Airtel-Google Deal: বর্তমানে ভারতের ডিজিটাল ইকোসিস্টেম একটি ঐতিহাসিক পর্ব অতিক্রম করছে। এই অভূতপূর্ব সুযোগের সদ্ব্যবহার করতে চাইছে বিশ্বের তাবড় কোম্পানিগুলি। এই সুযোগ দেখে সেই তালিকায় নাম লিখিয়েছে গ্লোবাল টেক কোম্পানি গুগল। দেশের শীর্ষস্থানীয় টেলিকম অপারেটর ভারতী এয়ারটেলের সঙ্গে গাঁটছড়া বেঁধেছে কোম্পানি। এই স্ট্র্যাটেজিক পার্টনারশিপ বা কৌশলগত অংশীদারিত্বের অধীনে গুগল ভারতী এয়ারটেলে এক বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করবে।


এয়ারটেলে গুগলের বিনিয়োগ


ভারতে সাশ্রয়ী মূল্যের স্মার্টফোন ও 5G পরিষেবা দেওয়ার জন্যই এয়ারটেলের সঙ্গে গাঁটছড়া বেঁধেছে গুগল। এই গাঁটছড়ার অধীনে ভারতী এয়ারটেলে ১ বিলিয়ন ডলার বা প্রায় ৭৫০০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করবে Google। ভারতের ডিজিটালাইজেশন ফান্ডের অংশ হিসাবে এই অঙ্ক বিনিয়োগ করবে গুগল। ভারতী এয়ারটেলের ১.২৮ শতাংশ শেয়ার কিনবে Google,যা প্রায় ৭০০ মিলিয়ন ডলার (৫,২২৪.৪ কোটি টাকা)। ইতিমধ্যেই চুক্তির বিষয়ে পরিষ্কার করে দিয়েছে ভারতী এয়ারটেল। কোম্পানি জানিয়ে দিয়েছে, গুগল তাদের কোম্পানির শেয়ার ৭৩৪ টাকা দরে কিনবে।


ডিজিটাল ইন্ডিয়ার জন্য গুরুত্বপূর্ণ জোট
গুগল পাঁচ বছরের চুক্তির অধীনে ৩০০ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করবে। বর্তমানে ভারতের ১.৩ বিলিয়ন মানুষের মধ্যে প্রায় ৭৫০ মিলিয়ন লোক মোবাইল ফোনের মাধ্যমে ইন্টারনেট অ্যাক্সেস করে।কিন্তু এখনও প্রায় ৩৫০ মিলিয়ন ফিচার ফোন বা বেসিক ফোন ব্যবহারকারী রয়েছেন যারা তাদের দামের কারণে স্মার্টফোন কিনতে পারেননি। এই চুক্তির মাধ্যমে Airtel ৩৫০ মিলিয়ন মোবাইল ফোন গ্রাহকদের সাশ্রয়ী মূল্যের স্মার্টফোন সরবরাহ করবে। এর মাধ্যমে ফিচার ফোন ব্যবহারকারীরা স্মার্টফোনের সঙ্গে সংযোগ করে ইন্টারনেট সার্ফিং সহ অন্যান্য ডিজিটাল পরিষেবাগুলি পাবে।


উভয় কোম্পানিই বিভিন্ন দামের সাশ্রয়ী স্মার্টফোন সরবরাহের জন্য মোবাইল নির্মাতাদের সঙ্গে গাঁটছড়া বাঁধবে। 5G-এর জন্য সম্ভাব্য একটি ভারত-কেন্দ্রিক নেটওয়ার্ক ডোমেন তৈরি করতে Airtel-এর সঙ্গে সহযোগিতা করবে Google। এছাড়াও ভারতে ডিজিটাল প্রযুক্তি গ্রহণের প্রক্রিয়াকে গতি দিতে একটি ক্লাউড ইকোসিস্টেম তৈরির লক্ষ্যমাত্রা নিয়েছে দুই কোম্পানি। যেখানে বিশেষত ছোট ও মাঝারি উদ্যোগগুলির সঙ্গে এই কাজ করবে Airtel-Google।


ভারতী এয়ারটেলের সঙ্গে গুগলের এই চুক্তি নিয়ে কোম্পানির প্রেসিডেন্ট সুনীল ভারতী মিত্তল বলেন, ''এয়ারটেল ও গুগল উদ্ভাবনী পণ্যগুলির মাধ্যমে ভারতের ডিজিটাল লভ্যাংশ বাড়ানোর জন্য একটি অভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে কাজ করবে। ভবিষ্যতের জন্য নেটওয়ার্ক, ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম, চমৎকার বিতরণ নেটওয়ার্ক ও পেমেন্ট ইকোসিস্টেম-সহ আমরা ভারতের ডিজিটাল ইকোসিস্টেমকে আরও প্রসারিত করতে Google-এর সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করার জন্য মুখিয়ে রয়েছি।''


