নয়াদিল্লি: সম্প্রতি রিজার্ভ ব্যাঙ্কের একটি তথ্য নিয়ে হইচই শুরু হয়েছে ভারতের রাজনৈতিক মহলে। সেই তথ্যে দেখানো হয়েছিল, ভারতে জাল নোটের সংখ্যা ফের বেড়েছে। ২০১৯-২০ অর্থবর্ষের তুলনায় ২০২১-২২ অর্থবর্ষে লাফিয়ে বেড়েছে বাজেয়াপ্ত ৫০০ টাকার জাল নোটের সংখ্যা। ওই সময়ের মধ্যেই বৃদ্ধি দেখা গিয়েছে উদ্ধার হওয়া ২০০০টাকার জাল নোটেও। তা নিয়ে সরগরম দেশ। নোটবন্দি বা Demonetisation-এর পর কীভাবে জাল নোট বাড়ল তা নিয়ে নানা আলোচনা-তর্কবিতর্ক শুরু হয়েছে।
কিন্তু দেশে জাল নোট উদ্ধারের তুলমূল্য পরিসংখ্যান ঠিক কী? নোটবন্দির কারণে কি আদৌ জাল নোট কমেছে? নাকি ফের মাথাচাড়া দিচ্ছে? সম্প্রতি পশ্চিমবঙ্গে বেশ কিছু জায়গায় বিপুল সংখ্যক জাল নোট উদ্ধার হয়েছে, জাল নোট তৈরির চক্রের পর্দাফাঁস হয়েছে। তাহলে পরিস্থিতি ঠিক কোথায় দাঁড়িয়ে? তা বুঝতে গেলে নজর রাখতে হবে আরবিআই-এর প্রকাশিত দীর্ঘ একটি পরিসংখ্যানে। নোটবন্দির আগে এবং পরে সারা দেশে জাল নোটের হিসেব ঠিক কী?
২০১১ থেকে ২০১৬ সাল। এই পাঁচ বছরের সঙ্গে যদি ২০১৭ থেকে ২০২২ সাল এই পাঁচ বছরের তুলনা করা হয়। অর্থাৎ নোটবন্দি আগের পাঁচ বছরের সঙ্গে পরে পাঁচ বছরের। তাহলে তথ্য বলছে, ২০১৭ থেকে ২০২২ সালে জাল নোট ধরা পড়ার পরিমাণ আগের তুলনায় অন্তত ৪২ শতাংশ কম। যে অর্থবর্ষে নোটবন্দি হয়, অর্থাৎ ২০১৬-১৭, সেই সময় থেকে ২০২১-২২ অর্থবর্ষের হিসেব করলে দেখা যাচ্ছে, ২০১৬-১৭ অর্থবর্ষের তুলনায় ২০২১-২২ অর্থবর্ষে জাল নোট ধরা পড়ার হার কমেছে ৭০ শতাংশ।
নোটবন্দি কবে:
২০১৬ সালের ৮ নভেম্বর সন্ধের পরে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি জাতির উদ্দেশে ভাষণে নোটবন্দির কথা ঘোষণা করেন। বলা হয়েছিল মূলত জাল নোটের কারবার কমাতে এবং আরও কিছু কারণেই নোটবন্দি করা হচ্ছে। সেইসময় আচমকা পুরনো ৫০০ ও ১০০০ টাকার নোট বাতিল করে নতুন পাঁচশো ও দুই হাজার টাকার নোট বের করা হয়। নোট বদলাতে চরম ভোগান্তি হয়েছিল সাধারণ মানুষের। অনেকদিন ধরে দীর্ঘ লাইন দেখা গিয়েছিল ব্যাঙ্কের সামনে।
নোটবন্দির আগে:
২০১১-১২ অর্থবর্ষ থেকে ২০১৬-১৭ অর্থবর্ষের তথ্যের দিকে যদি চোখ রাখা যায়, তাহলে দেখা যাবে মোটামুটি ধারাবাহিক ভাবে জাল নোট ধরার পড়ার পরিমাণ বেড়েছে। ২০১২-১৩ অর্থবর্ষে যেখানে ব্যাঙ্কিং ব্যবস্থায় ৪ লক্ষ ৯৮ হাজার ২৫২টি জাল নোট ধরা পড়েছিল। সেখানে ২০১৬-১৭ সালে সেই সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ৭ লক্ষ ৬২ হাজার ৭২টি।
