নয়াদিল্লি: শেয়ার বাজারে নিষিদ্ধ হলেন শিল্পপতি অনিল আম্বানি। বাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা SEBI তাঁকে নিষিদ্ধ করল। আগামী পাঁচ বছরের জন্য নিষিদ্ধ করা হয়েছে অনিলকে। নিষিদ্ধ করা হয়েছে আরও ২৪ জনকে, যাঁদের মধ্যে রিলায়্যান্স হোম ফাইন্যান্স লিমিটেড-এর (RHFL) উচ্চপদস্থ এগজিকিউটিভরাও রয়েছেন। ঋণের নাম করে সংস্থার তহবিল থেকে টাকা সরানোর অভিযোগ ছিল অনিল এবং সংস্থার আধিকারিকদের বিরুদ্ধে। সেই মামলার তদন্তে নেমেই অনিল এবং ২৪ জনকে শেয়ার বাজারে নিষিদ্ধ করল SEBI. (Anil Ambani)


অনিলকে শুধুমাত্র শেয়ার বাজারে নিষিদ্ধই করা হয়নি. তাঁকে ২৫ কোটি টাকা জরিমানাও করেছে SEBI. বলা হয়েছে, আগামী পাঁচ বছর শেয়ারবাজারে নথিভুক্ত কোনও সংস্থায় গুরুত্বপূর্ণ পদে থাকতে পারবেন না অনিল। না ডিরেক্টর হতে পারবেন, না অন্য কোনও গুরুত্ব পদে বসতে পারবেন। RHFL আগামী ছ'মাস শেয়ার বাজারে নিষিদ্ধ হয়েছে। তাদের ৬ লক্ষ টাকা জরিমানা করেছে SEBI. অনিল এবং বাকি ২৪ জনকে মোট ৬২৫ কোটি টাকা জরিমানা করা হয়েছে। (SEBI News)


SEBI-র এই নির্দেশের পরই শেয়ার বাজারে অনিলের সংস্থার শেয়ার দরে পতন দেখা গিয়েছে। রিলায়্যান্স পাওয়ারের শেয়ার দরে ৫ শতাংশ পতন ঘটে, রিলায়্যান্স ইনফ্র্যার শেয়ার দরে পতন হয় ১০.৪ শতাংশ, RHFL-এর শেয়ার দর ৪.৯ শতাংশ পতন দেখা যায়। SEBI জানিয়েছে, অনিলের নেতৃত্বে টাকার অপব্যবহার চোখে পড়েছে। বাজার নীতি লঙ্ঘন করে ঘুরপথে টাকা পাচার করা হয়েছে। বিশ্বাসভঙ্গ হয়েছে বিনিয়োগকারীদের।


SEBI-র পূর্ণ সময়ের সদস্য অনন্ত নারায়ণ জানিয়েছেন, সংস্থার মূলধনকে সন্দেহজনক ঋণের আকারে অন্যত্র পাচার করা হয়। পরবর্তীতে ওই বিপুল পরিমাণ ঋণ অনুৎপাদক সম্পদে পরিণত হয়, যাতে সংস্থা অর্থনৈতিক ক্ষতির মুখে পড়ে। SEBI-র তদন্তে দেখা গিয়েছে, কিছু ভুয়ো প্রকল্প আনা হয়। সেই প্রকল্পের আওতায় শেয়ার বাজারে নথিভুক্ত সংস্থার টাকা হাতবদল করা হয়। এমন কিছু গ্রাহকের কাছে ঋণ হিসেবে ওই টাকা যায়, যাঁরা দেনা শোধ করতে অক্ষম। পরে দেখা যায়, ঋণ পাওয়া ওই গ্রাহকদের সঙ্গে যোগ রয়েছে অনিলের।


সময় পেরিয়ে গেলেও ওই ঋণের টাকা সংস্থায় ফিরে আসেনি। এর ফলে ওই বিপুল পরিমাণ ঋণকে অনুৎপাদক সম্পদ হিসেবে ঘোষণা করা হয়। সেই দোহাই দেখিয়ে বিনিয়োগকারীদের টাকা ফেরত দিতে নিজেদের অক্ষমতার কথা জানায় RHFL. ফেরতযোগ্য নয় বলে মোট ৬ হাজার ৯৩১ কোটি ৩১ লক্ষ টাকার ঋণকে অনুৎপাদক সম্পদ গন্য করা হয় ২০২১ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর। এর ফলে ৯ লক্ষ বিনিয়োগকারী ক্ষতিগ্রস্ত হন। ২০১৮ সালের মার্চ মাসে সংস্থার শেয়ার দর যেখানে ৫৯.৬০ টাকা ছিল, ২০২০ সালের মার্চ মাসে তা ০.৭৫ পয়সায় এসে ঠেকে। 


অনিল ছাড়াও RHFL-এর প্রাক্তন আধিকারিক অমিত বাপনাকে ২৭ কোটি, ৯রবীন্দ্র সুধলকরকে ২৬ কোটি এবং পিঙ্কেশ আর শাহকে ২১ কোটি টাকা করে জরিমানা করেছে SEBI. রিলায়্যান্স ইউনিকর্ন এন্টারপ্রাইজেস এবং রিলায়্যান্স এক্সচেঞ্জ নেক্সট লিমিটেডের মতো সংস্থাকে ২৫ কোটি টাকা করে জরিমানা করা হয়েছে। রিলায়্যান্সের অন্য শাখাগুলিকেও জরিমানা করেছে SEBI. এর আগে, ২০২২ সালে অনিল এবং আরও বেশ কয়েকজনকে শেয়ার বাজারে নিষিদ্ধ করে অন্তর্বর্তী নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। আইনি ঝামেলা চলাকালীন ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ব্রিটেনের আদালতে নিজেকে দেউলিয়া ঘোষণা করেন অনিল।