কলকাতা: অ্যান্টনি কবিয়াল। তাঁর নামেই সেন্ট্রাল অ্যাভিনিউয়ের (Central Avenue) বিখ্যাত কালী মন্দির, ফিরিঙ্গি কালীবাড়ি (Firingi Kalibari)। এই মন্দির ঘিরেও নানা কিংবদন্তী। কথিত আছে, মামার বাড়িতে এলে একচালার মন্দিরে গিয়ে মাকে গান শোনাতেন অ্যান্টনি কবিয়াল। মহামায়ার স্বপ্নাদেশ পেয়ে নিজে হাতে গড়েন মা সিদ্ধেশ্বরীকে। সেই থেকে ঐতিহ্য মেনে ফিরিঙ্গি কালীবাড়িতে পূজিত হন মা। যদিও মন্দির কর্তৃপক্ষের মতে, বাঙালি মেয়েকে বিয়ে করার পর অ্যান্টনি হিন্দু ধর্মের প্রতি আকৃষ্ট হন। সেইসময় এখানে শিবের উপাসনা হত। সেখানেই মা কালীর মূর্তি প্রতিষ্ঠা করেন অ্যান্টনি কবিয়াল। 


দুর্যোগের আশঙ্কা নিয়েই আজ রাজ্যজুড়ে শক্তির আরাধনা। কলকাতা থেকে কামাখ্যা। বীরভূম থেকে বারাসাত। কালীপুজো উপলক্ষ্যে দিকে দিকে সাড়ম্বর আয়োজন। আলোর উৎসবে মাতোয়ারা তিলোত্তমা কলকাতাও। দুর্গাপুজোর মতোই কালীপুজোতেও থিমের হিড়িক। 


কার্তিক মাসের অমাবস্যা তিথির গভীর রাতে যোগিনী পরিবৃতা হয়ে আবির্ভূতা হন মা কালী৷ জগতে কল্যাণ এবং শান্তি স্থাপনের জন্য ভক্তরা দেবীর আরাধনা করেন৷ তিনি অসুখ বিনাশিনী৷ মহা শক্তিধর শুম্ভ-নিশুম্ভের হাত থেকে ত্রিলোককে রক্ষা করতেই দেবীর সৃষ্টি৷ নরমুণ্ডই দেবীর অলঙ্কার৷ যুদ্ধে পরাজিত সেনাপতিদের মুণ্ডের মালা মা কালীর কণ্ঠের শোভা৷ বলা হয়, পঞ্চাশটি মুণ্ডের এই মালা আসলে জ্ঞানের প্রতীক৷ যে সেনাপতি তাঁর চুল ধরে অপমান করেছিল, তাঁর মুণ্ড দেবী হাতে ধরে থাকেন৷ মৃত সেনাপতিদের হাতের পাতা দেবী কোমরে ধারণ করেন৷ শাস্ত্রমতে এই করতলও জ্ঞানের প্রতীক৷ ভুল করে স্বামী মহাদেবের গায়ে পা তুলে ফেলায় লজ্জিতা রণে উন্মত্ত দেবী৷


লেক কালীবাড়ি: দক্ষিণ কলকাতার লেক কালীবাড়িতে করুণাময়ী কালীর আরাধনা। সকালে মায়ের মঙ্গলারতির পর পুজো শুরু হয়। রাতভর পুজো চলবে। রীতি মেনে ফল বলির আয়োজন করা হয়েছে। চৈত্র সংক্রান্তি ও কালীপুজো, বছরে এই দু’দিন লেক কালীবাড়িতে ঘট বিসর্জন হয়। সন্ধেয় নতুন ঘট প্রতিষ্ঠা করে মায়ের পুজো হবে। এটাই লেক কালীবাড়ির বৈশিষ্ট্য। কালীপুজো উপলক্ষ্যে সকাল থেকে লেক কালীবাড়িতে ভক্তের ঢল।


কালীঘাটে মহালক্ষ্মী রূপে শ্যামা মায়ের আরাধনা: কালীপুজোর দিন এখানে লক্ষ্মীপুজো হয়। একান্ন পীঠের অন্যতম কালীঘাট। কিংবদন্তি অনুসারে, সতীর দেহত্যাগের পর তাঁর ডান পায়ের আঙুল পড়েছিল এখানে। অন্যতম প্রাচীন তীর্থক্ষেত্র হিসেবে পরিচিত কালীঘাট। কালীপুজোর দিন সকাল থেকেই কালীঘাট মন্দিরে ভক্তদের ভিড়। দূর-দূরান্ত থেকে পুজো দিতে এসেছেন পুণ্যার্থীরা। আজ গভীর রাত পর্যন্ত খোলা থাকবে মন্দির। পুজো উপলক্ষ্যে কড়া নিরাপত্তা।মোতায়েন পুলিশ। 


ঠনঠনিয়া কালীমন্দিরে ভক্তের ঢল: কালীপুজো উপলক্ষ্যে সকাল থেকে ঠনঠনিয়া কালীমন্দিরে ভক্তের ঢল। মাতৃসাধক শঙ্কর ঘোষ প্রতিষ্ঠা করেন এই মন্দির। ১৭০৩ সালে এই মন্দিরে পুজো শুরু হয়। জনশ্রুতি, ঠনঠনিয়া কালীমন্দিরে আসতেন শ্রী রামকৃষ্ণ। কালীপুজো উপলক্ষ্যে বিশেষ পুজো নয়, প্রতিদিনের মতো নিত্যপুজোই হয় ঠনঠনিয়া কালীমন্দিরে। এখানে দেবীমূর্তি জাগ্রত বলে মনে করেন ভক্তরা।


২৬৩ বছরে পা দিল  টালিগঞ্জের করুণাময়ী কালী মন্দির: এবার ২৬৩ বছরে পা দিল এখানকার পুজো। এই পুজোর বিশেষত্ব হল, কালীপুজোর দিন কুমারী পুজো হয়। ২০০৯ সাল থেকে শুরু হয়েছে এই কুমারী পুজো। সকালে মঙ্গলারতি দিয়ে পুজো শুরু। বিকেলে মাকে রাজবেশে সাজানো হবে। রাতে ভোগ নিবেদন। কালীপুজো উপলক্ষ্যে আজ সারাদিন খোলা থাকবে করুণাময়ী কালীমন্দির।