সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়
Hyundai i20 N Line Vs Volkswagen Polo GT TSI: জ্বালানির দাম ১১০ টাকা ছোঁয়ার উপক্রম হলেও পারফরম্যান্স ভিত্তিক গাড়ির দিকে ঝোঁক বাড়ছে দেশবাসীর। এখন আর কেবল মাইলেজের দিকে তাকিয়ে গাড়ি কেনেন না ক্রেতারা। দেশের গাড়ি বিক্রির পরিসংখ্যান বলছে, ভারতে বেশি বিক্রিত গাড়িগুলি খুব একটা সস্তা নয়। এখন ফিচার, লাক্সারি ও পারফরম্যান্স দেখেই গাড়ি কিনছেন বেশিরভাগ ক্রেতা। আজকের দিনে গাড়ি কেবল যাতায়াতের মাধ্যম নয়। দীপাবলির সময় গাড়ি কেনার ক্ষেত্রে থাকছে ব্যাপক ছাড়।
Hyundai i20 N Line Vs Volkswagen Polo GT TSI: দুটি গাড়িতেই দিচ্ছে সমাজ মাইলেজ। কোনও কমপ্যাক্ট এসইউভির মতোই মাইলেজ দেয় এই দুই পারফরম্যান্স ভিত্তিক হ্যাচব্যাক। তাই দীপাবলির সময়ে এই গাড়ি কিনলে টাকা জলে যাবে না আপনার। যারা কেবল প্রিমিয়াম হ্যাচব্যাক গাড়ি কিনতে চান চান, তাদের জন্য এই গাড়ি নয়। প্রিমিয়াম গাড়ির সঙ্গে যারা পারফরম্যান্স ভিত্তিক গাড়ি চান Hyundai i20 N Line ও Volkswagen Polo GT TSI তাদের কাছে সেরা পছন্দের গাড়ি হতে পারে। পারফরম্যান্স বলতে এখানে ড্রাইভিংয়ের অভিজ্ঞতার কথা বলতে চাইছি আমরা। যা বাকি গাড়ির থেকে এই গাড়ি দু'টিকে আলাদা করে। ভারতের গাড়ি বাজারের দিকে তাকলে দেখা যাবে, কমপ্যাক্ট এসইউভি এখন ট্রেন্ডিং। তাসত্ত্বেও এই দুই হ্যাচব্যাকের দিকে ঝুঁকছে অনেকেই।
Polo GT TSI: টপ-অ্যান্ড প্রিমিয়াম স্পোর্টি হ্যাচব্যাকের মধ্যে প্রথমেই নাম আসে পোলোর। সুন্দর রাস্তাতে চালিয়ে জেনে নিই এর পারফরম্যান্স। আমি প্রথমে পোলোতে উঠি। এটি আমার কাছে একটি পরিচিত গাড়ি। এটি সেই GT TSI নয় যাতে আমি অভ্যস্ত। আগের GT TSI-এর একটি 1.2 লিটার TSI ইঞ্জিন ছিল। এখন এতে রয়েছে 1.0 TSI প্লাস ইঞ্জিন। যাতে 6-স্পিড টর্ক কনভার্টার গিয়ারবক্স রয়েছে (এই গাড়ির একটি ম্যানুয়াল অপশনও রয়েছে)৷
গাড়িতে বসেই আপনি অনুভব করবেন, গাড়িটি কতটা হার্ড। হ্যাচব্যাক হিসাবে আসনে অনেক তলায় বসতে হবে আপনাকে। সঙ্গে রয়েছে স্টিয়ারিং হুইলে একাধিক অ্যাডজাস্টমেন্ট অপশন। যা কোনও পারফরম্যান্স কারের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। স্টিয়ারিং হার্ড হলেও দারুণ রেসপন্স দেয়। যা গাড়িকে দ্রুত এগিয়ে নিয়ে যেতে সাহায্য করে। ইঞ্জিনে রয়েছে পর্যাপ্ত পাওয়ার। যা 110bhp ছাড়াও 175 নিউটন মিটার টর্ক জেনারেট করে। যার ফলে পাঞ্চি ইঞ্জিনের সব গুণ দেখা যায় এই মোটরে। ল্যাগ দেখলেই একবার পুশ দিলেই দুরন্ত গতিতে ছুটবে গাড়ি।
Polo GT TSI-এর কেবিন: চালকের চয়েজের গাড়ি বলতে গেলে পোলোর নাম আসবে। নতুন অটোমেটিক গিয়ারবক্সও আপনাকে দারুণ পাঞ্চ দেবে। যা সহজ করে দেবে আপনার কঠিন যাত্রাপথ। আগের DSG automatic অটোমেটিকের থেকে পারফরম্যান্সে অনেকটাই এগিয়ে থাকবে এই গিয়ারবক্স। গাড়ির কেবিন পুরোনো হলেও গুণমানের দিক থেকে যথেষ্ট ভাল। গাড়িতে হালফিলের ফিচার নেই বললেই চলে। যেমন রেয়ার ভিউ ক্যামেরা পাবেন না এই গাড়িতে। যদিও গাড়ির গতি ও রাস্তা কামড়ে চলার দক্ষতা মুগ্ধ করবে আপনাকে।
