নয়াদিল্লি: বাজেটে নয়া কর কাঠামোর ঘোষণা করলেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন। ১২ লক্ষ টাকার নীচে আয় হলে একটি টাকাও কর দিতে হবে না বলে জানিয়েছেন তিনি। কেন্দ্রের নরেন্দ্র মোদি সরকারের এই ঘোষণাকে স্বাগত জানিয়েছেন সকলেই। মুদ্রাস্ফীতির জেরে হাতে যখন ছ্যাঁকা লাগছে, সরকারের এই ঘোষণায় মধ্যবিত্তরা স্বস্তি পাবেন বলে মনে করা হচ্ছে। স্বাধীনতার পর থেকে দেশে এই নিয়ে বহু বার কর কাঠামোয় পরিবর্তন ঘটল। কিন্তু মধ্যবিত্তদের করছাড় দেওয়ার এই রীতির সূচনা হয় বেশ কয়েক দশক আগে। (Budget 2025)
১৯৪৯ থেকে ১৯৫০ সাল পর্যন্ত দেশে অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন জন মাথাই। সেই সময়ই মধ্যবিত্তদের করের বোঝা থেকে মুক্তি দিতে কর কাঠামোয় পরিবর্তন ঘটানো হয়। সেই সময় ১০ হাজার টাকা বার্ষিক আয়ের উপর কর ১ আনা কর দিতে হতো। ১০ হাজারের কম রোজগারের ক্ষেত্রে আয়কর বসাতে গিয়ে ১ আনাকে চারটি ভাগে ভাঙেন তিনি। ১০ হাজার টাকার বেশি আয় ছিল যাঁদের, তাঁদের উপর ২ আনা কর দিতে হতো। জন মাথাইয়ের আমলে তা কমিয়ে ১.৯ আনা করা হয়। (History Of Income Tax In India)
এর পর ১৯৭৪-’৭৫ সালের বাজেটে তদানীন্তন অর্থমন্ত্রী যশবন্তরাও চহ্বাণ আয়করের ঊর্ধ্বসীমা ৯৭.৭৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৭৫ শতাংশে নামিয়ে আনেন। ৬০০০ টাকা বার্ষিক আয়ে পুরোপুরি করছাড় দেওয়া হয়। কর কাঠামোর প্রত্যেক ধাপে মাসুলের সীমাও কনিয়ে ১৯ শতাংশ করে দেওয়া হয়।
১৯৮৫-’৮৬ সাল পর্যন্ত অর্থমন্ত্রী থাকাকালীন ভিপি সিংহ কর কাঠামোর ধাপ ৮ থেকে কনিয়ে ৪-এ নিয়ে আসেন। ১ লক্ষ টাকার বেশি আয়ে ৫০ শতাংশ কর ধার্য করেন। সর্বোচ্চ করের হার ৬১য়৮৭৫ থেকে কমিয়ে ৫০ শতাংশে আনেন। ১৮০০০ টাকা পর্যন্ত বার্ষিক আয়ে কোনও কর দিতে হতো না। ১৮ থেকে ২৫ হাজার টাকা আয়ে ২৫ শতাংশ কর দিতে হতো। ১ লক্ষের বেশি আয়ে ৫০ শতাংশ।
১৯৯২-’৯৩ সালে মনমোহন সিংহের আমলে কর কাঠামোকে তিনটি ধাপে ভাগ করা হয়। ৩০-৫০ হাজার টাকার উপর ২০ শতাংশ, ৫০ হাজার থেকে ১ লক্ষ টাকায় ৩০ শতাংশ এবং ১ লক্ষের বেশি হলে ৪০ শতাংশ। মনমোহনের এই কর কাঠামোই ছিল সর্বনিম্ন। এর উপর ভিত্তি করেই এবছরের বাজেটের কাঠামো তৈরি করা হয়েছে বলে মত বিশেষজ্ঞদের।
১৯৯৪-’৯৫ অর্থবর্ষে প্রথম ধাপে ৩৫-৭০ হাজারে ১০ শতাংশ, ৬০-১.২ লক্ষে ৩০ শতাংশ এবং ১.২ লক্ষের উপরে ৪০ শতাংশ কর ধার্য হয়।
১৯৯৭-’৯৮ অর্থবর্ষে পি চিদম্বরমে যে ‘ড্রিম বাজেট’ পেশ করে, তাতে বড় মাত্রায় করছাড় দেওয়া হয়। ৪০০৬০ হাজারে ১০ শতাংশ, ৬০-১.৫ লক্ষে ২০ শতাংশ এবং তার উপরে হলে ৩০ শতাংশষ ২০০৫-’০৬ অর্থবর্ষে ১ লক্ষ পর্যন্ত আয়কে পুরোপুরি করমুক্ত রাখা হয়। ১-১.৫ লক্ষে ১০ শতাংশ, ১.৫-২.৫ লক্ষে ২০ সতাংশ এবং তার বেশি হলে ৩০ শতাংশ কর বসে। মধ্যবিত্তরা হাঁফ ছেড়ে বাঁচেন।
২০১০-’১১ অর্থবর্ষে প্রণব মুখোপাধ্যায় ১.৬ লক্ষ পর্যন্ত আয়কে করমুক্ত করেন। ১.৪-৫ লক্ষে ১০ শতাংশ, ৫-৮ লক্ষে ২০ শতাংশ, ৮ লক্ষের বেশি আয়ে ৩০ শতাংশ আয়কর ধার্য হয়।
২০১২-’১৩ সালে করছাড়ের উর্ধ্বসীমা বাড়িয়ে ২ লক্ষ করা হয়। ২-৫ লক্ষে ১০ শতাংশ, ৫-১০ লক্ষে ২০ শতাংশ এবং ১০ লক্ষের উপরে ৩০ শতাংশ।
২০১৭-’১৮ সালে অরুণ জেটলি ৩.৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত আয়ে ২৫০০ টাকা পর্যন্ত ছাড় দেন। ২.৫-৫ লক্ষ আয়ে ১০ শতাংশের পরিবর্তে ৫ শতাংশ কর বসান।
২০২০-’২১ সালে ‘নতুন কর ব্যবস্থা’ চালু হয়। করব্যবস্থাকে সহজতর করতে ৫ লক্ষ পর্যন্ত আয়কে করমুক্ত করা হয়। আর তার পর, ২০২৫-’২৬ অর্থবর্ষের বাজেটে ১২ লক্ষ টাকা পর্যন্ত আয়ে কোনও কর দিতে হবে না বলে জানাল কেন্দ্র।