নয়াদিল্লি: ‘করোনা ভাইরাস’-এর উৎস চিনা গোখরো ও চিনা কালাচ সাপ! এমন সম্ভাবনার দাবি করছেন বিশেষজ্ঞরা।
চিনে এখন আতঙ্কের অপর নাম হল এই ‘করোনা ভাইরাস’। চলতি মরশুমে এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন বহু মানুষ। অনেকের গুরুতর শ্বাসজনিত সমস্যা দেখা দিয়েছে। মারণ ভাইরাসটির উৎসস্থল চিন।
শেষ খবর, অন্তত ২০ জনের মৃত্যু হয়েছে এই ভাইরাসে। আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় ৬০০। সবচেয়ে খারাপ অবস্থা চিনের উহান প্রদেশে। ওই শহর থেকে বাইরে বেরনোর সমস্ত পন্থা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। ১ কোটির বেশি জনসংখ্যা উহান এখন কার্যত ত্রস্ত। বাসিন্দারা ভীত এবং একইসঙ্গে প্রশাসনের ওপর ক্ষিপ্ত।
২০১৯ সালের ডিসেম্বরে প্রথম এই রোগ ধরা পড়ে মধ্য চিনের উহান শহরে। সেখান থেকেই দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে এই ভাইরাস। পরিস্থিতি এমন জায়গায় পৌঁছেছে যে, উহানে আক্রান্তদের মাধ্যমে চিনের অন্যত্র থেকে শুরু করে এমনকী মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এই রোগ ছড়িয়ে পড়েছে।


আক্রান্তদের শরীর থেকে নমুনা সংগ্রহ করে চিনের গবেষকরা এই মারণ ভাইরাসের জেনেটিক কোড বোঝার চেষ্টা করছেন। প্রাথমিক ধারণা, এই ভাইরাসটির সম্পর্ক অ্যাকিউট রেসপিরেটরি সিন্ড্রোম করোনা ভাইরাস (সার্স-সিওভি) ও মিডল ইস্ট রেসপিরেটরি সিন্ড্রোম করোনা ভাইরাস (মার্স-সিওভি)-র গোত্রের সঙ্গে রয়েছে বলে দাবি করেছেন বিজ্ঞানীরা। ওই ২ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে গত ১৭ বছরে কয়েক’শ মানুষ মারা গিয়েছেন।
বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, করোনাভাইরাসের পরিবার ভীষণই বর্ধিষ্ণু। মূলত, এই ভাইরাস তবে পশুদের মধ্যেই দেখা যায়। মানুষকে আক্রমণ করার নজির ভীষণ কম। বিজ্ঞানীদের মতে উট, বিড়াল, বাদুড়ের মধ্যে এই ভাইরাস পাওয়া যায়। তবে, সার্স ও মার্স -- এই দুই ভাইরাস মানুষকে আক্রমণ করে। ঠিক যেমনটা করছে ওই পরিবারের নবতম সদস্য নোভেল করোনাভাইরাস (২০১৯-এনসিওভি)।
নতুন করোনাভাইরাসের প্রোটিন কোড পরীক্ষা করে দেখেন বিজ্ঞানীরা। গত ২২ জানুয়ারি জার্নাল অফ মেডিক্যাল ভিরোলজিতে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১৯-এনসিওভি- আদতে হল দুটি করোনাভাইরাসের মিশ্রণ। একটি বাদুড়কে আক্রমণ করে, অন্যটি অচেনা। আরও পরীক্ষা করতে গিয়েই চমকে যান বিজ্ঞানীরা। জেনেটিক কোড খতিয়ে দেখতে গিয়ে বিজ্ঞানীরা জানতে পারেন, সম্ভবত এই ভাইরাস সাপ থেকে এসেছে।


উৎস চিনা গোখরো-কালাচ?



বিজ্ঞানীদের অনুমান, সাপই হল এই নতুন ২০১৯-এনসিওভি-এর প্রধান উৎস। দক্ষিণ-পূর্ব চিনে প্রধানত দুধরনের সাপ পাওয়া যায়। একটি বাঙ্গারুস মাল্টিসিঙ্কটাস (কালাচ) এবং নাজা আত্রা বা চিনা গোখরো। সাপ বহুক্ষেত্রে বাদুড়ের শিকার করে। আবার, সেই সাপের মাংস চিনের-- প্রধানত উহানের স্থানীয় সামুদ্রিক খাবারের বাজারে বিক্রি করা হয়। বিজ্ঞানীদের অনুমান, সেখান থেকেই সম্ভবত এই ভাইরাস মানুষের শরীরে চলে এসেছে।
তবে, বিজ্ঞানীরা অবাক হয়ে যাচ্ছেন এটা ভেবে যে কীকরে একটা ভাইরাস ঠান্ডা রক্তের প্রাণী (সরিসৃপ) ও উষ্ণ-রক্তের প্রাণী (মানুষ)-র শরীরে একইসঙ্গে মানিয়ে নিতে পারে। বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, এই ভাইরাসের প্রকৃত উৎস নির্ধারণ করতে আরও পরীক্ষার প্রয়োজন। এদিকে, এই ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার পরই, উহানের সি-ফুড মার্কেট বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এর ফলে, নতুন নমুনা সংগ্রহ ও উৎসের সন্ধান চালানো কঠিন হয়ে পড়েছে।


পশু থেকে মানব শরীরে হানা



পশু থেকে মানব শরীরে হানা দিয়েছে যে সকল মারণ ভাইরাস, তার মধ্যে সার্স ও মার্স অন্যতম। বিজ্ঞানীরা নিশ্চিত, এই দুই ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়া প্রথম মানুষের সঙ্গে জন্তুদের সরাসরি যোগসূত্র ছিল। অর্থাৎ, জন্তুদের থেকে সরাসরি এই ভাইরাস দুটি মানব শরীরে এসেছিল। এটা সম্ভব হয়েছিল কারণ, মানব শরীরকে আক্রমণ করার জন্য ভাইরাসটি একাধিক মিউটেশন-পদ্ধতির মাধ্যমে নিজের চরিত্র বদল করেছে। এখন এই ভাইরাস দুটি মানব থেকে মানব শরীরে ছড়িয়ে পড়তে পারে। গবেষণায় উঠে এসেছে যে, সার্স ও মার্স-এর মূল উৎস হল বাদুড়। মানুষ আর বাদুড়ের মধ্যে যোগসূত্রের কাজ করে মাস্কড পাম সিভেট, উট।


করোনাভাইরাস কী?



করোনাভাইরাসের নামকরণের প্রধান সূত্র এই ভাইরাসটির অনন্য আকার। ইলেকট্রন মাইক্রোস্কোপে দেখা যায়, ভাইরাসটি সূর্যের করোনা বা মুকুটের মতো দেখতে। মূলত, হাওয়ার মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে এই ভাইরাস। প্রধানত পক্ষী ও স্থন্যপায়ীদের শ্বাসনালী ও খাদ্যনালীতে মূলত আক্রমণ করে। উপসর্গ বলতে-- সংক্রমণের সময় জ্বর, শ্বাসজনিত সমস্যা, গলা ফোলা। এখনও পর্যন্ত এই ভাইরাসের কোনও টিকা বা প্রথাগত চিকিৎসা নেই। সেই নিয়ে গবেষণা চলছে।