পার্থপ্রতিম ঘোষ ও আবির দত্ত, কলকাতা: কেউ কাজ হারিয়ে অর্থাভাবে ধুঁকছেন। কারও ব্যবসা লাটে উঠেছে। কেউ নতুন ব্যবসায় হাত দিলেও মূলধনের অভাবে ভুগছেন। করোনার ধাক্কায় সাধারণ মানুষের বিস্তর অর্থনৈতিক ক্ষতি হয়েছে। এই অবস্থায় কেন্দ্রীয় বাজেটে সুরাহার খোঁজ করছেন তাঁরা।


করোনার সঙ্কট, ৬৮ দিনের দেশজোড়া লকডাউনে কেঁপে গিয়েছে দেশের অর্থনীতি। যার আঁচ সরাসরি গিয়ে পড়েছে সাধারণ মানুষের জীবনে। লক্ষ লক্ষ মানুষ কাজ হারিয়েছেন। অর্থাভাবে ধুঁকছে বহু প্রতিষ্ঠান। বছর ঘুরলেও এই দগদগে ক্ষতর যন্ত্রণা ভোগ করতে হচ্ছে আম আদমিকে।

বরানগরের ন’পাড়ার বাসিন্দা শঙ্কর কর্মকারের কথাই যেমন। ডেলিভারি বয়ের কাজটা চলে গেছে লকডাউনের সময়। করোনা কেড়েছে বাবাকে। মা গুরুতর অসুস্থ। ভাল চিকিৎসা প্রয়োজন। কিন্তু টাকা কই? তাই শঙ্কর কর্মকারদের মতো অসংখ্য মানুষ তাকিয়ে আছেন কেন্দ্রীয় সরকারের বাজেটের দিকে।

করোনার মারে ছোট ব্যবসায়ীরা মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত। নিউ আলিপুরের জয় সাহা বক্সিও তাঁদের মধ্যে একজন। দীর্ঘদিনের ডেকোরেটার্স আর ক্যাটারিংয়ের ব্যবসা কার্যত লাটে উঠেছে। বরাত নেই। উপার্জন নেই। কর্মচারীদের ছাড়িয়ে দিতে হয়েছে। সংসার চালানোর জন্য তাই এখন বাধ্য হয়ে মাস্ক আর স্যানিটাইজারের ব্যবসা শুরু করেছেন জয়।

তিনি জানিয়েছেন, ‘সেভিংস ভেঙে খেতে হচ্ছে, ক’দিন সেটা পারব জানি না, আমরা চাই মানুষের আর্থিক স্বচ্ছলতা আসুক, জিনিসপত্রের দাম কমুক, বিশেষ করে পেট্রোল-ডিজেলের দাম কমানো উচিত। তাহলে মানুষের হাতে টাকা গেলে আমরাও আবার পুরনো ছন্দে ফিরতে পারব।’

হাওড়ার মঙ্গলাহাটে কাপড়ের ব্যবসায়ী সায়ন সাহা। লকডাউনের সময় থেকে দীর্ঘদিন ব্যবসা বন্ধ ছিল। এখন হাট খুললেও বিক্রিবাটা প্রায় নেই। বাধ্য হয়েই দোকানে দোকানে জল আর কোল্ডড্রিঙ্কস সরবরাহ করছেন সায়ন। এই ব্যবসা বাড়াতে গেলেও প্রয়োজন মূলধনের। তা আসবে কোথা থেকে?

সায়ন বলছেন, ‘সরকার যেন ছোট ব্যবসায়ীদের দেখে, না হলে কীভাবে চলব আমরা? কেন্দ্রীয় সরকার যদি পেট্রোল-জিডেলের দাম কমায় তাহলে ভাল হয়।’

কামারহাটির বাসিন্দা ও জিম ব্যবসায়ী সৌরভ ঘোষও নিরুপায়। অর্থাভাবে বন্ধ করে দিয়েছেন সিঁথির মোড়ের জিম। মায়ের বিউটি পার্লারেও তালা। এই অবস্থায় লোন নিয়ে নতুন করে ব্যবসা শুরুর সাহসটাও দেখাতে পারছেন না সৌরভ। তিনি বলছেন, ‘জিম বন্ধ, পার্লার বন্ধ, চালানো যাচ্ছে, এখন যদি কোনও জায়গা থেকে ইনভেস্ট করলে ফেরত দিতে পারব কি না জানি না।’

আপাতত অপেক্ষা বাজেট পেশের। তাতে কি সুরাহা মিলবে? অপেক্ষায় দেশবাসী।