নয়াদিল্লি: কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন আশ্বাস দিয়েছেন, নজিরবিহীন বাজেট পেশ করতে চলেছেন তিনি। করোনা বিধ্বস্ত অর্থনীতিকে বৃদ্ধির মুখে ঠেলে দিতে শক্ত হাতে অর্থনীতির স্টিয়ারিং ধরতে চায় কেন্দ্র। স্বাস্থ্য, স্বাস্থ্য সংক্রান্ত গবেষণা ও উন্নয়ন এবং টেলিমেডিসিন শিক্ষা সংক্রান্ত বিষয়ে বরাদ্দ বাড়তে পারে। করোনা পরবর্তী সময় ভোকেশনাল ট্রেনিং এবং স্কিল ডেভেলপমেন্টেও জোর দিতে পারে কেন্দ্র।

কেন্দ্রীয় বাজেটের ইতিহাস ১৬১ বছরের পুরনো। এটি বিশ্বের বৃহত্তম বাজেট, প্রতি বছর এটি তৈরি করে কেন্দ্রীয় অর্থ মন্ত্রক। চলুন, দেখে নেওয়া যাক এ ব্যাপারে কিছু ইন্টারেস্টিং তথ্য।

প্রথম বাজেট

প্রথম কেন্দ্রীয় বাজেট পেশ হয়েছিল ১৮ ফেব্রুয়ারি, ১৮৬০ সালে। পেশ করেছিলেন ভাইসরয়ের এক্সিকিউটিভ কাউন্সিল অফ ইন্ডিয়ার ফিনান্স মেম্বার জেমস উইলসন। উইলসন দ্য ইকোনমিস্ট পত্রিকার প্রতিষ্ঠাতা, চার্টার্ড ব্যাঙ্কও তিনি প্রতিষ্ঠা করেন। পরে ১৯৬৯-এ তা স্ট্যান্ডার্ড ব্যাঙ্কের সঙ্গে মিশে যায়।

বাজেট ব্রিফকেস   

২০১৯-এ কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা বাজেট ব্রিফকেস রীতি পরিত্যাগ করেন। বেছে নেন অনেক বেশি ভারতীয় খাতাপত্র বা বই খাতা রীতি। আগে বাজেট ডে-র সঙ্গে অঙ্গাঙ্গী ছিল বাজেট ব্রিফকেস, ইংল্যান্ড থেকে নিয়ে আসা হয় এই ট্রাডিশন। এটি শুরু করেছিলেন ইংল্যান্ডের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী উইলিয়াম গ্ল্যাডস্টোন, তাঁর বক্তৃতা এত লম্বা হত যে ব্রিফকেসে পুরে সব কাগজপত্র নিয়ে আসতে হত।

ব্ল্যাক বাজেট

১৯৭৩-৭৪ সালের বাজেট যখন পেশ হয়, দেশে তখন ভয়াবহ আর্থিক সঙ্কট চলছে। বর্ষায় ভাল বৃষ্টি হয়নি, ১৯৭১-এর ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ বড় খাবল বসিয়েছে কোষাগারে। সে বছর ঘাটতি ছিল ৫৫০ কোটি টাকা, সে বছরই কয়লা খনি ও বিমা সংস্থাগুলি অধিগ্রহণ করে কেন্দ্র। এর নাম দেওয়া হয় ব্ল্যাক বাজেট।

বেসমেন্ট

আগে বাজেটের কাগজপত্র রাষ্ট্রপতি ভবনে ছাপা হত। কিন্তু ১৯৫০-এ তা বাইরে বেরিয়ে যায়। এর পরের বছর থেকে বাজেট নথিপত্র ছাপার জন্য সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয় মিন্টো রোডের একটি ছাপাখানায়, তারপর নর্থ ব্লকের বেসমেন্টে। তারপর থেকে সেখান থেকেই কাগজপত্র ছাপা হয়।

সব থেকে বেশি বাজেট পেশ   

প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী মোরারজি দেশাই সংসদে ১০টি কেন্দ্রীয় বাজেট পেশ করেন। এরপর রয়েছেন পি চিদম্বরম, তাঁর পেশ করা বাজেটের সংখ্যা ৯।

দীর্ঘতম বাজেট বক্তৃতা

গত বছর নির্মলা সীতারামনের বাজেট বক্তৃতা দেশের ইতিহাসে দীর্ঘতম। বেলা ১১টায় শুরু হয় তাঁর বক্তৃতা, চলে প্রায় ৩ ঘণ্টা, শেষ হয় বেলা ১টা ৪০-এ। যখন বাজেট বক্তৃতার আর ২ পাতা বাকি ছিল, তখন তিনি বক্তৃতা থামিয়ে দেন, অসুস্থবোধ করছিলেন। লোকসভায় তাঁর সেই ১৬০ মিনিটের বক্তৃতা রেকর্ড হয়ে রয়েছে। তবে শব্দের দিক থেকে দীর্ঘতম বক্তৃতা দেন মনমোহন সিংহ, ১৯৯১-এ, তখন তিনি কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী। তাঁর বক্তৃতার মোট শব্দ ছিল ১৮. ৬৫০টি। সব থেকে ছোট বাজেট বক্তৃতা দেন অর্থমন্ত্রী হীরুভাই এম প্যাটেল ১৯৭৭-এ অন্তর্বর্তীকালীন বাজেট পেশের সময়। বাজেটে ছিল মোট ৮০০ শব্দ।

বাজেট পেশের সময়     

২০০০ সাল পর্যন্ত বাজেট পেশ হয় বেলা ৫টায়, ফেব্রুয়ারির শেষ কর্ম দিবসে। ২০০১ সালের শেষে অর্থমন্ত্রী যশবন্ত সিনহা সময় পরিবর্তন করে দেন, বাজেট পেশ শুরু হয় বেলা ১১টায়।

ভাষা

১৯৫৫ পর্যন্ত বাজেট পেশ হত ইংরেজিতে। কিন্তু ১৯৫৬ সাল থেকে বাজেট নথি ছাপা শুরু হয় হিন্দি ও ইংরেজিতে।

প্রথম মহিলা অর্থমন্ত্রী

১৯৭০ সালে প্রথম মহিলা অর্থমন্ত্রী হিসেবে ইন্দিরা গাঁধী পেশ করেন কেন্দ্রীয় বাজেট।

প্রথম পেপারলেস বাজেট

২০২১-২২ অর্থবর্ষে কেন্দ্র ঠিক করেছে, তারা আর বাজেটের কাগজপত্র ছাপবে না। সব সাংসদরা বাজেটের সফট কপি হাতে পাবেন। আজকের বাজেট বক্তৃতা শেষ হওয়ার পর ইউনিয়ন বাজেট মোবাইল অ্যাপে বাজেট সংক্রান্ত যাবতীয় নথি পাওয়া যাবে।