কলকাতা: ভবিষ্য়তের কথা ভেবে সঞ্চয় করতেই হয়। আর সেই সঞ্চয়ের জন্যই প্রয়োজন বিনিয়োগ (investment)। বিনিয়োগের কথা উঠলেই আলোচনা হয় মিউচুয়াল ফান্ড (Mutual Fund) নিয়ে। আর এই মিউচুয়াল ফান্ডের কথা বললেই সামনে আসে SIP- এই শব্দবন্ধটি। আমরা অনেকেই নানা মাধ্যমে SIP-কথাটি শুনতে পাই। কী এই SIP?


SIP-এর পুরো অর্থ Systematic Investment Plan. মিউচুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগের জন্য এই পদ্ধতির সুযোগ থাকে বিনিয়োগকারীদের হাতে। নির্দিষ্ট সময় অন্তর নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ বিনিয়োগ হয় এই পদ্ধতিতে। মাসে একবার বা ত্রৈমাসিকে একবার করে ওই পরিমাণ অর্থ দেন বিনিয়োগকারী, সেই অর্থ বিনিয়োগ হয় মিউচুয়াল ফান্ডে। ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট (Bank Account) থেকেই নিজে থেকে নির্দিষ্ট দিনে কেটে নেওয়া হয় এই টাকা। নিয়ম করে লগ্নি এবং ভবিষ্যতে বড় অঙ্কের সঞ্চয়ের জন্য SIP-এর উপর ভরসা করেন ভারতীয় বিনিয়োগকারীরা। 


SIP-তে বিনিয়োগ শুরু করা যায় যে কোনও সময়েই। এই বিনিয়োগের আগে কয়েকটি বিষয় জেনে রাখলে সুবিধা হতে পারে।


SIP- আদতে কাজ করে Rupee Cost Averaging এবং কম্পাউন্ডিং-এর ধারণার উপর। Rupee Cost Averaging-এর অর্থ, যখন বাজার নিম্নগামী বা Bearish তখন SIP-এর টাকায় বেশি ইউনিট কেনা যায়। অন্যদিকে, যখন বাজার ঊর্ধ্বগামী বা Bullish তখন SIP-এর টাকায় কম ইউনিট কেনা যায়। এর ফলে বিনিয়োগের গড় খরচ (Average Cost) অনেকটাই কম হয়। বাজার ওঠানামা করলেও দীর্ঘদিন ধরে বিনিয়োগ করে গেলে মোটা তহবিল তৈরি করতে পারেন বিনিয়োগকারীরা। কম্পাউন্ডিং-এর অর্থ কী, এই ভাবে বিনিয়োগে যে রিটার্ন আসে, সেই লাভের অংশের উপরেও ফের রিটার্ন আসে। ফলে বিনিয়োগকারীর লাভের অঙ্ক বৃদ্ধি পায়।


SIP-এর মাধ্য়মে বিনিয়োগ শুরুর আগে কী কী মনে রাখা প্রয়োজন?


বিনিয়োগের আগে আর্থিক লক্ষ্যের বিষয়ে স্পষ্ট ধারণা থাকা প্রয়োজন। কত বছর পর কত টাকার তহবিল তৈরি করতে চান সেই লক্ষ্যের উপর ভিত্তি করে এখন থেকে বিনিয়োগের মূল্য এবং মেয়াদ (Term) নির্ণয় করা প্রয়োজন। স্বল্প, মধ্যমেয়াদ বা দীর্ঘমেয়াদ- নানা রকম মিউচুয়াল ফান্ড (Mutual Fund) রয়েছে। বেছে নেওয়ার সিদ্ধান্ত বিনিয়োগকারীর।


এই ফান্ড নানা ধরনের হয়ে থাকে। ইক্যুইটি ফান্ড (Equity Fund), হাইব্রিড ফান্ড (Hybrid Fund) এবং ডেট ফান্ড (Debt Fund)। আর্থিক লক্ষ্য এবং বিনিয়োগের ইচ্ছের উপর নির্ভর করে ফান্ড বেছে নেওয়া যায়। অনেক সময় লগ্নির ঝুঁকি কমানো এবং ভারসাম্য রাখার জন্য বিভিন্ন ধরনের ফান্ডে ছড়িয়ে রাখা যায় লগ্নি।


কোন মিউচুয়াল ফান্ড কেমন রিটার্ন (Return) দিচ্ছে। সেই দিকেও লক্ষ্য রাখা প্রয়োজন। যেহেতু বাজারের ওঠানামার সঙ্গে জড়িত থাকে এর ওঠানামা- সেই কারণেই নজরদারি প্রয়োজন। পাশাপাশি, যে সংস্থার ফান্ড তাদের কাজের উপরেও নজর রাখা প্রয়োজন।


ঝুঁকির মূল্যায়নও প্রয়োজন। কোন তহবিলে তেমন ঝুঁকি রয়েছে সেটাও মাথায় রাখা প্রয়োজন। কারণ ভুল ফান্ডে বিনিয়োগ করলে ক্ষতির ঝুঁকি থাকে। এই বিষয়ে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া ভাল।


সহজেই যাতে টাকা তোলা যায়, সেটাও দেখে নিতে হবে। লাভ ঘরে তুলতে চাইলে যাতে সেই টাকা চটজলদি তোলা যায়। অথবা প্রয়োজনের সময় চট করে টাকা যাতে তোলা যায়, সেটাও দেখে নিতে হবে। 


বিনিয়োগের আগে পড়ে নিতে হবে মিউচুয়াল ফান্ডের যাবতীয় নথি। যাতে পরে কোনও সমস্যায় না পড়তে হয়। 


মিউচুয়াল ফান্ড বিনিয়োগে ধৈর্য ধরা সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন। হঠাৎ করে মার্কেট পড়ে গেলে তহবিলে ধাক্কা লাগে। সেই সময় ক্ষতি হলেও অনেকেই টাকা তুলে নেন। কিন্তু এক্ষেত্রে অপেক্ষা করাই প্রয়োজন। কারণ বাজার পড়লে SIP-এর ওই একই অর্থে বেশি সংখ্যক  NAV কেনা যাবে। পরে যখন বাজার উঠবে তখন অল্প দামে কেনা NAV থেকে বেশি টাকা রিটার্ন মেলে।


আরও পড়ুন: দ্বিতীয় ত্রৈমাসিকে মোটা লাভ! এই IT Stock- হাসি ফোটাল বিনিয়োগকারীদের মুখে