5G Network in India: ভারতে লঞ্চ হতে চলেছে ৫জি (5G) পরিষেবা। আগেই শোনা গিয়েছে যে, অক্টোবরের প্রথম দিকেই ভারতে ৫জি (5G Service) সার্ভিসের সূচনা করবেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। India Mobile Congress 2022- এ ৫জি পরিষেবা (5G network) চালু করবেন প্রধানমন্ত্রী। শোনা যাচ্ছে, দিল্লির প্রগতি ময়দানে India Mobile Congress 2022 অনুষ্ঠান হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সম্ভবত পয়লা অক্টোবরই দেশে চালু হতে চলেছে ৫জি পরিষেবা। 


5G the road to 5 Trillion Dollar Economy


ভারতকে আর্থিক ভাবে ব্যাপক উন্নতির দিকে এগিয়ে নিয়ে যাবে ৫জি সার্ভিস, এমনটাই অনুমান বিশেষজ্ঞদের। এই ৫জি পরিষেবা দেশে চালু করার মাধ্যমে ৫ ট্রিলিয়ন ডলার অর্থনৈতিক অগ্রগতির সম্ভাবনা রয়েছে। এমনই লক্ষ্যমাত্রা স্থির করেছেন প্রধানমন্ত্রী। ২০৩৫ সালের মধ্যে ভারতের অর্থনীতিতে ৫জি পরিষেবা প্রায় ৭৭ লক্ষ কোটি (১ ট্রিলিয়ন ডলার) টাকার প্রভাব ফেলবে বলে মনে করা হচ্ছে। ২০২৫ থেকে ২০৪০ সালের মধ্যে ভারতের অতিরিক্ত GDP- র ক্ষেত্রে ১৫০ বিলিয়ন ডলার বা ১২ লক্ষ কোটি টাকার প্রভাব ফেলবে বলে অনুমান। ম্যানুফ্যাকচারিং সেক্টর ৫জি পরিষেবার মাধ্যমে সবচেয়ে লাভবান হবে বলে মনে করা হচ্ছে। এর পাশাপাশি প্রভূত লাভ হবে হেলথ বা স্বাস্থ্য সংক্রান্ত সেক্টরেও। 


৫জি পরিষেবা চালু হলে বাড়বে নিয়োগ


Telecom Sector Skill Council- এর অনুমান ২০২৫ সালের মধ্যে ভারতে ২.২ কোটি প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত Manpower প্রয়োজন হবে। ৫জি ডেভেলপমেন্টের জন্যই এই চাহিদা তৈরি হবে। বিশেষজ্ঞরা আরও বলছেন যে, টেলিকম সেক্টরে নিয়োগ প্রায় দ্বিগুণ হতে চলেছে।  


৫জি কেন গুরুত্বপূর্ণ


৯৮ শতাংশের বেশি ভারতীয় মোবাইলের মাধ্যমেই টেলিকমিউনিকেশন ব্যবহার করেন। ভবিষ্যতে এই হাই স্পিডের পরিষেবাই যোগাযোগের অন্যতম মাধ্যম হতে চলেছে। ডিজিটাল ইন্ডিয়ারও অন্যতম স্তম্ভ হবে এই ৫জি পরিষেবা। 


৫জি পরিষেবা চালু হলে সাধারণ মানুষের জীবনে কী কী পরিবর্তন আসবে



  • ৩ ঘণ্টার সিনেমা (HD) ডাউনলোড হবে এক থেকে দু'সেকেন্ডে। ৪জি পরিষেবায় সময় লাগে প্রায় ১০ থেকে ১৫ মিনিট।

  • ভিডিওতে কোনও বাফারিং পাবেন না ইউজাররা।

  • কল কানেক্টিভিটি বা মেসেজ পাঠানোর ক্ষেত্রে কার্যত সঙ্গে সঙ্গেই কাজ হয়ে যাবে। ইউজারদের অপেক্ষা করতে হবে না।

  • ভয়েস বা ভিডিও কলের ক্ষেত্রে ক্রিস্টাল ক্লিয়ার ফিচার পাওয়া যাবে। 

  • ৫জি নেটওয়ার্কে বিভিন্ন ধরনের গ্যাজেট যুক্ত করা সম্ভব। 

  • বিভিন্ন স্মার্ট গ্যাজেট বা ডিভাইস যেমন স্মার্ট বাল্ব, স্মার্ট স্পিকার, স্মার্ট ফ্যান, স্মার্ট টিভি ও অন্যান্য স্মার্ট কানেক্টেড ইলেকট্রনিক্সের ক্ষেত্রে পরিষেবা দ্রুততার সঙ্গে পাওয়া যাবে। এইসব ডিভাইসের বিক্রিও বাড়তে পারে। 

  • ৪জি নেটওয়ার্কের তুলনায় অন্তত ১০০ গুণ বেশি মোবাইল ইন্টারনেট স্পিড পাওয়া যাবে ৫জি সার্ভিসে। 

  • প্রাকৃতিক বিপর্যয় বা কোনও দুর্ঘটনা ঘটলে তাড়াতাড়ি যোগাযোগ করা সম্ভব হবে। 

  • রিয়েল টাইম একদম সঠিক লোকেশন পাওয়া যাবে ৫জি পরিষেবায়। নিরাপত্তার খাতিরে যোগাযোগ করাও সম্ভব হবে অত্যন্ত দ্রুত। 

