কলকাতা: ফের আদানি গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে বিনিয়োগ সংক্রান্ত অভিযোগ। বেশকিছু সংস্থার মাধ্যমে (Opaque Mauritius Funds)- বেআইনি ভাবে শেয়ার বাজারে আদানির সংস্থার শেয়ারে বিপুল অর্থ বিনিয়োগ হয়েছে বলে দাবি করা হয়েছে একটি রিপোর্টে। সেই কাজে আদানি পরিবারের সদস্যই জড়িত রয়েছে বলে দাবি করা হয়েছে সেই রিপোর্টে। এই রিপোর্ট তৈরি করেছে অর্গানাইজড ক্রাইম অ্যান্ড কোরাপশন রিপোর্টিং প্রোজেক্ট (Organised Crime and Corruption Reporting Project) বা OCCRP, খবর সংবাদ সংস্থা রয়টার্স সূত্রে। OCCRP হেজ ফান্ড কর্তা জর্জ সরোসের অর্থানুকূল্যে তৈরি একটি অলাভজনক সংস্থা।


এই অভিযোগ ওঠার সঙ্গে সঙ্গেই কড়া বিবৃতি জারি করে তার বিরোধিতা করেছে আদানি গোষ্ঠী। তাদের দাবি, এই রিপোর্ট আদতে সরোসের টাকায় গড়ে ওঠা সংস্থার স্বার্থের জন্য তৈরি। বেশ কিছু বিদেশি সংবাদমাধ্যমের সহায়তায় ভিত্তিহীন হিন্ডেনবার্গ রিপোর্টকে ফের প্রচারে তুলে আনার জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে। গোটা রিপোর্টই খারিজ করেছে আদানি গ্রুপ (Adani Group)


রিপোর্টে কী অভিযোগ ছিল?
বেশ কিছু ঘটনা নাকি দেখা গিয়েছে, যেখানে বিনিয়োগকারীরা বেশকিছু অফশোর সংস্থার (Offshore Structure) -এর মাধ্যমে আদানি সংস্থার স্টকের বেচা-কেনা করেছে। বেশ কিছু Tax Haven থেকে পাওয়া তথ্য এবং আদানি গ্রুপের অভ্যন্তরীণ ই-মেল থেকে পাওয়া তথ্যের মাধ্যমে নাকি এই বিষয়টি সামনে এসেছে বলে দাবি করা হয়েছে ওই রিপোর্টে। এই গোট লেনদেনই নাকি আইন না মেনে হয়েছে বলে অভিযোগ। এর আগে জানুয়ারিতে মার্কিন সংস্থা হিন্ডেনবার্গের (Hindenburg Research) রিপোর্টে আদানি গ্রুপের বিরুদ্ধে একধিক অভিযোগ তোলা হয়েছিল। মরিশাসের মতো জায়গা থেকে অফশোর সংস্থার মাধ্যমে বেআইনি ভাবে আদানির ব্যবসায় লগ্নি করার অভিযোগও তোলা হয়েছিল। সেই সময়েই ওই রিপোর্টকে বিভ্রান্তিকর এবং ভিত্তিহীন বলে দাবি করা হয়েছিল আদানির তরফে। যদিও সেই রিপোর্ট সামনে আসতেই ধস নেমেছিল আদানির সংস্থার শেয়ার দরে। বাজারমূল্য অনুযায়ী বিপুল পরিমাণ সম্পদ খুইয়েছিল আদানি। বেশ কিছুটা টালমাটাল সময়ের পরে অবশেষে ফের ধাতস্থ হয়েছে আদানির সংস্থাগুলির শেয়ার দর। 


এবারও এই রিপোর্টকে ভিত্তিহীন বলে দাবি করা হয়েছে আদানির তরফে। পাশাপাশি স্বপক্ষে একাধিক যুক্তিও দেওয়া হয়েছে সংস্থার তরফে। অন্তত বছর দশেক আগে একটি মামলা, যেটা এখন মীমাংসা হয়ে গিয়েছে, তেমন একটি মামলাকে ভিত্তি করে এই দাবি করা হয়েছে বলে অভিযোগ। সেই সময় Directorate of Revenue Intelligence বা DRI একটি অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত করছিল। ওভার ইনভয়েসিং (Over Invoicing) অর্থাৎ প্রকৃত বাজারমূল্যের চেয়ে বেশি দাম দেখানো, রিলেটেড পার্টি ট্রান্সাকশন (related party transactions) অর্থাৎ ওই পরিবারের সদস্য বা আত্মীয়দের মধ্যেই ব্যবসা সংক্রান্ত লেনদেন এবং Foreign Portfolio Investment -সংক্রান্ত অভিযোগ ছিল। একটি নিরপেক্ষ কর্তৃপক্ষ এবং অ্যাপালেট ট্রাইবুনাল পরে তদন্ত করে জানিয়ে দিয়েছিল যে কোনওরকম ওভার ভ্যালুয়েশন হয়নি এবং যাবতীয় লেনদেন নিয়ম মেনেই হয়েছে। ২০২৩ সালের মার্চে এই মামলার মীমাংসা হয়েছে বলে বিবৃতিতে জানিয়েছে আদানি গোষ্ঠী। সুপ্রিম কোর্ট তাদের তরফেই রায় দিয়েছে বলে দাবি করেছে আদানি গোষ্ঠী। ফলে সবকটি অভিযোগই ভিত্তিহীন বলে দাবি করেছে আদানি সংস্থা। 


SEBI -এই বিদেশি বিনিয়োগ (Foreign Portfolio Investment) নিয়ে তদন্ত করেছে বলে জানিয়েছে আদানি। সুপ্রিম কোর্টের তরফে যে বিশেষজ্ঞ কমিটি তৈরি করা হয়েছিল তারা Minimum Public Shareholding (MPS)-এর নিয়মভঙ্গের কোনও প্রমাণ পাননি, স্টকের দাম নিয়ন্ত্রণেরও কোও প্রমাণ পাননি। এমনটাই দাবি করা হয়েছে আদানির বিবৃতিতে। তাঁদের অভিযোগ, এই রিপোর্ট তৈরির সময় তাদের কাছে প্রশ্ন করা হয়েছিল কিন্তু যে উত্তর তারা দিয়েছিলেন সেটা গ্রাহ্যই করা হয়নি। 


পাল্টা অভিযোগ এনেছে আদানিগোষ্ঠী। শর্ট সেলিং ফান্ড এমন খবর ছড়িয়ে স্টকের দাম কমিয়ে মুনাফা কামাতে চাইছে বলে অভিযোগ তাদের। ইতিমধ্যেই একাধিক নিয়ন্ত্রক সংস্থা এই ধরনের সংস্থাগুলিতে তদন্তের আওতায় রেখেছে বলে দাবি করা হয়েছে আদানির তরফে। আইনের উপর আস্থা রয়েছে এবং সব নিয়ম মেনে হয়েছে বলে তাদের দাবি। এমন রিপোর্ট বেরনোর সময় নিয়েও সন্দেহ প্রকাশ করা হয়েছে আদানির তরফে। বৃহস্পতিবার বাজার খুলতেই আদানির সংস্থার বিভিন্ন শেয়ার দরে (Adani share price) পতন লক্ষ্য করা গিয়েছে। 


আরও পড়ুন: আজ লাভ দিতে পারে বাছাই এই ৩ স্টক! স্টপ লস কী হবে?