নয়াদিল্লি:  শরীর থেকে প্রাণ বেরিয়ে যাওয়ার আগে ধড়ফড়ানি। তার পর সব নিস্তেজ। মহাজাগতিক সেই কাণ্ড-কারখানা এ বার ধরা পড়ল টেলিস্কোপের শক্তিশালী ক্যামেরায় (Dying Star)। তাতেই মৃত্যুর আগে জ্বলে উঠে ফের নিভে যাওয়া অস্থিরমতি নক্ষত্রের ছবি ধরা পড়ল। 


ক্যামেরায় ধরা পড়ল নক্ষত্রের মৃত্যু


পৃথিবীর বৃহত্তম এবং সবচেয়ে শক্তিশালী মহাকাশ দূরবীক্ষণ যন্ত্র, জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপের (James Webb Space Telescope) ক্যামেরায় অস্থিরমতি নীহারিকা NGC 3132, যা কিনা সাদার্ন রিং নেবুলা নামে পরিচিত, তার ছবি ধরা পড়েছে। আমেরিকার মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা (NASA), তাদের সহযোগী ইউরোপিয়ান এবং কানাডিয়ান মহাকাশ সংস্থা মিলে মঙ্গলবার তার একগুচ্ছ ছবি প্রকাশ করেছে। তাতে ধূলিকণা, ধোঁয়া এবং গ্যাসের বলয়ের মধ্যিখানে দেখা গিয়েছে মৃত্যুপথযাত্রী নক্ষত্রকে। কার্যত ধড়ফড় করতে দেখা গিয়েছে নক্ষত্রটিকে। তার ফলে গ্যাস এবং ধূলিকণার তরঙ্গ ছড়িয়ে পড়তে দেখা গিয়েছে চারিদিকে। 



তবে মহাশূন্যের নিয়ম কানুন সব আলাদা। এক দিন তো নয়ই, এক বছরও নয়, হাজার হাজার বছর ধরে চলে নক্ষত্রের মৃত্যুর প্রক্রিয়া। মহাকাশে সূর্য়ের থেকেও বড় নক্ষত্র রয়েছে। প্রাণীজগতের মতো সেই নক্ষত্রেরও জন্ম-মৃত্যু রয়েছে। নক্ষত্রের মৃত্যুর আগে মহাবিস্ফোরণ ঘটে, জ্যোতির্বিজ্ঞানের ভাষায় যাকে বলা হয় সুপারনোভা। তাতে নিউক্লিয়ার ফিউশনের জেরে হাইড্রোজেন হিলিয়ামে পরিণত হয়। ফলে মৃত্যুর সময় নক্ষত্রের আকার এবং ঔজ্জ্বল্য বাড়তে থাকে। মাধ্যাকর্ষণ শক্তির ফলে একসময় সঙ্কোচন ঘটলে, চাপ সহ্য করতে না পেরে একসময় বিস্ফোরণ ঘটে। 



আরও পড়ুন: Earliest Galaxies: দেশ-কালের সীমা অতিক্রম করল বিজ্ঞান, ক্যামেরায় ধরা পড়ল সৃষ্টির আদি রহস্য


যে NGC 3132-এর ছবি জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপে ধরা পড়েছে, সেটি পৃথিবী থেকে ১ হাজার ৫০০ আলোকবর্ষ দূরে। এক আলোকবর্ষ মানে দূরত্ব প্রায় ৬ লক্ষ কোটি মাইল। মৃত্যুর আগে NGC 3132-এর ধড়ফড়ানিকে 'মৃত্যুপথযাত্রী নক্ষত্রের শেষ নৃত্য' বলে উল্লেখ করেছে নাসা। 


নাসা-র অসাধ্যসাধন


গত বছর ২৫ ডিসেম্বর জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপটি (James Webb Space Telescope) মহাশূন্যের উদ্দেশে রওনা দেয়। প্রায় একমাস ছুটে চলার পর পৃথিবীর কক্ষপথ ছাড়িয়ে ১৫ লক্ষ কিলোমিটার দূরত্বের গন্তব্যে পৌঁছয়। মহাশূন্যের যাবতীয় ঘটনাবলীর উপর নজরদারি চালানোর কার্য সঁপে দেওয়া হলেও, ওই টেলিস্কোপের মূল লক্ষ্য দু'টি, ব্রহ্মাণ্ডে জ্বলে ওঠা আদি নক্ষত্রগুলির ছবি তোলা এবং দূর-দূরান্তের গ্রহগুলি প্রাণধারণের উপযোগী কিনা, তদন্ত চালানো। সোমবার ওই টেলিস্কোপের তোলা যে ছবি প্রকাশ কার হয়, তাতে ব্রহ্মাণ্ডের একেবারে সূচনাপর্বের ছবি ধরা পড়ে।