  • মোবাইল ফোনের বাজারে বৃদ্ধি হবে, ব্যবসা বাড়বে, নতুন ডিভাইসও আসতে পারে। 


যেসব ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি কাজে লাগবে ৫জি পরিষেবা


শিল্প 



  • রিমোট কন্ট্রোল পরিচালিত সিস্টেমের ক্ষেত্রে সুবিধা হবে।

  • বিপজ্জনক পরিস্থিতির ক্ষেত্রে নিরাপত্তা পাওয়া যাবে।

  • যেকোনও ডিভাইসের অটোম্যাটিক কন্ট্রোলের ক্ষেত্রে দক্ষতা বাড়বে।


স্বাস্থ্য 



  • স্বাস্থ্যক্ষেত্রে ৫জি- র ব্যবহার অপরিসীম হতে চলেছে। ডিজিটাল হেলথ রেকর্ড সহজে পাওয়া সম্ভব হবে। যেকোনও জায়গায় পাওয়া যাবে। অর্থাৎ হেলথকেয়ার সার্ভিসের গুণমান বৃদ্ধি পাবে।

  • টেলিমেডিসিন অর্থাৎ দূরের ডাক্তারের সঙ্গে সহজে যোগাযোগ সম্ভব হবে। প্রত্যন্ত এলাকা থেকেও বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের সঙ্গে যোগাযোগ করা যাবে। 


শিক্ষা



  • যেকোনও জায়গায় ক্লাস করার অর্থাৎ পঠন-পাঠনের সুযোগ পাবে পড়ুয়ারা।

  • ইন্টারনেটে পড়াশোনার খুঁটিনাটি খুঁজে পাওয়া যাবে সহজে এবং দ্রুত।

  • বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের শিক্ষাব্যবস্থার ঝলক দেখা যাবে প্রত্যন্ত এলাকাতে বসেও। 


জীবনযাত্রা



  • ইন্টারনেট আমাদের সারাক্ষণের সঙ্গী। এই মাধ্যম ব্যবহারের স্পিড বাড়বে।

  • ইন্টারনেটে সবকিছুই করা যাবে অত্যন্ত দ্রুততার সঙ্গে। 

  • আধুনিক গ্যাজেটে ব্যবহার করা সম্ভব হবে সাবলীল সহজ ভাবে।

  • অডিও এবং ভিডিও কল থেকে শুরু করে অন্যান্য সমস্ত পরিষেবাই অনেক উন্নত হবে।


কর্মক্ষেত্রে


ভারতে ৫জি পরিষেবা চালু হয়ে গেলে কর্মক্ষেত্রে নতুন দিগন্ত খুলে যাবে। বাড়বে নিয়োগ। AR, VR এবং গেমিংয়ের দুনিয়ায় চাহিদা আরও বাড়বে। ৫জি সার্ভিস চালু হলে একাধিক স্টার্টআপ তৈরি হবে। মূল কথা হল চাকরির পরিমাণ বাড়বে। 


৫জি পরিষেবা ব্যবহারের কী কী প্রভাব দেখা দিতে পারে 



  • নতুন মোবাইল দরকার। কারণ বর্তমানের অনেক মোবাইলই ৪জি পরিষেবার জন্য উপযুক্ত। 

  • বাড়তে চলেছে ইন্টারনেটের খরচ। দেশে সর্বত্র এই সার্ভিস পৌঁছোতেও সময় লাগবে, অন্তত এক থেকে দু'বছর।

  • অনলাইন প্রতারণার হারও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।  


 ৫জি ওয়্যারলেস টেকনোলজি কী কী সুবিধা দেবে



  • অত্যন্ত হাই স্পিডের ডেটা।

  • ডাউনলোডে সবচেয়ে কম সময় লাগবে।

  • রেঞ্জ, রিচ, এরিয়া- অর্থাৎ অনেকটা এলাকা জুড়ে দুর্দান্ত স্পিডে কাজ করবে এই ৫জি সার্ভিস।

  • শহর থেকে গ্রামাঞ্চল, সকলেই একই স্পিডে পরিষেবা পাবেন। বাকি সুবিধাও একই ভাবে পাওয়া যাবে। কোনও ফারাক হবে না। 

  • কানেকশনে কোনও রকম সমস্যা পাবেন না ইউজাররা। 


৫জি পরিষেবায় তিনটি মূল প্রযুক্তি থাকতে চলেছে, সেগুলি হল- 5G -eMBB, 5G - mMTC এবং 5G - URLLC। চলতি বছর অক্টোবর মাসেই ভারতের ১৩টি শহরে ৫জি পরিষেবা চালু হবে বলে শোনা গিয়েছে। বিভিন্ন কোম্পানি ভারতে তাদের ৫জি স্মার্টফোন লঞ্চ ইতিমধ্যেই শুরু করেছে। আগামীদিনে এই পরিমাণ আরও বাড়বে। শুধু তাই নয়, দেশীয় সংস্থার তরফেও ৫জি ফোন নির্মাণ করার লক্ষ্য নিয়েছে ভারত সরকার। 


আরও পড়ুন- উৎসবের মরশুমেই সুখবর, অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহে ৫জি পরিষেবার সূচনা করবেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি