Viral News: অন্যদের ভিড়ে অনন্য বিজ্ঞাপন। এ এক যুবকের বেকারত্বের কাহিনি। কেবল ভাতের বিনিময়ে পড়াতে চেয়ে সামাজিক মাধ্যমে শোরগোল ফেলে দিয়েছিলেন ইনি। অবশেষে খিদের জ্বালা মিটল, হিল্লে হল যুবকের। 


কেন কীর্তিমান কবীর ?
নাম মেহাম্মদ আলমগীর কবীর।বসতভিটে বাংলাদেশের জয়পুরহাট পাঁচবিবি উপজেলার বুড়ইল গ্রাম। শৈশব থেকেই নিত্যদিন অভাব অনটন তাঁর পরিবারের সঙ্গী। তারই সঙ্গে চলে জীবন সংগ্রাম। বছর পাঁচেক আগে বাংলাদেশের জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে স্নাতকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে প্রথম শ্রেণিতে প্রথম স্থান অর্জন করেন কবীর। থেমে থাকেনি তাঁর কীর্তি। দেশে স্নাতকোত্তর পরীক্ষাতেও যথারীতি দ্বিতীয় স্থান অধিকার করেন আলমগীর। কিন্তু তাতে বিদ্যেলাভ হলেও লক্ষীলাভ হয়নি। হন্যে হয়ে খুঁজেও পাননি চাকরি।


শিকে ছেঁড়েনি কোথাও ?
আলমগীর জানান, ২০১৯ সালে ছাত্র পড়ানোর টাকায় সরকারি বিভিন্ন দফতরে ৩৬টি পদে আবেদন করেন তিনি। সরকারি বিভিন্ন দফতরে তথা বাণিজ্যিক ব্যাঙ্কের লিখিত পরীক্ষাতেও উত্তীর্ণ হন। কিন্তু শেষমেশ চাকরি জোটেনি। মোখিক পরীক্ষাতে গিয়ে কোনও অজ্ঞাত কারণে বাদ পড়তেন তিনি। বাধ্য হয়েই শুরু করেন ছাত্র পড়ানো। কিন্তু ২০২০ সালে তাতেও আসে বাধা। করোনাকালে বন্ধ হয়ে যায় ছাত্র পড়ানোর কাজ। দিনে খাবার জোটানোটাই কঠিন হয়ে দাঁড়ায়।


২১ জানুয়ারি নেন সেই সিদ্ধান্ত
চারিদিকে আস্তে আস্তে বন্ধ হয়ে আসছিল দরজা। বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরির জন্য গিয়েও ফিরতে হচ্ছিল খালি হাতে। এদিকে খিদের জ্বালা শারীরিক-মানসিক চাপ সৃষ্টি করছিল আলমগীরের। ২১ জানুয়ারি আসে সেই দিন। যেদিন চক্ষুলজ্জা ভুলে বিজ্ঞাপন দেন তিনি।‘দুবেলা ভাতের বিনিময়ে পড়াতে চাই’লেখা বিজ্ঞাপনটি বিভিন্ন জায়গায় সেঁটে দেন। ওমিক্রন সংক্রমণের কারণে পরদিন স্কুল-কলেজ বন্ধ হয়ে যায়। টিউশনির জন্য কোনও সাড়া না পেলেও ফেসবুকে বিজ্ঞাপনের ছবি ভাইরাল হয়ে যায়।


কী বলছেন কবীর ?
‘দুবেলা ভাতের বিনিময়ে পড়াতে চাই’বিজ্ঞাপন প্রসঙ্গে ইতিমধ্যেই মুখ খুলেছেন আলমগীর। তিনি বলেছেন, ‘আসলে যার ঘা, তারই ব্যথা। সাত মাস ধরে এক বেলা খেয়ে দিন যাচ্ছে। ক্ষুধার জ্বালা সইতে না পেরে একান্ত বাধ্য হয়েই এই বিজ্ঞাপন দিয়েছি।’যদিও সাহায্যের হাত বাড়িয়ে না দিয়ে বিজ্ঞাপন দেখে বিরূপ মন্তব্য করেছেন অনেকেই।


ভাত চাইতেই পুলিশ এল
ভাত না জুটলেও এই বিজ্ঞাপনই কাল হয়েছিল আলমগীরের। এর পিছনে প্ররোচনার গন্ধ পেয়েছে পুলিশ। তাই জিজ্ঞাসাবাদ করতে নিয়ে যাওয়া হয়েছে থানায়। শেষপর্যন্ত কবীর নিয়ে কী বলল পুলিশ ?


কী বলছে পুলিশ ?
বগুড়ার পুলিশ কর্তারা জানিয়েছেন, অন্য কোনও প্ররোচনার বিষয় নেই আলমগীরের বিজ্ঞাপনে। নেহাতই বেকারত্বের জ্বালা থেকেই এই বিজ্ঞাপন বিভিন্ন দেওয়ালে সেঁটে দেন তিনি। পরবর্তীকালে যা ভাইরাল হয়ে যায়। বগুড়ার পুলিশ সুপার সুদীপ কুমার চক্রবর্তী বলেছেন, "আমরা তাকে আমাদের কার্যালয়ে ডেকে বিষয়গুলো জানতে চাই। তার পিছনে কোনও ইন্ধন বা প্ররোচণা আছে কিনা তা বুঝতে চেষ্টা করি।তার সাথে কথা বলে আমরা জানতে পারি, তিনি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কোনও সম্মানজনক চাকরি পাচ্ছিলেন না। এছাড়া সরকারি চাকরিতেও তার বয়স সীমা শেষ হয়ে গেছে।সেই মানসিক অবসাদ থেকেই বিজ্ঞাপন।"


হিল্লে হল যুবকের
অবশেষে সাপে বর হয়েছে আলমগীরের।থানায় আনার পরই ঘটনাচক্রে সেখানে উপস্থিত হয়েছিলেন 'এসিআই' শিল্প প্রতিষ্ঠানের একজন কর্মকর্তা। তাঁকে পুরো বিষয়টা বলতেই থানাতেই পরীক্ষার ব্যবস্থা হয় আলমগীরের। শেষমেশ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতেই হাতে এসেছে নিয়োগপত্র। আলমগীর কবীরকে ঢাকার সদর দফতরে রিসার্চ অ্যাসিস্ট্যান্ট হিসেবে নিয়োগ করেছে কর্তৃপক্ষ।  


২১ জানুয়ারি থেকে আলমগীরের বিজ্ঞাপন শোরগোল ফেলে দিয়েছিল সামাজিক মাধ্যমে।গত ১০ বছরের জীবনযুদ্ধের ফল এসেছে মাত্র ১০ দিনে।'দুবেলা ভাতের বিনিময়ে পড়াতে চাই' লিখে কবীর এখন বাংলাদেশে অতি পরিচিত নাম। যদিও বিজ্ঞাপনে লেখা পেশাটা বদলে গেছে তাঁর। বেকারের জায়গায় আজ বহাল তিনি। এখন অন্যদের মতো আলমগীর বলতেই পারেন-'চাকরিটা আমি পেয়ে গেছি, সবাই শুনছো...'