নয়াদিল্লি: আগামী দিনে আর মানুষের প্রয়োজন পড়বে না, যন্ত্রমেধা দিয়েই কাজ চালিয়ে নেওয়া যাবে বলে ঘোষণা করা হয়েছিল গোড়াতেই। কর্মক্ষেত্রে আগামী দিনে মানুষের পরিবর্তে যন্ত্রমেধা দিয়ে কম খরচে কাজ চালিয়ে নেওয়া যাবে বলেও দাবি ছিল তাদের। যন্ত্রমেধা বা আর্টিফিশিয়াল ইনটেলিজেন্সের বিকাশ নিয়ে গবেষণা চালানো বিশ্বের অন্যতম সংস্থা, সেই OpenAI-ই এবার দেউলিয়া হওয়ার পথে। যন্ত্রমেধা সংক্রান্ত পরিষেবা চালাতে প্রত্যেক দিন তাদের প্রায় ৬ কোটি টাকা খরচ হয়ে যাচ্ছে। এমন চললে আগামী বছরই সংস্থাটি দেউলিয়া হয়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা বাজার বিশেষজ্ঞদের। (Artificial Intelligence)
OpenAI সংস্থার সিইও স্যামুয়েল হ্যারিস অল্টম্যান। গোড়ার দিকে সংস্থার বোর্ডের সদস্যও ছিলেন তিনি। ট্যুইটার (অধুনা X) কর্তা ইলন মাস্কও ওই বোর্ডের সদস্য ছিলেন। OpenAI সংস্থায় ২০১৯ সালে ১০০ কোটি ডলার বিনিয়োগ করে মাইক্রোসফ্ট। ২০২৩ সালে আরও ১০০০ কোটি ডলার বিনিয়োগ করে তারা। কিন্তু তার পরও দৈনিক কাজকর্ম চালাতে গিয়েই হিমশিম খেতে হচ্ছে OpenAI সংস্থাকে।
সে দেশের সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, শুধুমাত্র দৈনন্দিন ChatGPT পরিষেবা প্রদান করতেই ৭ লক্ষ ডলার খরচ পড়ছে, ভারতীয় মুদ্রায় যা প্রায় ৫ কোটি ৮০ লক্ষ টাকা। এই মুহূর্তে শুধু জমা টাকাই জলের মতো খরচ হয়ে যাচ্ছে OpenAI সংস্থার। GPT-3.5 এবং GPT-4 পরিষেবা থেকে আয়ে উদ্যোগী হয় OpenAI, যার আওতায় টাকা দিয়ে ওই পরিষেবা গ্রহণের কথা। কিন্তু সেই বাবদ ন্যূনতম আয়ও হচ্ছে না বলে খবর। ফলে জমা টাকা শুধু খরচ হয়ে যাচ্ছে, আয়ের তেমন বালাই নেই। তাতেই সঙ্কটে OpenAI.
কর্মক্ষেত্রে যন্ত্রমেধার সার্বিক ব্যবহার বাড়লে গোটা বিশ্বে ব্যাপক বেকারত্ব দেখা দেবে বলে গোড়া থেকেই সতর্কবাণী শোনা যাচ্ছিল। তার পরও হাঁকডাক বন্ধ হয়নি। বিশ্বের তাবড় সংস্থা এবং সিইও-রা যন্ত্রমেধাকে নিয়ে আশাপ্রকাশ করেন। সেই আবহে ২০২২ সালের নভেম্বর মাসে বাজারে ChatGPT নিয়ে আসে OpenAI. সেই সময় বিশ্বের ইতিহাসে সবচেয়ে দ্রুত বর্ধনশীল অ্যাপে পরিণত হয় ChatGPT. কিন্তু শুরুর দিকে তুমুল উৎসাহ দেখা গেলেও, ধীরে ধীরে ChatGPT-র প্রতি অনীহা দেখা যাচ্ছে গ্রাহকদের মধ্যে। জুলাই মাসের শেষ পর্যন্ত ChatGPT-র গ্রাহকের সংখ্যায় ব্যাপক পতন দেখা গিয়েছে বলে দাবি ইজরায়েলি সফ্টওয়্যার সংস্থা SimilarWeb-এর।
বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০২৩ সালের জুলাই মাসে ChatGPT-র গ্রাহকসংখ্যায় ১২ শতাংশ পতন লক্ষ্য করা গিয়েছে। ফলে ওই একমাসেই ১৭০ কোটি থেকে তাদের গ্রাহকসংখ্যা এসে ঠেকেছে ১৫০ কোটিতে। সংস্থার Application Programming Interface-কেও এই পতনের জন্য দায়ী করা হচ্ছে। গোড়ার দিকে বিশ্বের বড় বড় সংস্থায় ChatGPT-র ব্যবহার নিয়ে বিধিনিষেধ ছিল। বর্তমানে ওই সব সংস্থা OpenAI থেকে Application Programming Interface কিনে নিচ্ছে এবং তার সাহায্য়ে নিজেদের পৃথক যন্ত্রমেধা প্রযুক্তি তৈরি করে নিচ্ছে তারা, নিজেদের আলাদা চ্যাটবট বানিয়ে ফেলছে। এর ফলে OpenAI-এর উপর নির্ভরশীলতা কমছে।
শুধু তাই নয়, টাকা দিয়ে OpenAI-এর পরিষেবা কেনার চেয়ে বাজারে যে সব বিনামূল্যের LLM মডেল রয়েছে, সেগুলির দিকেও ঝুঁকছেন বহু মানুষ। লাইসেন্স নিয়েও বিশেষ ঝুট-ঝামেলা নেই সেখানে। নিজেদের মতো করে গড়েপিটেও নেওয়া যায়। এক্ষেত্রে Meta-র LLama 2-র কথা বিশেষ ভাবে উল্লেখ্য। বাণিজ্যিক কাজেও নিখরচায় সেটি ব্যবহার করা যায়। তাই OpenAI নিয়ে খামোকা ঝামেলা পোহানো কেন, এই ভাবনাও মাথাচাড়া দিচ্ছে। তাতেই ব্যবসা মার খাচ্ছে বলে মনে করছেন বাজার বিশেষজ্ঞরা।