নয়াদিল্লি ও কলকাতা: দু’দিন আগে ৪ রাজ্যে বিপুল জয় পেয়েছেন নরেন্দ্র মোদি।ধরাশায়ী হয়েছে কংগ্রেস। এবার মোদির নজরে গুজরাতের ভোট। কথা শুরু হয়ে গেছে লোকসভা ভোটেরও। রাজনীতিবিদরা যে যার মতো তাল ঠুকতে ব্যস্ত।এরই মধ্যে বড়সড় ধাক্কা খেল সাধারণ মানুষ।ফের বড়সড় কোপ পড়ল সঞ্চয়ে। জিনিসপত্রের দাম একদিকে যখন হু হু করে বাড়ছে, তখন Employees privedent fund বা  কর্মচারী প্রভিডেন্ট ফান্ডে (PF)-এ সুদের হার রেকর্ড কমানো হল। সাড়ে ৮ শতাংশ থেকে কমে EPF-এ সুদের হার হতে চলেছে ৮.১ শতাংশ। সংবাদ সংস্থা PTI সূত্রে এমনই খবর। 
EPF-এ সুদের এই হার ৪৪ বছরে সর্বনিম্ন। অর্থাৎ গত ৪ দশকে PF-এর সুদের হার কখনও এত কমানো হয়নি। ১৯৭৭-৭৮ সালের পর এই প্রথম এমপ্লয়িজ প্রভিডেন্ট ফান্ডে সুদের হার এতটা কমে গেল। এরফলে প্রায় ৬ কোটিরও বেশি চাকুরিজীবীদের মুখ ভার হতে চলেছে। পিএফে সুদের হার কমানো নিয়ে মোদি সরকারকে তীব্র  আক্রমণ করেছে পাঁচ রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনে বিপর্যস্ত কংগ্রেস।  তাদের কটাক্ষ, সদ্য়সমাপ্ত নির্বাচনে বিপুল জয়ের রিটার্ন গিফ্ট দিল বিজেপি। কংগ্রেস মুখপাত্র রণদীপ সুরজেওয়ালা ট্যুইট করে বলেছেন, দেশের ৮৪ শতাংশ মানুষের আয় কমে গিয়েছে। নির্বাচনী জয়ের ভিত্তিতে এভাবে কোটি কোটি কর্মীর সঞ্চয়ে এভাবে আঘাত হানা কি সঠিক? ইপিএফও-র সুদের হার গত ১০ বছরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি কমানো হয়েছে। এটা কি বিজেপির জয়ের পাল্টা উপহার। 


ইপিএফে সুদের হারে হ্রাস সম্পর্কে প্রতিক্রিয়ায় অর্থনীতিবিদ অভিরূপ সরকার বলেছেন,  এই মুহূর্তে আমাদের দেশে মূল্যবৃদ্ধি ঘটছে।  এই মূল্যবৃদ্ধির জন্য রিজার্ভ ব্যাঙ্কের সুদের হার বাড়তে পারে। মূল্যবৃদ্ধি বাড়লে সুদের হার সাধারণত সাধারণত বাড়ে। এখানে দাঁড়িয়ে EPF’র সুদ কমানো ঠিক নয়। 
শনিবার, বৈঠকে বসেছিল সেন্ট্রাল বোর্ড অফ ট্রাস্টি বা CBT। তারাই কেন্দ্রের কাছে এই প্রস্তাব দিয়েছে।EPF’র সুদ কত হবে, তা ঠিক করে CBT। এই কমিটিতে থাকেন কেন্দ্রীয় সরকারের প্রতিনিধি, কর্মচারী সংগঠন ও নিয়োগকারীদের প্রতিনিধি। এই কমিটির মাথায় থাকেন কেন্দ্রীয় শ্রমমন্ত্রী।কমিটি তার প্রস্তাব এরপর, তা কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রককের কাছে পাঠানো হয়। অর্থমন্ত্রকের অনুমোদনের পর জারি হয় বিজ্ঞপ্তি।


অর্থনীতিবিদ শৈবাল কর বলেছেন, আমি এটাকে মনে করছি, ভোট প্রতিক্রিয়া...অর্থাৎ ম্যান্ডেট যদি মনে হয়, সরকারকে যা খুশি করার লাইসেন্স দিচ্ছে, তাহলে এরকম যা খুশি তাই করা যায়। এটাতেও হাত দেওয়া মানে মানুষ বিপ্রতীপ অবস্থার মধ্যে পড়বেন।


দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৫২ থেকে ১৯৬৬ পর্যন্ত প্রভিডেন্ট ফান্ডে সুদের হার ছিল ৩ থেকে ৪.৭৫ শতাংশ।১৯৮৪ সালে প্রথম বার সুদের হার ৯ শতাংশ ছাড়িয়ে যায়। ৮৪ থেকে ৮৯ সালের মধ্যে EPF-এর সুদের হার ছিল ৯.১৫ শতাংশ থেকে ১১.৮ শতাংশ।১৯৮৯ থেকে ৯৯-এই দীর্ঘ সময়টা ছিল কর্মচারীদের জন্য আচ্ছে দিন। EPF-এর সুদের হার ছিল ১২ শতাংশ।২০০১ থেকে ২০০৫ অবধি সুদের হার ছিল ৯.৫ শতাংশ।২০০৬ থেকে ১০ অবধি ৮.৫০ থেকে ৯.৫০ শতাংশ।২০১৩-১৪ সালে EPF’র সুদের হার ছিল ৮.৭৫ শতাংশমোদি সরকার ক্ষমতায় আসার পর, ২০১৫-১৬ অর্থবর্ষে তা হয় ৮.৮ শতাংশ।এবার সেই সুদের হারই কমিয়ে করা হচ্ছে ৮.১ শতাংশ।