Union Budget 2023: বুধবার বাজেট (Budget 2023) পেশ করেছেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমন (Nirnala Sitharaman)। বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ ঘোষণা করেছেন অর্থমন্ত্রী (Finance Minister)। এই বাজেট প্রসঙ্গে ইতিমধ্যেই মন্তব্য করেছেন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের ব্যক্তিত্বরা। শিল্প মহলেও সাড়া জাগিয়েছে এবারের বাজেট। দেশের তাবড় শিল্পপতিরা বাজেট ২০২৩ সম্পর্কে বক্তব্য রেখেছেন। একনজরে দেখে নেওয়া যাক বাজেট ২০২৩ নিয়ে কী বলছেন শিল্প জগতের নামজাদারা। 


দ্বিতীয় মোদি সরকারের শেষ পূর্ণাঙ্গ বাজেট


নীলেশ শাহ (ম্যানেজিং ডিরেক্টর, কোটাক মহিন্দ্রা অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি)- নীলেশ শাহের মতে এই বাজেট 'বাহুবলী' বাজেট। একাধিক লক্ষ্য রয়েছে এই বাজেটের। কম ঘাটতি সহ রাজস্ব বিচক্ষণতা অর্জন করা হয়েছে এবং ২০২৬ সালের অর্থবর্ষ পর্যন্ত পথ নির্ধারণ করা হয়েছে। কর কাটছাঁটের বিষয়ে গুরত্ব দেওয়া হয়েছে যার ফলে ভোগের পরিমাণ বাড়বে। বিনিয়োগ ব্যয় বৃদ্ধি করা হয়েছে এই বাজেটে।  সম্পদ নগদীকরণের উপর আরও বেশি নজর দেওয়া যেত এই বাজেটে। তবে তা বাজারের অবস্থার উপর নির্ভর করে অন্য ভাবেও অনুসরণ করা যেতে পারে। মোট কথা, এটি একটি বাহুবলী বাজেট।


ইয়াগনেশ দোশি (Yagnesh Dosshi- Raghnall Insurance Broking and Risk Management Pvt Ltd- এর ডিরেক্টর এবং সহ-প্রতিষ্ঠাতা)- বিমার প্রিমিয়ামের ক্ষেত্রে কর আরোপ সংক্রান্ত যে ঘোষণা বাজেটে করা হয়েছে, তার জেরে আমরা হতাশ হয়েছি। কারণ এটি উচ্চ-মূল্যের সঞ্চয় পণ্যগুলিকে প্রভাবিত করবে যা অনেক গ্রাহকের দ্বারা নির্ভরশীল। এই বাজেট ভারতে সঞ্চয় এবং স্বাস্থ্য বিমা উভয়ের বৃদ্ধিকে নেতিবাচকভাবে প্রভাবিত করবে।


বিনোদ আগরওয়াল (President, SIAM, and MD & CEO, VECV)- ১৩.৭ লক্ষ কোটি টাকার কার্যকর বিধানের সঙ্গে মূলধন ব্যয়ের ৩৩ শতাংশ বৃদ্ধি অর্থনীতিকে চাঙ্গা করবে, যার ফলে অটোমোবাইল সেক্টরে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। অটো ইন্ডাস্ট্রি স্থিতিশীলতা এবং ডিকার্বনাইজেশনের উদ্যোগের সঙ্গে সম্পূর্ণভাবে একত্রিত হয়েছে। সেই সঙ্গে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে হাইড্রোজেন, ইথানল মিশ্রণ, বায়ো-গ্যাস, বৈদ্যুতিক যান এবং ব্যাটারি স্টোরেজের উপর। পুরানো যানবাহন প্রতিস্থাপনের জন্য বিভিন্ন সরকারি দফতরের জন্য অর্থায়নের ঘোষণাও প্রশংসনীয়। বাজেটের আর একটি প্রশংসনীয় বৈশিষ্ট্য হল ব্যক্তিগত আয়করের কার্যকর হার কমিয়ে ব্যক্তিদের হাতে আরও বেশি অর্থ প্রদান করা হয়েছে। এর ফলে ভোগের পরিমাণ বাড়বে যা আরও চাহিদা বাড়াবে। সব মিলিয়ে এটি একটি বৃদ্ধি ভিত্তিক বাজেট যা অটো সেক্টরে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে। 