i20 N Line: Polo GT TSI-এর সঙ্গে লড়াইয়ে কোথায় দাঁড়িয়ে i20 N Line ? প্রথমেই বলে রাখি, আগেই এই গাড়ি চালিয়েছি আমি। যদি আপনারা মনে করেন, কেবল কিছু রঙের তফাত ছাড়া পুরোনো i20-কেই i20 N Line বলে চালানো হচ্ছে, তাহলে ভুল ভাবছেন। ভিতরের 120bhp ও 172Nm turbo পাওয়ারের ইঞ্জিন এক থাকলেও বদলে গিয়েছে অনেক কিছু। স্টিয়ারিং হুইলে পরিবর্তন নিয়ে এসেছে হুন্ডাই। একই সঙ্গে আগের থেকে সাসপেনশনকে আরও জোরদার করা হয়েছে। এবার নতুন মডেলে সব চাকায় থাকছে ডিস্ক ব্রেকস। বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে একজস্টের আওয়াজ। যার ফলে নতুন মডেলকে 'হট হ্যাচ' বললেও ভুল করবেন না ক্রেতারা। জানলা খোলা থাকলে সহজেই একজস্টের সাউন্ড শুনতে পারবেন আপনি। তার মানে এই নয়, গাড়ির একজস্ট খুবই আওয়াজ করে। তবে স্পোর্টি কারের মতো না হলেও শোনা যায় গাড়ির একজস্ট সাউন্ড।
i20 N Line-এর স্টিয়ারিং হুইল: আগের মডেলের থেকে হার্ড করা হয়েছে i20 N Line-এর স্টিয়ারিং হুইল। i20 মডেলে হালকা স্টিয়ারিং দিয়েছিল হুন্ডাই। তবে এবার দ্রুত গতির সঙ্গে চালকের আত্মবিশ্বাস বজায় রাখার জন্য এই স্টিয়ারিং নিয়ে এসেছে কোম্পানি। চারটে চাকাতেই ডিস্ক ব্রেক দেওয়ার ফলে বদলে গিয়েছে ব্রেকের পারফর্মম্যান্স। এখন অনেক সহজেই কর্নারে গাড়ি ঘোরাতে আত্মবিশাস পাবেন চালক। DCT gearbox থাকার জন্য গাড়িতে পাওয়ারের কোনও সমস্যা হবে না। নতুন করে S mode-দেওয়া হয়েছে গাড়িতে। এই মোডে বেড়ে গিয়েছে গাড়ির পিক পারফরম্যান্স। আগের থেকে অনেক কমে গিয়েছে বডি রোল। এখন 'ফান কার' বলা
যেতেই পারে i20 N Line-কে।
Polo GT TSI-এর সঙ্গে তুলনায় কিছু জায়গায় এগিয়ে গিয়েছে i20 N Line। একজস্টের বেশি আওয়াজ ছাড়াও গাড়ি চালানো অনেক সহজ নতুন মডেলে। পারফরম্যান্সের পাশাপাশি সানরুফ রয়েছে i20 N Line-এ। সঙ্গে পাবেন স্টিয়ারিং হুইলে নতুন ডিজাইন। যা গাড়িকে এক টা স্পোর্টি লুক দেয়। সেখানে Polo GT TSI-এর ইন্টিরিয়রে স্পোর্টি লুক দেওয়া হয়েছে। যা গাড়িকে অন্যদের থেকে আলদা করে তোলে।
দুই গাড়ির মাইলেজ ও দাম: রোজকার ব্যবহারের গাড়ি হিসাবেই এই দুই গাড়িকে দেখা যেতে পারে। দু-জনেই কম-বেশি প্রতি লিটারে ১০ কিলোমিটার মাইলেজ দেবে। যা পারফরম্যান্স কার হিসাবে আপনার মুখে হাসি ফোটাবে। দামের ক্ষেত্রে Polo GT TSI-এর অটোমেটিকের মূল্য রাখা হয়েছে ১০ লক্ষ টাকা। সেখানে i20 N Line-এর DCT automatic গিয়ারবক্স ইঞ্জিনের দাম পড়বে ১১.৯লক্ষ টাকা। দুই গাড়ির মধ্যে পোলো পুরোপুরি 'ড্রাইভার কার'। এর পাশাপাশি i20 N Line-কে 'ফান টু ড্রাইভ' কার বলা যেতে পারে। পোলোর তুলনায় এর দামি বেশি হলেও তা ন্যায়সঙ্গত। সবথেকে বড় বিষয় SUV-র মতো পারফরম্যান্স দিলেও একই দামে স্পোর্ট ইউটিলিটি ভেহিক্যালের দামেই পাওয়া যাচ্ছে এই দুই হ্যাচব্যাক।