনও সময় বিভিন্ন চ্যালেঞ্জে অংশ নিতে গিয়ে নিজের ছবি পাবলিক আপলোড করেন অনেকে। তার থেকেই বিপদ বাড়ে। ছবি চুরি করে সুপারইমপোজ করে বাজারে ছড়িয়ে যেতে পারে। 




  • অ্যাকাউন্ট হ্যাক না হলে সোশ্যাল মিডিয়া চ্যাট সেফ। কিন্তু অতি পরিচিতের সঙ্গেও বিশেষ ব্যক্তিগত মুহূর্তের ছবি শেয়ার না করাই ভাল। 
    সোশ্যাল মিডিয়ায় চ‍্যাট কতটা গোপনীয়তা র শর্ত রক্ষিত হয়?




  • মাঝে মাঝেই সোশ্যাল মিডিয়ায় লাস্ট লগ ইন চেক করা ভাল, হ্যাক হওয়ার হাত থেকে বাঁচতে। 




  • সোশ্যাল মিডিয়ায় পাসওয়ার্ড আপনার নাম, পদবি বা জন্ম তারিখ দিয়ে রাখবেন না।



  •