মুরলী মালায়াপ্পান (শ্রীরাম প্রপার্টি লিমিটেডের সিএমডি)- এটি একটি 'অমৃত কাল' বাজেট। চাকরি সৃষ্টি, কর্মসংস্থান এবং বৃদ্ধির ক্ষেত্রে প্রেরণা দান করবে এই বাজেট। 


মনীশ রাজ সিঙ্ঘানিয়া (FADA প্রেসিডেন্ট)- মোদি সরকারের শেষ পূর্ণ বাজেট সব দিক থেকে জনপ্রিয় হয়েছে। এই বাজেট সামগ্রিক ভাবে অটোমোবাইল সেক্টরে বিক্রি বাড়াতে সাহায্য করবে। যদিও অবকাঠামো ব্যয়ের জন্য ১০ লক্ষ কোটি টাকার মূলধন ব্যয় অবশ্যই বাণিজ্যিক যানবাহন বিক্রয়ে সাহায্য করবে। অন্যদিকে বিভিন্ন রাজ্য সরকারগুলিকে সাহায্য করে এই বাজেট সমস্ত পুরনো সরকারি যানবাহন বাতিল করার লক্ষ্যে সবক্ষেত্রের বিক্রি বৃদ্ধি করবে। এর পাশাপাশি ব্যক্তিগত করের ক্ষেত্রে ছাড় এন্ট্রি লেভেল দু'চাকার যান এবং যাত্রিবাহী যানবাহনের ক্ষেত্রকে উপকৃত করবে। সর্বোচ্চ ট্যাক্স সারচার্জ ৩৭ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২৫ শতাংশে আনার ফলে বিলাসবহুল যানবাহন বিক্রিতে সুবিধা হবে৷ এছাড়াও বৈদ্যুতিন যানবাহনের উপর গুরুত্ব দেওয়া, লিথিয়াম আয়ন ব্যাটারির আমদানি শুল্ক শিথিল করা- ইভি বা ইলেকট্রিক ভেহিকেলের দাম কমাতে সাহায্য করবে। জনসাধারণের জন্য ইলেকট্রিক গাড়ি অ্যাফোর্ডেবল রেঞ্জে চলে আসতে পারে। 


মোতিলাল ওসওয়াল (এমডি এবং সিইও- মোতিলাল ওসওয়াল ফিনানসিয়াল সার্ভিসেস)- এই বাজেট দীর্ঘমেয়াদি অর্থনৈতিক বৃদ্ধির উপর গুরুত্ব দিয়েছে। মধ্য আয়ের গোষ্ঠীর ক্ষেত্রে ভোগের পরিমাণ বাড়ানোর দিকে নজর দেওয়া হয়েছে। ইনফ্রা, হাউজিং, সিমেন্ট, ক্যাপিটাল গুডস, অটো এবং পর্যটনের মতো খাতের ক্ষেত্রে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে এই বাজেট। সামনে নির্বাচন থাকার সত্ত্বেও কেন্দ্রীয় সরকার বাজেটের ক্ষেত্রে আর্থিক বিচক্ষণতা বজায় রাখার চেষ্টা করেছে। 


ক্রিস্টিয়ান দে গুজম্যান (Christian de Guzman, Senior Vice President, Moody's Investors Service)- কেন্দ্রীয় বাজেট ২০২৩-২৪-এ সংকীর্ণ ঘাটতির পূর্বাভাস দীর্ঘমেয়াদী রাজস্ব স্থায়িত্বের প্রতি সরকারের প্রতিশ্রুতিকে জোরদার করে এবং উচ্চ মুদ্রাস্ফীতি এবং একটি চ্যালেঞ্জিং পরিবেশের মধ্যে অর্থনীতিকে সচল রাখতে সাহায্য করবে৷ যদিও ট্যাক্স ব্যবস্থার পরিবর্তনগুলি কিছু কর রাজস্বকে বাদ দেবে। এই বাজেট নামমাত্র জিডিপি বৃদ্ধি এবং কর ব্যবস্থা থেকে হওয়া লাভের মাধ্যমে প্রচুর পরিমাণ রাজ্ব আয়ের পূর্বাভাস দিয়েছে। এছাড়াও এই বাজেট ক্রমবর্ধমান সুদের হারের সঙ্গে সম্পর্কিত ঋণ পরিষেবা খরচ বৃদ্ধি থেকে ঋণের সামর্থ্যের উপর চাপ কমাতে সাহায্য করবে। একইসঙ্গে এই বাজেটে মূলধন ব্যয়ের উপর জোর দেওয়া অব্যাহত থাকবে যা ব্যয়ের মান উন্নত করতে সাহায্য করবে। যদিও ক্রমান্বয়ে আর্থিক একত্রীকরণের প্রবণতা অক্ষত থাকবে এবং সরকারের ঋণের বোঝাকে স্থিতিশীল করতে সাহায্য করবে।