নোটবন্দির পরে:
আবার উল্টোদিকে নোটবন্দির পরে ২০১৭-১৮ অর্থবর্ষ থেকে ২০২১-২২ অর্থবর্ষের তথ্য বলছে লাগাতারভাবে জাল নোট ধরা পড়ার সংখ্যা কমেছে। ২০১৭-১৮ সালে দেশে ব্যাঙ্কিং ব্যবস্থায় ধরা পড়া জালনোটের সংখ্যা ছিল ৫ লক্ষ ২২ হাজার ৭৮৩। সেটাই ২০২১-২২ সালে কমে দাঁড়িয়েছে ২ লক্ষ ৩০ হাজার ৯৭১।
উল্টো ছবি পাঁচশোর নোটে:
সামগ্রিক ভাবে জাল নোট ধরা পড়ার সংখ্যা কমলেও, পাঁচশোর নোটে একেবারেই উল্টো ছবি। নোটবন্দির বেশ কয়েকবছর পর ২০১৯-২০ অর্থবর্ষ থেকে ২০২১-২২ অর্থবর্ষে লাফিয়ে বেড়েছে জাল পাঁচশোর নোটের সংখ্যা। ২০২০-২১ অর্থবর্ষের তুলনায় ২০২১-২২ অর্থবর্ষে সেই বৃদ্ধি ভীষণ উদ্বেগের, ১০২ শতাংশ। ২০২০-২১ অর্থবর্ষে যেখানে ৩৯,৪৫৩টি জাল পাঁচশোর নোট ধরা গিয়েছিল, সেখানে ২০২১-২২ অর্থবর্ষে ধরা পড়েছে ৭৯,৬৬৯টি।
এই তথ্যের ভিত্তি করেই শুরু হয়েছে তরজা। পাঁচশো টাকার জাল নোটের বাড়াবাড়ন্ত বিরোধী শিবিরের নিশানায় পড়েছে সরকারপক্ষ।
জাল নোট রুখতে কড়া আইন:
জালনোটের কারবার রুখতে ভারতে কড়া আইন রয়েছে। আইনে সাত বছর থেকে যাবজ্জীবন কারাদন্ডের বিধান রয়েছে। পাশাপাশি রয়েছে জরিমানাও।
এটিএমে জাল নোট!
ব্যাঙ্কের তরফ থেকে খুব সতর্কতার সঙ্গেই এটিএমে নোট ভরা হয়। তবুও কোনও কোনও সময় এটিএম থেকেও জালনোট পাওয়ার অভিযোগ ওঠে। সেক্ষেত্রে গ্রাহক কী করবেন?
জেনে রাখুন এই উপায়:
এটিএম থেকে নোট পাওয়ার পর জাল মনে হলে এটিএমের সিসিটিভির ক্যামেরার সামনে তুলে ধরুন। প্রয়োজনে সিসিটিভি ক্যামেরার একদম সামনে নিয়ে নোটের দুই-দিকই ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে দেখান। এরপর এটিএমে নিরাপত্তারক্ষী থাকলে তাঁকে ডেকে বিষয়টি জানান। এর ফলে ওই মেশিন থেকেই যে জাল নোট বেরিয়েছে তার প্রমাণ ও সাক্ষী দুটোই থাকল, ব্যাঙ্কে দেওয়ার জন্য। এটিএমের রিসিপ্ট কপি বা মেসেজ সংরক্ষণ করে রাখুন। এরপর ওই নোট নিয়ে ব্য়াঙ্কে যান। সেখানে নির্দিষ্ট কিছু পদক্ষেপের পর জাল নোট ফেরত নিয়ে আসল নোট দেওয়া হবে। ব্যাঙ্কে এটিএমের রিসিপ্ট কপি বা মেসেজ দেখালে কাজে সুবিধা হবে। আরবিআইয়ের নিয়ম অনুযায়ী, এটিএম থেকে জাল নোট বেরলে ওই ব্যাঙ্ক-কে যত দ্রুত সম্ভব গ্রাহককে আসল নোট দিতে হবে।
আরও পড়ুন: অনলাইন নাকি অফলাইন, কীভাবে হবে পরীক্ষা? জানিয়ে দিল কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়