নয়াদিল্লি: দরিদ্র, মধ্যবিত্ত থেকে উচ্চবিত্, দেশে যোগাযোগ ব্যবস্থার জীবনরেখা। অথচ অতিমারিতে বার বার লকডাউনে (Coronavirus Lockdown) এই রেল যোগাযোগই সবচেয়ে ব্যাহত হয়েছে। তাই ২০২২-’২৩ অর্থবর্ষের বাজেটে রেলের (Rail Budget) জন্য বরাদ্দ বাড়াতে পারে কেন্দ্র। আগামী অর্থবর্ষের (Financial Yer 2022-2023) জন্য রেলের জন্য বরাদ্দা বাড়িয়ে ২ লক্ষ ৫০ কোটি টাকা করতে পারে কেন্দ্র। দিল্লির একটি সূত্রকে উদ্ধৃত করে এমনটাই জানিয়েছে সংবাদ সংস্থা আইএএনএস। এ ছাড়াও দেশের রেল যোগাযোগকে আরও নিবিড় করা হতে পারে বলে সূত্রের খবর।


২০১৭ সালে রেল বাজেটকে মূল বাজেটের (Union Budget 2023) সঙ্গে সংযুক্ত করা হয়। তার পর থেকে এই নিয়ে ষষ্ঠ বার বাজেট পেশ হয়ে চলেছে। কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমন (Nirmala Sitharaman) মঙ্গলবার চতুর্থ বার বাজেট পেশ করতে চলেছেন। তাতে দূরপাল্লার ট্রেনে আরামদায়ক যাত্রা, ভোটমুখী রাজ্যগুলিতে রেল যোগাযোগকে আরও নিবিড় করে তোলার পাশাপাশি দেশের উত্তর-পূর্ব অংশ এবং মেট্রোসিটিগুলিতে রেল যোগাযোগকে আরও উন্নত করে তোলাই লক্ষ্য কেন্দ্রের।


দিল্লি সূত্রে জানা গিয়েছে, আগামী অর্থ বর্ষে রেলের জন্য বরাদ্দ ১৫ থেকে ২০ শতাংশ বৃদ্ধি করতে চলেছে কেন্দ্রীয় সরকার। তাতে সাধারণ যাত্রীদের সুযোগ-সুবিধাকে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। ২০২১-’২২ অর্থবর্ষে আগের বার রেলের জন্য ১ লক্ষ ১০ হাজার ৫৫ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছিল কেন্দ্র। এ বছর তা বাড়িয়ে ২ লক্ষ ৫০ হাজার কোটিতে নিয়ে যাওয়া হতে পারে। এর আগে, ২০২৩ সালের মধ্যে ব্রডগেজ রেলের সম্পূর্ণ বৈদ্যুতীকরণের লক্ষ্য রেখেছিল কেন্দ্র। তার আওতায় এ বার ৭ হাজার কিলমিটার লাইনের বৈদ্যুকীরণের প্রস্তাব দেওয়া হতে পারে।


আরও পড়ুন: Union Budget 2022: বাজেটে কি কর ছাড় দিতে পারেন অর্থমন্ত্রী? কী রকম হতে চলেছে বাজেট?


দেশের সিংহভাগ মানুষ যেখানে রেল যোগাযোগের উপর নির্ভরশীল, সেখানে উচ্চগতিসম্পন্ন ট্রেনের ঘোষণাও করা হতে পারে বাজেটে। আমদাবাদ এবং মুম্বইয়ের মধ্যে বুলেট ট্রেন চালানোর কাজ ইতিমধ্যেই শুরু হয়ে গিয়েছে। দিল্লি থেকে বারাণসী এবং দিল্লি থেকে হাওড়া রুটেও বুলেট ট্রেন চালানোর ঘোষণা করতে পারে কেন্দ্র। ভোটমুখী রাজ্য এবং মেট্রোসিটিগুলিতে রেল যোগাযোগকে আরও উন্নতিতে কেন্দ্র বেসরকারি সংস্থাগুলিকে যুক্ত করা হতে পারে।  


এর পাশাপাশি, সোনালি চতুর্ভুজ অর্থাৎ দিল্লি থেকে মথুরা, ভাদোদরা হয়ে মুম্বই, দিল্লি থেকে নাগপুর, বিজয়ওয়াড়া হয়ে চেন্নাই, দিল্লি থেকে কানপুর, ধানপাদ হয়ে হাওড়া, হাওড়া থেকে বিশাখাপত্তনম হয়ে চেন্নাই। মুম্বই থেকে ওয়াদি, রেনিগুন্টা হয়ে চেন্নাই এবং মুম্বই থেকে নাগপুর হয়ে হাওড়া—এই রুটে মাঝারি উচ্চগতিসম্পন্ন, ঘণ্টায় ১৮০ থেকে ২০০ কিলোমিটার গতিসম্পন্ন ট্রেন চালানোর ঘোষণা করতে পারে কেন্দ্র। বন্দে ভারত এক্সপ্রেসের পরিধিও বাড়ানোর সম্ভাবনা রয়েছে।  


ট্রেনে আইসিএফ কামরার পরিবর্তে এলএইচবি কামরার অন্তর্ভুক্তি, হালকা ওজনের ১০টি অ্যালুমিনিয়াম ট্রেনের ঘোষণা হতে পারে দূরপাল্লার রেলযাত্রার জন্য। তার জন্য ৬ হাজার ৫০০ অ্যালুমিনিয়াম কামরার, ১ হাজার ২৪০টি  ইঞ্জিন এবং ৩৫ হাজার ওয়াগনের প্রস্তাব আনা হতে পারে বাজেটে। জার্মান প্রযুক্তি ব্যবহার করে বিশেষ বিসেষ ট্রেনের জন্য এলএইচবি কামরা তৈরির কাজ ইতিমধ্যেই শুরু করে দিয়েছে রেল। চেন্নাইয়ের কারখানায় নতিন ‘ডেকান কুইন’ ট্রেনের কামরা তৈরির কাজ চলছে। তাতে গার্ডের থাকার জন্য দু’টি বিশেষ কামরা, পাঁচটি এসি চেয়ার কামরা, ১২টি নন-এসি চেয়ার কামরা এবং একটি প্যান্ট্রি থাকছে। ২০ কামরার ট্রেনের প্রত্যেক কামরার দেখতে হবে আলাদা।


উত্তর-পূর্ব ভারতকে রেলপথে জুড়তে এ বারের বাজেটে বিশেষ গুরুত্ব দিতে দেখা যেতে পারে কেন্দ্রকে। সম্প্রতি ভোটমুখী মণিপুরে স্বাধীনতার পর প্রথম মালগাড়িটি রানি গাইদিনলু স্টেশনে পৌঁছয়। রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণৌ সম্প্রতি মণিপুরের জন্য জিরিবাম-ইম্ফল রেল প্রকল্পের ঘোষণা করেন। তাতে দেশের দীর্ঘতম সুড়ঙ্গ নির্মাণ করা হবে, যার মাধ্যমে গুয়াহাটি এবং ইম্ফলকে সংযুক্ত করা সম্ভব হবে। এই প্রকল্পের জন্য ৭ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ করেছে রেল।