এস দুর্গাপ্রসাদ (ভবন সাইবারটেক গ্রুপ- সহ প্রতিষ্ঠাতা, ডিরেক্টর এবং গ্রুপ সিইও)- প্রযুক্তির ক্ষেত্রে বিনিয়োগ হবে এটা স্পষ্ট। আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্সের জন্য তিনটি সেন্টার অফ এক্সেলেন্স তৈরি হবে। ৫জি অ্যাপের জন্য তৈরি হবে ১০০টি ল্যাব। দেশের প্রথম সারির ইঞ্জিনিয়ারিং প্রতিষ্ঠান এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এই পরিকাঠামো তৈরির কথা ঘোষণা করা হয়েছে বাজেটে। এর ফলে ভারত প্রযুক্তি এবং AI- এর দিক থেকে আগামী দিনে আরও উন্নত হবে সেটা বোঝা যাচ্ছে এই বাজেট থেকে। অন্তত তেমন লক্ষ্যমাত্রার কথাই বলা হয়েছে। রিসার্চ এবং ডেভেলপমেন্টের (R&D) ক্ষেত্রে 'Make AI in India' এবং 'Make AI work for India' বিশ্বের নিরিখে প্রতিপক্ষের বিচারে ভারতের অবস্থান আরও সুদৃঢ় করবে। এছাড়াও ৩০টি স্কিল ইন্ডিয়া ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার তৈরি হবে। যেখানে মূল ভিত্তি থাকবে প্রযুক্তি। এইসব সেন্টারে চাকরির জন্য প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। এর মাধ্যমে ভারত একটি শক্তিশালী ডিজিটাল প্রতিযোগী হিসাবে অবস্থান করবে। ব্যবসা করার ক্ষেত্রে বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা, মূলধন ব্যয়ে ৩৩ শতাংশ বৃদ্ধি, রাজ্য সরকারের ক্ষেত্রে সুদ-মুক্ত ঋণের ব্যবস্থা কাজের সুযোগ প্রদান করবে এবং অর্থনৈতিক বৃদ্ধিতে সাহায্য করবে।


ললিত কুমার (Partner, JSA Law Firm)- ২০২৩-২৪ সালের বাজেটে সাতটি অগ্রাধিকার প্রাপ্ত খাতের মধ্যে আর্থিক খাত ছিল অন্যতম। বছরের পর বছর সরকার আর্থিক খাতে গতি দিয়েছে। আর সেই অঙ্গীকার অব্যাহত রেখে এবারের বাজেটেও বড় বড় ঘোষণা করা হয়েছে। আর্থিক অন্তর্ভুক্তি আবার এই বছরের বাজেটের অন্যতম ভিত্তি। এবারের বাজেট বর্তমান মুদ্রাস্ফীতি পরিস্থিতির জন্য একটি বড় স্বস্তি। public consultation এই বাজেটের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। ব্যবসার ক্ষেত্রে এই বিষয়টি সহায়তা করবে। এই বাজেটের পর ডেরিভেটিভ ইন্সট্রুমেন্ট বৈধ হয়ে যাবে। সেবি- র হাতে থাকবে আরও বেশি ক্ষমতা। 


আরও পড়ুন- বাজেটে নির্মলার বড় ঘোষণা, গুরুত্ব AI এবং ৫জি- র ক্ষেত্রে, কী কী তৈরি হবে?