এ প্রসঙ্গে Google ও Alphabet-এর সিইও সুন্দর পিচাই বলেছেন, '' দুটি কোম্পানি কানেক্টিভিটি বাড়াতে ও আরও ভারতীয়দের কাছে ইন্টারনেট পৌঁছে দিতে নিজেদের ভাবনা ভাগ নিতে পেরে গর্বিত৷ এয়ারটেলে, গুগলের-এর বাণিজ্যিক ও ইক্যুইটি বিনিয়োগের মূল্য লক্ষ্য, প্রাথমিকভাবে স্মার্টফোনের অ্যাক্সেস বাড়ানো, নতুন ব্যবসায়িক মডেল তৈরি করা, সংযোগ বৃদ্ধি করা ছাড়াও কোম্পানিগুলিকে ডিজিটালে রূপান্তরিত করতে সাহায্য করা।''


গুগলের সার্চ ইঞ্জিনের জন্য আরও বেশি ইন্টারনেট ব্যবহারকারী প্রয়োজন। Google দেশের ১৩০ কোটি জনসংখ্যার মধ্যে এই অপার সম্ভাবনা দেখতে পেয়েছে। কোম্পানি চায়, দেশের আরও বেশি সংখ্যক মানুষ স্মার্টফোন ব্যবহার করুক। যা ডেটা খরচের পাশপাশি কোম্পানিগুলির আয়ও বৃদ্ধি করবে। Google-এর সঙ্গে অংশীদারিত্ব থেকে Bharti Airtel যে অর্থ পাবে, তা 5G স্পেকট্রামের বিডিংয়ের পাশাপাশি 5G নেটওয়ার্কের রোলআউটেও সাহায্য করবে৷


5G আনতে চলেছে Airtel


দেশে 5G পরিষেবা চালু করার জন্য নিজেকে পুরোপুরি প্রস্তুত করেছে ভারতী এয়ারটেল৷ এই নিয়ে দেশের অনেক জায়গায় লাইভ ডেমোনস্ট্রেশন হচ্ছে। শীঘ্রই এই পরিষেবা বাণিজ্যিকভাবে চালু হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। 5G প্রযুক্তি পরীক্ষার সময় দেখা গিয়েছে, মাত্র ৩০ সেকেন্ডে একটি ১ জিবি ফাইল ডাউনলোড করা সম্ভব হচ্ছে। সম্প্রতি নোকিয়ার সঙ্গে এয়ারটেল কলকাতা শহরের বাইরে ৭০০ MHz স্পেকট্রাম ব্যান্ডে প্রথম 5G ট্রায়াল সফলভাবে সম্পন্ন করেছে। এটি ছিল ভারতের গ্রামীণ এলাকায় প্রথম 5G ট্রায়াল। ভারতী এয়ারটেল দেশের ব্যবসায়িক জগতে একটি নতুন মাত্রা দিতে চাইছে। যেখানে আন্তর্জাতিক প্রযুক্তি ও উত্পাদনকারী সংস্থাগুলির সহগিতায় ব্যবসায়িক জগতে 5G সমাধান দেওয়ার বড় উদ্যোগ নিচ্ছে কোম্পানি৷ এছাড়াও এয়ারটেল ভারতকে হাইপার কানেকটেড বিশ্বের শ্রেণিতে আনতে Intel, Qualcomm, CISCO, Accenture, Ericsson-এর মতো কোম্পানিগুলির সঙ্গে কাজ করছে।


5G-এর আসার সঙ্গে সঙ্গে মোবাইল টেলিফোনের জগত বদলে যাবে। 5G আসার পরে ব্যবসাগুলি নিজে থেকেই চলবে, অটোমেশন বাড়বে। এখন পর্যন্ত যে জিনিসগুলি বড় শহরগুলিতে সীমাবদ্ধ, তা গ্রামে পৌঁছে যাবে, যার মধ্যে রয়েছে ই-মেডিসিন। এর পাশাপাশি শিক্ষাখাত ও কৃষি খাতও ব্যাপকভাবে লাভবান হবে এই প্রযুক্তি থেকে। 5G পরিষেবা চালু করা ডিজিটাল বিপ্লবে একটি নতুন মাত্রা জোগাবে। 5G প্রযুক্তি স্বাস্থ্যসেবা, ভার্চুয়াল রিয়েলিটি, ক্লাউড গেমিংয়ের জন্য নতুন পথ খুলে দেবে।