অরিত্রিক ভট্টাচার্য ও সত্যজিৎ বৈদ্য, কলকাতা: রাত পোহালেই সংসদে বাজেট। দেশের মানুষের দৈনন্দিন জীবনের সঙ্গে জড়িয়ে থাকা সেই বাজেট ঘিরে আশা-আশঙ্কা-প্রত্যাশার দোলাচল। কী রকম হতে চলেছে বাজেট, কী বলছেন অর্থনীতিবিদরা? অর্থনৈতিক বিশ্লেষকদের একটা বড় অংশ মনে করছেন, আসন্ন বাজেটে অর্থমন্ত্রী করদাতাদের জন্য বড় ছাড়ের কথা ঘোষণা করতে পারেন। ২০১৪ সালে মোদী সরকারের প্রথম কেন্দ্রীয় বাজেটের পর থেকে আর আয়করের স্ল্যাবগুলির কোনও পরিবর্তন করা হয়নি। তৎকালীন অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি, মৌলিক আয়কর ছাড়ের সীমা ২ লক্ষ টাকা থেকে বাড়িয়ে ২.৫ লক্ষ টাকা করেছিলেন। প্রবীণ নাগরিকদের জন্য, এই ছাড়ের সীমা ২.৫ লক্ষ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৩ লক্ষ টাকা করা হয়েছিল।
করোনার মেঘ এখনও কাটেনি। অর্থনীতির ওপর চাপ এখনও কাটেনি।পাল্লা দিয়ে বেড়েছে বেকারত্ব। অক্সফ্যামের বার্ষিক রিপোর্ট বলছে, করোনাকালে ভারতে গরিব আরও গরিব হচ্ছে। আর ধনীরা আরও ফুলে ফেঁপে উঠেছে। এই পরিস্থিতির মধ্যেই মঙ্গলবার সংসদে বাজেট পেশ করবেন নির্মলা সীতারমণ।
এখন বড় প্রশ্ন হচ্ছে, ৫ রাজ্যে নির্বাচনের কথা মাথায় রেখে এবারের বাজেট কি হবে জনমোহিনী? বাজেট কি হবে গ্রাম এবং কৃষি নির্ভর? জোর দেওয়া হবে কোন কোন সামাজিক ক্ষেত্রে? মোদি সরকার কি আমূল সংস্কারের পথে হাঁটবে? না কি বিশেষ পরিবর্তনের পথে পা দেবে না কেন্দ্র? আপাতত তা নিয়েই চর্চা চলছে দেশজুড়ে। বিশেষজ্ঞদের একাংশের মতে, করোনা কালে মানুষ যেভাবে অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।
আরও পড়ুন, শিক্ষাক্ষেত্রে বাজেট বৃদ্ধির প্রয়োজন রয়েছে, মত বিশেষজ্ঞদের
বেকারের সংখ্যা বেড়েছে। ছোট ছোট সংস্থাগুলি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। মানুষের ক্রয় ক্ষমতা কমেছে। সেই সমস্ত বিষয়কে মাথায় রেখেই বাজেট পেশ করা উচিত মোদি সরকারের। অর্থনীতিবিদ অভিরূপ সরকার, "লোকজন এই সময় ট্যাক্সের ওপর ছাড় চাইবে সেটা দেখা উচিত, গ্রোথ যেটা দেখানো হচ্ছে, সেটা সবসময় প্রপার হয় না, সেই জায়গাকে দেখা উচিত, যে ছোট সংস্থাগুলি এমএসএমই জাতীয়, যাদের ৫০-১০০ কর্মী, তাদের বুস্টআপ করে, কারণ তারাই জব ক্রিয়েশন করে, মধ্যবিত্তর হাতে পয়সা পৌঁছে দিতে হবে আরও বেশি করে, কারণ তাঁরাই মূল কনজিউমার, লোকে কনজিউম না করলে অর্থনীতিটা দাঁড়াবে না, ক্রয় ক্ষমতা বাড়াতে হবে।"
বাজেটে যা বলা হয়, তা কি আদৌ পুরোপুরি বাস্তবায়িত হয়? এই প্রশ্নও তুলছেন কেউ কেউ। অর্থনীতিবিদ অরিজিতা দত্ত বলেন, "বাজেট নিয়ে আলোচনা একপ্রকার অর্থহীন, বাস্তবে রূপায়নই তো হয় না, ইনকাম ট্যাক্স দেন ১ শতাংশ মানুষ, তা নিয়ে এত আলোচনার প্রশ্ন নেই, যেহেতু ২০২৪-এর লোকসভা, এই অবস্থায় কিছু জনমোহিনী প্রকল্প থাকবে, এটা প্রত্যাশিত, কোভিড পরিস্থিতি গেছে, অর্থনীতির অবস্থা খারাপ, যদিও আগেও ভালো ছিল না, কেন্দ্র এই নিয়ে কিছু করতে পারে, কিছু সামাজিক প্রকল্প নিয়ে আসতে পারে।"
অর্থনীতিবিদদের একাংশের মতে, গণ পরিবহণ ও জ্বালানি নিয়ে কিছু একটা ভাবা উচিত সরকারের। অর্থনীতিবিদের মতে, "পেট্রোল-ডিজেলের জিএসটির আওতায় আসে না, এটা পলিটিক্যাল ইকনমির খেলা, গণ পরিবহণের জন্য কিছু করা প্রয়োজন।" শেষ পর্যন্ত দেশের প্রতিটি স্তরের মানুষ বাজেট-প্রত্যাশার কতটা পূরণ করতে পারে এবারের বাজেট, তার উত্তর মিলবে একদিন পরই।